কোরআনের উপস্থাপনায় অভিযোগের নমুনা ও তার স্বরূপ
মুসা আল হাফিজ
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুরা কিয়ামাহর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেয়ামত ও কেয়ামতের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে মধ্যখানে চারটি আয়াত এমন রয়েছে, যা পূর্বাপরের আয়াতগুলো থেকে সম্পর্কহীন। আয়াতগুলো হলো : (অর্থ) কোরআন তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তুমি তোমার জিহ্বাকে দ্রুত আন্দোলিত করো না। এর সংরক্ষণ ও পড়ানোর দায়িত্ব আমারই। কাজেই আমি যখন তা পাঠ করি, তখন তুমি সে পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর তা (ওয়াহীয়ে খফী বা প্রচ্ছন্ন ওয়াহীর মাধ্যমে) বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা আমারই দায়িত্ব। ইমাম রাজি রহমাতুল্লাহি আলাই বলেন, যেসব মতবাদ দাবি করে, কোরআনের মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন ও হ্রাস বৃদ্ধি ঘটেছে, তারা এই আয়াতগুলোকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা বলে যে, এই আয়াতগুলোর সঙ্গে তার পূর্বাপরের সম্পর্ক নেই। যদি কোরআনের বিন্যাসপদ্ধতি আল্লাহপ্রদত্ত হতো, তাহলে এমনটা কখনোই হতো না। তাদের এই অভিযোগ কোরআনের আবশ্যকীয় এক শাখা সম্পর্কে অজ্ঞতার ফসল। আয়াতের সঙ্গে শানে নুযুলের যোগসূত্র সম্পর্কে সচেতন হলে এই অভিযোগ জন্মই নিতো না। এই আয়াতসমূহের শানে নুযুলে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, অহি নাজিল হওয়ার সময় রাসুল (সা.) তৎক্ষণাৎ অহির শব্দণ্ড বাক্যগুলো মুখে আওড়াতে থাকতেন। যাতে ভুলে না যান। এতে রাসুল (সা.)-এর কষ্টও হত বটে। তাই এই আয়াতগুলো দ্বারা নবীজিকে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলোর সঙ্গে আসলেই কি পূর্ব ও পরের সম্পর্ক নেই? বস্তুত এ আয়াতের আগের আয়াতসমূহে আলোচনা করা হয়েছে, মানুষের প্রকৃতি ও প্রবণতা নিয়ে। বলা হয়েছে- (অর্থ) ‘বস্তুত মানুষ নিজের সম্বন্ধে সম্যক অবগত।’ আয়াতে শব্দটির অর্থ যদি ‘চক্ষুষ্মান’ ধরা হয়, তখন আয়াতের অর্থ হবে, মানুষ তার কর্ম সম্পর্কে খুব জ্ঞাত। সে কি করেছে, তা সে নিজেই জানে। তাই আখেরাতের আদালতে হাজির করার সময় প্রত্যেক কাফের, মুনাফিক, পাপী ও অপরাধী নিজেই বুঝতে পারবে যে, সে কি কাজ করে এসেছে এবং কোন অবস্থায় নিজ প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে; সে যতই অস্বীকার করুক বা ওযর পেশ করুক।
পক্ষান্তরে যদি শব্দের অর্থ ‘প্রমাণ’ হয়, তখন আয়াতের অর্থ হবে এই যে, মানুষ নিজেই নিজের সম্পর্কে প্রমাণস্বরূপ হবে। তার কৃতকর্মের প্রমাণ তারই মধ্যে নিহিত থাকবে। তার অস্তিত্বই প্রমাণ পেশ করবে তার পাপের। যদিও সে মন্দকর্মের জন্য মিথ্যা ও বাহানা পেশ করতে থাকবে। কোরআনের ভাষায় (অর্থ) ‘যদিও সে নানান অজুহাত পেশ করে।’ মানুষের সত্তায় যেমন মন্দকর্মের সকল রেকর্ড সুরক্ষিত থাকে, তেমনি কি উত্তম ও শ্রেষ্ঠ উপাদান সুরক্ষিত থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। পাপের যেমন সাক্ষ্য সংরক্ষণ করে মানুষের সত্তা, তেমনি পুণ্যেরও, উত্তমতারও।
সব পুণ্য আর উত্তমতার শ্রেষ্ঠতম হেদায়েতনামা আল কোরআনও তাই মানুষের সত্তায় সুরক্ষিত থাকা সম্ভব। এই সম্ভাব্যতা কোরআনের সব পাঠকের মধ্যে একভাবে প্রতিফলিত হয়, আর মুহাম্মদ (সা.)-এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে বিশেষভাবে। মহান আল্লাহ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তার সত্তায় কোরআনের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। ফলে তার পেরেশানির কোনো প্রয়োজন নেই। সুরা কিয়ামাহ-এর ১৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সেই ব্যবস্থাপনার জানান দিচ্ছেন, মহানবীকে (সা.) আশ্বস্ত ও নিশ্চিত করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে ১৪ ও ১৫ সংখ্যক আয়াতের সঙ্গে ১৬ নম্বর আয়াতের সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর। ১৭ ও ১৮ সংখ্যক আয়াতের দিকে যদি দৃষ্টি দিই, সেখানে দেখব মানবপ্রকৃতির বিশেষপ্রবণতা নিয়েই আলোচনা। মানুষের সত্তায় সব কাজের রেকর্ড ও প্রমাণ নিহিত থাকলেও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার স্বভাব মানুষকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। গুনাহে মানুষ লিপ্ত হয় এবং আত্মনাশা পরিণতিকে ডেকে আনে নানাভাবে। এর মধ্যে তাড়াহুড়োর প্রবণতা আত্মবিনাশের অন্যতম উপাদান। এ কারণে চিন্তা ও কর্মে ঘটে বিপর্যয়, জীবন হয় বিপন্ন। ক্ষতি ও কষ্ট নেমে আসে নানাভাবে। বস্তুগত ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো যেমন ঘটে, তেমনি ঘটে ধর্মীয় ও পারলৌকিক ক্ষেত্রেও। ফলে দ্বীনি বিষয়ের মধ্যে তাড়াহুড়ো করা চলবে না। আগের আয়াতে মহানবী (সা.) কে কোরআন স্মৃতিতে সংরক্ষণে তাড়াহুড়া না করতে বলা হয়েছে। কোরআনের মতো মহান ও মহার্ঘ্য হেদায়েতকে মুখস্থ করতেও তাড়াহুড়ার দরকার নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মমোবাসনা ছিল এই আয়াতগুলো দ্রুত মুখস্থ করে, কাফেরদের কাছে পৌঁছে দেবেন। যেন তারা দ্রুত পেয়ে যায় হেদায়েতের নতুন বার্তা। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকে জানানো হলো যে, আপনি শত দ্রুততা করলেও ঈমানবিমুখতা যাদের অস্তিত্বে গেঁথে গেছে, তারা ঈমান আনবে না। অন্যের কাছে ঈমানের হেদায়েত পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও তাড়াহুড়ো যখন নিষেধ, তখন সাধারণ কাজে তাড়াহুড়ো অবশ্যই অগ্রহণীয়। কিন্তু মানুষ তাড়াহুড়াকেই নিজের পথের দিশারি বানিয়ে নেয়। সব ক্ষেত্রে এটা করে। তারা দ্রুততাকে চায়। ফলে নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা শূন্য থাক। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের দৃশ্যমান লাভের পেছনে ছুটে, বস্তুবাদী হয়ে যায়। সে হাকিকত থেকে বঞ্চিত হয়। পরকালকে উপেক্ষা করে, বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়। আল কোরআন এ বিষয়ে আলোকপাত করে মানুষকে হেদায়েত করেছে। ইরশাদ হয়েছে- (অর্থ) ‘না তোমরা তাড়াহুড়োকেই (দুনিয়াকেই) ভালোবাসো’ কাফফাল আখবারি এর মতে সূরা কিয়ামাহর আলোচ্য আয়াতসমূহে (১৬-১৯) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়নি বরং এই আয়াতগুলো সূরা কিয়ামাহ-এর ১৩ নম্বর আয়াতের পরিশিষ্ট। যেখানে ইরশাদ হচ্ছে- (অর্থ) ‘সেদিন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হবে, সে কী (আমাল) আগে পাঠিয়েছে আর কী পেছনে ছেড়ে এসেছে।’ ১৬-১৯ আয়াত দ্বারা সম্বোধন করা হবে কেয়ামতের দিন আমলনামা পাঠকারীদের। যখন পাপাচারী ব্যক্তিকে আমলনামা দেওয়া হবে, আর তাকে বলা হবে- (অর্থ) ‘পাঠ করো তোমার কিতাব, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশকারী হিসেবে যথেষ্ট।’ তখন সে নিজের আমলনামা পড়ার সময় ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকবে আর তাড়াহুড়ো করে দ্রুত পড়া শুরু করবে। তখন তাকে বলা হবে- (অর্থ) ‘তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে তুমি তোমার জিহ্বাকে দ্রুত আন্দোলিত করো না।’ কারণ তোমার সব আমলনামা সংরক্ষিত আছে। সেগুলো পড়ে তোমার ওপর সিদ্ধান্ত হবে। কাফফাল (রহ.) ব্যাপারটিকে বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন যে, ‘এটা উত্তম মতামত। এর ওপর কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক বা যৌক্তিক আপত্তি নেই। যদিও হাদিসের বর্ণনা এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতামত হচ্ছে- সূরা কিয়ামাহর আলোচ্য আয়াতসমূহের (১৬-১৯) ভূমিকা হচ্ছে, তার আগের আয়াতগুলো। আর পরের আয়াতগুলো হচ্ছে, ১৬-১৯ সংখ্যক আয়াতের পরিশিষ্ট। প্রকৃতপক্ষে সূরা কিয়ামাহ-এর মূলবার্তা হচ্ছে- ১৬ থেকে ১৯ সংখ্যক আয়াত। ফলে তার আগের সব আয়াত এই বার্তার পটভূমি তৈরি করেছে আর পরের সব আয়াত এই বার্তার উপসংহার ঘোষণা করেছে।
কোরআনুল কারিমের আয়াতসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশেষ বিশিষ্টতায় গতিমান। যেহেতু কোরআনের আসল উদ্দেশ্য উপদেশ দান, ফলে অধিকাংশ সূরার শুরুতেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে মৌলিক এই লক্ষ্যের প্রতি। সব আয়াতকে কিতাবে মুবিন বা সুস্পষ্ট উপদেশের কিতাবের আয়াত হিসেবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপদেশ ও হেদায়েতই মূল ধ্রুবা। একে উপজীব্য করে আয়াতগুলো বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যাচ্ছে। কিন্তু কোরআনের হেদায়েতের বিষয় তো গোটা জীবন। আমাদের কাছে তা নানা ভাগে বিভক্ত। আমাদের হিসাবে একেকবিষয় কত আলাদা! কিন্তু কোরআনি হেদায়েতের বিচারে যাপনশীল জীবনের সব বিষয়ই একই ঐশী আলোর আওতাধীন।
সূরা গাশিয়াহর ১৭ থেকে ২০ নং আয়াত নিয়েও অভিযোগ তুলেছে বিরুদ্ধবাদীরা। তাদের দাবি, সূরা গাশিয়ায় কেয়ামত জান্নাত এবং জাহান্নামের আলোচনা রয়েছে। আর শুরু থেকে ১২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পারলৌকিক বিচার ও ফলাফলের ওপর আলোচনা হয়েছে। কিন্তু শেষে গিয়ে বিষয়ের পরিবর্তন হয়ে গেল, বর্ণনাধারাও বদলে গেল। এই অসামঞ্জস্য কীভাবে থাকতে পারে কোরআনে? অভিযোগ ও তার জবাব বুঝে নেবার জন্য সূরা গাশিয়াহ পাঠ করে নেওয়া যাক। (অর্থ) আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কিয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে লাঞ্ছিত, পরিশ্রমী, ক্লান্ত। তারা তীব্র জ্বলন্ত আগুনে দগ্ধ হবে। তাদের চূড়ান্ত উত্তপ্ত ঝর্ণা থেকে পান করানো হবে। বিষাক্ত কাঁটাযুক্ত ঘাস ব্যতীত তাদের জন্য কোনো খাদ্য নেই। এটা তাদের পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও দূর করবে না। সেদিন অনেক মুখমণ্ডল হবে আনন্দে উজ্জ্বল।
তাদের (নেক) আমলের কারণে সন্তুষ্ট। তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে। তথায় শুনবে না কোনো অনর্থক কথাবার্তা। তাতে রয়েছে প্রবাহমান ঝরনা। সেখানে রয়েছে সুউচ্চ আসনগুলো এবং প্রস্তুত পানপাত্রগুলো এবং সারিবদ্ধ অনেক তাকিয়া এবং বিস্তৃত বিছানো বহু গালিচা। তারা কি উটের দিকে তাকায় না; কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে তাকায় না; কীভাবে তা উঁচু করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে; কীভাবে সেগুলোকে (জমিনে) স্থাপন করা হয়েছে? এবং জমিনের দিকে; কীভাবে তা সমতলভাবে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো শুধু একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের ওপর কর্তৃত্বকারী নন; কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কুফরি করে, আল্লাহ তাকে মহাশাস্তি দেবেন। নিশ্চয়ই তাদের আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।
অতঃপর তাদের (কর্মের) হিসাব-নিকাশ নেওয়া আমারই দায়িত্ব। পাঠক সম্ভবত ১৭ নম্বর আয়াতে বিষয়ান্তর লক্ষ্য করবেন। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতেই একে বিষয়ান্তর মনে হচ্ছে। গভীর বিচারে পূর্ববর্তী আয়াতসমূহের সঙ্গে এর সংযোগ অত্যন্ত নিবিড়, অবিচ্ছিন্ন, অচ্ছিদ্র। ইমাম রাজি (রহ.) একে ব্যাখ্যা করেছেন। তার ব্যাখ্যার সারমর্ম হলো- ‘সূরা গাশিয়ার ১৭ নম্বর আয়াত থেকে হাজির হচ্ছে, আরবের মরুজীবনের চিরচেনা দৃশ্যাবলি। উট, প্রকৃতি-পাহাড়, সুউচ্চ আকাশ, বিন্যস্ত ভূমি ইত্যাদির গঠন ও বিন্যাসের প্রতি মনোযোগী দৃষ্টিদানের আহ্বান জানিয়েছে আল কোরআন। এগুলো চোখের সামনেই দৃশ্যমান। এর মধ্যে অনুসন্ধানী দৃষ্টিপাত শুধু দেখার জন্য নয়, বরং দৃশ্যমান প্রাকৃতিক জগতের রহস্যগুলো উন্মোচনের মধ্য দিয়ে অদৃশ্য জগতের সত্যকে উপলব্ধির বার্তা দেওয়া হয়েছে। আগের আয়াতসমূহে অদৃশ্য জগতের কথা বলা হয়েছে। পরকালের শান্তি ও শাস্তির দৃশ্য হাজির হয়েছে। যা মানুষের অদেখা। যা ইন্দ্রিয়াতীত। যা অনুভবভেদ্য নয়। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে তা সম্ভব। কিন্তু তার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনের জন্য মানুষের দরকার দৃশ্যমান প্রমাণ ও নিদর্শন। ফলে ১৭ নম্বর আয়াত থেকে চিরচেনা ও দৃম্যমান নিদর্শনসমূহের প্রতি মহান আল্লাহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তার মধ্যে নিহিত সৃষ্টিকৌশল, কর্মকৌশল, যা প্রাণিতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, মহাকাশতত্ত্ব ইত্যাদিতে নিহিত আছে, তার সঙ্গে মোলাকাত ঘটালেন মানুষের। এগুলো অবধারিত বাস্তবতা হিসেবে আল্লাহর বিস্ময়কর ক্ষমতা ও কৌশলের দলিল পেশ করছে। যা প্রমাণ করে তার কুদরতের পক্ষে পারলৌকিক জীবনের যাবতীয় আয়োজনও মোটেও দুরূহ নয়, কঠিন নয়। বরং একান্তই সম্ভব। প্রমাণ পেশের এই প্রকরণ মানুষের মেধাকে নাগালের বাইরের কোনো বিষয়ের প্রতি ধাবিত করছে না। বরং এমন সব জিনিসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করছে, যা তাদের নিত্যকার জীবনের অংশ। উট হচ্ছে, আরব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাথী, প্রয়োজন, অবলম্বন। মরুভূমিতে জীবনের যাপন ও সফর উটের ওপর নির্ভর করে প্রচণ্ডভাবে। তার মাধ্যমে অগণিত উপকার লাভ করে মানুষ। আলোচ্য আয়াত তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ভাবতে বলছে, গবেষণা করতে বলছে তার সৃষ্টিকৌশল নিয়ে। শক্তিমান এই উপকারী প্রাণীকে আল্লাহতায়ালা কীভাবে তোমাদের বশে এনে দিয়েছেন? অপর দিকে উপরে দৃষ্টি দিলেই আকাশ। এ এক বিস্ময়কর ছাদ। যার উচ্চতার পরিমাণ করতে পারে না কেউ। যার মধ্যে আছে সূর্যের রোশনি আর চাঁদ, তারকারাজির খেলা এবং আলো, বৃষ্টি ও হাওয়ার পরিক্রমা। যা পৃথিবীতে এক প্রাণময়, জীবনের অনুকূল ও জ্যোতির্ময় গ্রহে পরিণত করেছে। (চলবে)
লেখক : আলেম, কবি ও গবেষক