আমরা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী একসঙ্গে বাস করি। আমাদের বসবাস-পড়াশোনা-চলাফেরায় অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ পড়ে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বনকারীদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে; আমরা এগিয়ে চলি হাতে হাত রেখে। আমাদের মধ্যে হিন্দু ভাইবোনরা আমাদের বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়; আমরাও তাদের অশুভ ক্ষণে সহযোগিতার হাত বাড়াই। তাদের-আমাদের মধ্যে কোনো দাঙ্গার সৃষ্টি হোক- তা আমরা মুসলিম জাতি হয়ে চাই না। এমনকি অমুসলিমদের সঙ্গে আমাদের কিছু কিছু বন্ধুত্বের সম্পর্কও হয় অকৃত্রিমণ্ডনিবিড়-ঘনিষ্ঠ। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি বিষয় আমাদের জন্য ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে; যা বেশিরভাগ লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে। কিছু কিছু হিন্দু যুবকরা আমাদের পর্দানশীন মুসলিম বোনদের টার্গেটের আওতায় এনেছে তাদের সতিত্ব হরণের জন্য; এমনকি ঘটনার গভীরতা একটু খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, তারা মুসলিম নারীর গর্ভে হিন্দু ঔরস্যে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিকল্পিত মিশনে নেমেছে। আমাদের মুসলিম বোনেরাও স্রেফ বন্ধু ভেবে তাদের লুকানো ফাঁদে পা দিচ্ছে। হয়তো সেই সম্পর্কে চলছে, ভালোবাসা নামধারী প্রতারণার খেলা। যে সম্পর্কগুলোর নেই কোনো ধর্মীয় স্বীকৃতি। কারণ ইসলাম ধর্মে ভিন্ন ধর্মানুসারীকে বিয়ে করা হারাম, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ইসলামের শীতল ছায়াতলে আসে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক (বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসী) নারীকে বিয়ে করো না, যদিও মুশরিক নারী তোমাদের মুগ্ধ করে; ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক পুরুষের সঙ্গে (তোমাদের নারীদের) বিয়ে দিয়ো না, যদিও মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করে।’ (সুরা বাকারা : ২২১)। সুতরাং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ভিন্ন ধর্মের সম্পর্কগুলোর হালাল পরিণয় সম্ভব নয়। সবচেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মের অতি উৎসাহী যুবকদের বেশ কয়েকটি দল গড়ে উঠেছে যাদের উদ্দেশ্য মুসলিম মেয়েদের প্রেমের জালে ফেলে তাদের সতিত্ব কেড়ে নেওয়া, বিয়ে করে বউ বানিয়ে বা নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে ভারতে পাচার করা। এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাদের গ্রুপ চ্যাটিংগুলো দেখে। গভীর চিন্তার দৃষ্টি দিলে বিষয়টি মোটেও শোভনীয় নয় এবং আমাদের মা-বোনদের জন্য খুবই উৎকণ্ঠার বিষয় এটি। বিষয়টি সামনে আনার উদ্দেশ্য কোনো ধর্মকে ছোট করা নয়। কোনো ভিন্ন ধর্ম মতের মানুষদের হেয়প্রতিপন্ন করা নয়। উদ্দেশ্য হলো, নিষ্ঠুর বাস্তবতার কবল থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতন করা। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের বন্ধুবান্ধব বা একই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সহমর্মিতা ও দ্বেষ ও ঘৃণা বর্জন করে শান্তির সমাজ গঠন করতে চাই। আমরা একসাথে বাঁচতে চাই; সেই বেঁচে থাকা হোক সহমর্মিতার-সহযোগিতার-মনুষ্যত্বের; সেখানে না থাকুক প্রতারণা, না থাকুক নির্মম বাস্তবতার কষাঘাত।
লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।