ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শাওয়াল মাসের আমল

জাকারিয়া জুবায়ের
শাওয়াল মাসের আমল

মহিমান্বিত রমজানের পরেই আগমন ঘটে শাওয়ালের। আরবি বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে দশম মাস হলো শাওয়াল। শাওয়াল হজের মাসসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি মাস। শাওয়াল মূলত আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ: উঁচু, উন্নত বা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া ইত্যাদি। প্রতিটি অর্থের সঙ্গে শাওয়ালের সুগভীর সম্পর্ক আছে। কারণ এ মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়। নেকির পাল্লা ভারী হয়, গৌরব অর্জন হয়। সাফল্য আসে। একমাস ফরজ রোজা আদায় শেষে এ মাসে আরো কয়েকটি নফল রোজা আদায়ের প্রতি মনোনিবেশ করে আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করা, আত্মিক ও মানবিক উৎকর্ষ সাধনে পরিপক্বতা ও স্থিতি লাভ করা শাওয়াল মাসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।

শাওয়াল মাসের আমল ও ফজিলত : এক. এ মাসের প্রথম আমল হলো পহেলা দিবসে ঈদুল ফিতরের নামাজ ও ছদকায়ে ফিতর আদায় করা। দুই. রমজান মাসে কোনো রোজা কাজা হয়ে গেলে, সেটা দ্রুত আদায় করে নেওয়া। কেন না, মৃত্যু কার কখন চলে আসে তা জানা নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, প্রত্যেক বান্দার হায়াত সুনির্ধারিত। যখন নির্দিষ্ট সময় চলে আসবে, তখন একমুহূর্ত?ও বিলম্ব হবে না এবং ত্বরাও হবে না। (সুরা আরাফ-৩৪)। তিন. এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা। যে সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজাগুলো রাখবে অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখবে, সে পূর্ণ বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (মুসলিমণ্ড১১৬৪, আবু দাউদণ্ড২৪৩৩)। অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো, তা হলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি-১৫৩৪)। চার. এছাড়া শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদী করা সুন্নত। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহার আকদ এ মাসে কোনো এক শুক্রবার মসজিদে নববিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। (মুসলিমণ্ড৩৩৫২) এছাড়া উম্মে ছালামা ও ছাউদা বিনতে যাম?(আ. রাযি.) কেও শাওয়াল মাসে বিয়ে করেছিলেন (মুসলিমণ্ড১৪২৩)। অতএব, শুভকাজের সূচনার জন্য এ মাস খুবই উপযোগী। শাওয়াল মাসে ও জুমার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা সুন্নাত। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোনো দিন বিবাহ করা যায়। এত শরয়ি কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯)।

পাঁচ. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি প্রিয় অভ্যাস; তিনি প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। সুতরাং এ মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখেও রোজা রাখার চেষ্টা করা। (বোখারি : ১৯৮০, আবু দাউদ: ২৪৪৯, মুসনাদে আহমাদ : ২৩০৭০)। ছয়. শাওয়াল হজের মাস হিসেবে যাদের ওপর হজ করা ফরজ তারা হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বিধিবিধান, মাসলা-মাসায়েল ইত্যাদি ভালোভাবে শেখার চেষ্টা করা। ব্যাপকভাবে সবাই বাইতুল্লাহ ও রওজা মোবারক জিয়ারত করার বাসনা মনে রেখে আল্লাহর কাছে তাওফিকের প্রার্থনা করা।

ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেঁচে থাকি : এক. শাওয়ালের ছয় রোজাকে অনেকে সাক্ষী রোজা নামে অভিহিত করেন এটা শরীয়াত স্বীকৃত নাম নয়, কোরআন হাদিসের কোথাও এ নামের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। অতএব, এভাবে ছয় রোজাকে নামকরণ করা বর্জন করা অত্যাবশ্যকীয়। দুই. অনেকে এ ছয় রোজাকে মহিলাদের জন্য বিশেষ মনে করেন। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। এ রোজা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এর প্রতিদান আল্লাহতায়ালা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য নির্ধারণ করেছেন সমানভাবে।

যেভাবে রাখতে হবে ছয় রোজা : শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা বিরতি দিয়ে। লক্ষণীয়, রমজানের রোজা ছাড়া অন্য সব রোজার নিয়ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে হয়। (ফত?ওয়ায়ে শামি)। রমজানের ছুটে যাওয়া রোজা কাজা করার আগেও নফল রোজা রাখা যায়। তবে সম্ভব হলে ফরজ রোজার কাজা আগে আদায় করাই উত্তম। (ফাতহুল কাদীর-২/৩১১, ফাত?ওয়ায়ে ইসলামিয়া ২/১৬৬)।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত