ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজান মাসে চারটি আমলের প্রতি যত্নশীল হই

মুফতি আশরাফ জিয়া
রমজান মাসে চারটি আমলের প্রতি যত্নশীল হই

রমজান মাস মোমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার। এ মাসে আল্লাহতায়ালা মোমেনের প্রতিটি ইবাদতের বিনিময় বহগুণ বাড়িয়ে দেন। নফল ইবাদতে ফরজের নেকি দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ ইবাদত আদায় করল।’ (সহি ইবনে খুজাইমা : ১৮৮৭)। একজন বুদ্ধিমান মোমেন কখনোই এই মোবারক মাসের মহামূল্যবান সময়কে অযথা নষ্ট করবে না। আমরা দৈনন্দিন বিভিন্ন আমলের পাশাপাশি রমজান মাসে ৪টা আমল বেশি বেশি করতে পারি।

(১) রোজা রাখা এবং যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা : রোজা কবুল হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হলো, রোজা অবস্থায় গোনাহ না করা। রোজা রাখা অবস্থায় গোনাহ করলে রোজা আল্লাহতায়ালার দরবারে কবুল হয় না। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তার এই পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বোখারি : ১৮০৪)। যে রোজার সঙ্গে গোনাহ মিশ্রিত হয়, হাদিস শরিফে সেই রোজাকে ত্রুটিযুক্ত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রোজা ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না তা ত্রুটিযুক্ত করা হয়।’ (সুনানে নাসায়ি : ২২৩৩)।

(২) রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা : রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। তাই প্রতি দিন কোরআন শরিফ তেলাওয়াতের জন্য সময় রাখতে হবে। এটা রমজান মাসের হক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়িসহ আমাদের পূর্বসূরী সকল বুযুর্গের আমল এটাই ছিল। স্বয়ং জিবরাইল (আ.) এই মাসে দুনিয়াতে নেমে আসতেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোরআন শোনাতেন এবং রাসুল থেকে কোরআন শুনতেন। হাদিস শরিফে আছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরীল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরীল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা একে অপরকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহমতের বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন। (বোখারি : ৬, মুসলিম : ৩২০৮, আহমাদ : ৩৬১৬, ৩৪২৫)।

(৩) কালিমায়ে তাইয়্যিবা বেশি বেশি পড়া : কালিমায়ে তাইয়্যেবা পাঠের ফজিলত এমনিতেই অনেক বেশি। হাদিস শরিফে কালিমায়ে তাইয়্যেবা পাঠের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রমজান মাসে তা আরো অনেক বেশি ফজিলত লাভের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে অধিকহারে কালেমায়ে তাইয়্যেবা পাঠ করতে আদেশ করেছেন, এক দীর্ঘ হাদিসের শেষে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করতে থাক। তন্মধ্যে দুইটি কাজ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আর দুইটি কাজ এইরূপ, যা না করে তোমাদের উপায় নেই। প্রথম দুই কাজ যা দ্বারা আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করবে তা হলো, অধিক পরিমাণে কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়বে এবং এস্তেগফার করবে। অন্য দুইটি কাজ হলো- আল্লাহতায়ালার কাছে জান্নাত পাওয়ার জন্য দোয়া করবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করবে। (তারগীব : ইবনে খুযাইমাহ, বাইহাকী, ইবনে হিব্বান)।

(৪) রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করা : রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা মোমেনের দোয়া অনেক বেশি পরিমাণে কবুল করে থাকেন। এজন্য এই মাসে দোয়া করার প্রতি গুরুত্ব দিতে পারি। হাদিস শরিফে এই মাসে জান্নাত লাভ করা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করতে আদেশ করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে এই দোয়া শিখিয়েছেন, (আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান নারি) অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এছাড়াও রমজান মাসে যেসকল দোয়া পাঠ রাসুল থেকে প্রমাণিত সেই মাসনুন দোয়াগুলো আমরা খুঁজে খুঁজে আদায় করতে পারি। যেমন- রাসুল ইফতারের সময় পড়তেন, (ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলি) অর্থ : হে প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী সত্তা, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (শুআবুল ঈমান, বাইহাকি : ৩ : ৪০৭)। তারপর ইফতার শুরু করার সময় পড়তেন, (বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহি)।

অর্থ : আল্লাহতায়ালার নামে শুরু করছি এবং আল্লাহতায়ালার বরকতের সঙ্গে এ খাবার খাচ্ছি। (মুসতাদরাকে হাকিম, ৫ : ১৪৬)। ইফতারের সময় এ দোয়া পড়তেন, (আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু) অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার রিজিক দ্বারাই ইফতার করেছি। (আবু দাউদ শরিফ : ১/৩২২)। সর্বশেষ এই দোয়াটিও পড়তেন, (যাহাবায যমাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইন শা আল্লাহু) অর্থ : পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, ধমনীগুলো সতেজ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ (রোজার সওয়াব) নিশ্চিত হয়েছে। (আবু দাউদ : ২৩৫৭)। সর্বোপরি রমজান মাস ইবাদতের মাস। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। এজন্য এই মাসের কোনো একটি মুহূর্ত যেন অহেতুক বা গোনাহের কাজে নষ্ট না হয়, এদিকে সচেষ্ট থাকা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজানকে কবুল করুন। গোনাহমুক্ত থেকে আমল করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : শিক্ষক, আল আবরার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মনিরাজপুর, জামালপুর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত