ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সালামের তাৎপর্য ও ফজিলত

মো. আব্দুল ওহাব
সালামের তাৎপর্য ও ফজিলত

ইসলামে যত বিধিবিধান আছে সালাম তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামে সালামের বহু উপকারিতা ও ফজিলত আছে। আমরা মুসলমানরা পরস্পরে দেখা হলে বলে থাকি ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অর্থ ‘তোমার ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।’ অপর ভাই জবাবে বলে, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ’ অর্থ : তোমার ওপরও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।’ যা কত সুন্দর অভ্যর্থনা। কেউ সালাম দিলে তার জবাব উত্তমভাবে দেওয়ার জন্য স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ করের।’ (সুরানিসা : ৮৬)।

সালামের প্রচলন আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আলাহিস সালামের থেকেই শুরু হয়েছে যেমন হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা আদম (আ.)-কে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ৬০ হাত। আল্লাহতায়ালা তাঁকে সৃষ্টি করে বলেন, যাও এবং অবস্থানরত ফেরেশতাদের ওই দলটিকে সালাম করো। আর তারা তোমার সালামের উত্তরে কী বলে তা শ্রবণ করো। তারা যে উত্তর দেবে তা তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের উত্তর। অতঃপর আদম (আ.) গিয়ে তাদের উদ্দেশে বললেন : ‘আসসালামু আলাইকুম’। অতঃপর ফেরেশতারা উত্তর দিলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তারা (ফেরেশতারা) ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অংশটি বৃদ্ধি করেছেন।’ (মিশকাত : ৪৬২৮)। পৃথিবীতে যত উত্তম কাজ আছে সেসবের মধ্যে সালাম অন্যতম। কেন না, যখন সাহাবিরা রাসুলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ইসলামে সর্বোত্তম কাজ কী? তার জবাবের এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, সালামের প্রসার করা। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল’ আস রাদিয়াল্লাহু ’আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ’সর্বোত্তম ইসলামি কাজ কী?’ তিনি বললেন, ‘(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সবাইক (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’ বোখারি ও মুসলিম)। এ হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের উচিত পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া। যে ব্যক্তি আগে সালাম দেবে সে অহংকার থেকে মুক্ত বলে প্রমাণিত হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হলো ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।’ (মিশকাত)। অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের যে আগে সালাম দেবে, সে অহংকারমুক্ত।’ (মিশকাত)। সালামের বিশেষ একটা কাজ রয়েছে সেটা হলো অন্যের গৃহে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে অনুমতি নেয়া। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল কোরআনেও উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদের সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।’ (সুরা নূর : ২৭)। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।’ (সুরা নূর : ৬১)। এটা খুবই কার্যকরী একটা কাজ। আমরা অনেক সময় ইতস্তত হয়ে পড়ি যে কীভাবে অনুমতি নিব? কীভাবে কথা শুরু করব? অথচ ইসলাম আমাদের উত্তম পদ্ধতির কথা জানিয়ে দিয়েছে, সেটা হলো সালামের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া ও সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করা। হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রথমে সালাম দেবে না, তাকে (প্রবেশের) অনুমতি দিও না।’ (সহীহুল জা’মে হা : ৭১৯০)। তিনি আরো বলেন, ‘যে সালামের আগে কথা বলতে শুরু করে, তার জবাব দিও না। (সিলসিলাহ সহিহাহ আল-মাকতাবাতুশ শামেলা-৮১৬)। সুতরাং সালামের উপকারিতা ও ফজিলত অনেক বেশি। কাজেই আমাদের সকলের উচিত জীবনের সর্বাবস্থায় মুসলমানদের এ ফায়দাজনক সভ্যতাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে হাদিসের ওপর আমল করা এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা। কেন না, আমরা জানি, সালামের মাধ্যমে পরস্পরে মুহাব্বত পয়দা হয়। সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে।

লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত