দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়

মো. আব্দুল ওহাব

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

দোয়া ইবাদতের মূল।মানুষের ভাগ্য তার প্রচেষ্টা ও দোয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি : ২১৩৯)।

দুনিয়ার কোনো মানুষের কাছে যদি আমরা কিছু চাই, তখন সে রাগ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের ওপর এত বেশি দয়ালু যে, তার কাছে কিছু চাইলে তিনি খুশি হন। এমনকি না চাইলে তিনি রাগ করেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।’ (তিরমিজি : ৩২৯৫)।

এছাড়াও স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই তার কাছে চাওয়ার জন্য এবং যা চাবো তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’ (সুরা মুমিন : ৬০)।

তিনি অন্যত্র বলেন, ‘হে রাসুল, যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি’ (সুরা বাকারা : ১৮৬)।

দোয়া করা বড় উপকারী ইবাদত। দোয়া মোমেনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের কিছু বিশেষ সময় আছে। যেসব সময়ে দোয়া করলে দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। দোয়া কবুলের উত্তম সময়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো :

১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশ : এ সময় দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে কবুল করা হয়। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো, আমাকে ডাকো; আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, আমার কাছে চাও; আমি তোমাকে দান করব। কে আছো? আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী; আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ ( মুসলিম : ১২৬৩)।

অন্য এক হাদিসে এসেছে, সাহাবি হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত (সা.) ইরশাদ করেন, ‘শেষ রাতের যে কোনো সময় কোনো মুসলিমের এমনটা হয় না যে, সে পৃথিবী বা পরকালের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইল আর তাকে তা দেওয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে’। (মুসলিম : ১২৫৯)।

২. জুমআর দিন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মোমেন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পূরণ করবেন এবং তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বোখারি)। জুমআর দিনে দোয়া কবুলের এ সময়টি কখন? সুনানে আবু দাউদ শরিফের বর্ণনায় রয়েছে, ‘আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত।’ আবার সহি মুসলিম শরিফের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময়, ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।’

৩. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (আবু দাউদ)।

৪. সেজদার মাঝে : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়,তা হলো সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও।’ (মুসলিম : ৭৪৪)।

৫. ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। ন্যায়পরায়ণ শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)।

৬. কদরের রাত : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (বোখারি)।

৭. হজে আরাফার দিন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফার দিনের দোয়া।’ (তিরমিজি)।

৮. বৃষ্টির হওয়ার সময় : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ ([আবু দাউদ : ২১৭৮])।

৯. ফরজ নামাজের পর : সাহাবি হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কোনো সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে’ [তিরমিজি : ৩৪২১]। এছাড়া নির্যাতিত অবস্থায়, রোগে আক্রান্ত অবস্থায়, বিপদাপদের সময়, দূরবর্তী সফরের সময়, সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া খুব বেশি কবুল হয়। সুতরাং আমাদের সবার উচিত উল্লিখিত সময়সহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও আল্লাহকে স্মরণ করা। দোয়া ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।