ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খাবার গ্রহণে মুসলিম সভ্যতা

জুনাইদ ইসলাম মাহদি
খাবার গ্রহণে মুসলিম সভ্যতা

ইসলাম ধর্মে প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। আদব ও শিষ্টাচার আছে। আছে নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি। মানুষ প্রতিদিন খাদ্য খায়। পানি পান করে। এ পানাহারেরও বিভিন্ন আদব বা শিষ্টাচার আছে। যা ইসলামের বৈশিষ্ট্য। এ শিষ্টাচার বা নিয়মগুলো মেনে চললে সওয়াব লাভ হয় এবং সুন্নাহর অনুসরণের মধ্য দিয়ে আল্লাহর প্রিয়ভাজনে পরিণত হয়। নিচে খাবার গ্রহণের কিছু নিয়ম বা শিষ্টাচার পেশ করা হলো-

১. খাবার আগে ও পরে উভয় হাত ধোয়া : খাওয়ার আগে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিবে। [ তুহফাতুল আহওয়াজি ৫/৪৮৫] আর খাবার পরে হাত ধোয়া জরুরি। রাসুল (সা.) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত ধুয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ: ২৭৪৮৬, ইবনু মাজাহ: ৪৯৩)।

২. সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার না করা : সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার করতে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার করো না। আর তোমরা রেশমি কাপড় পরিধান করো না। কারণ তা দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য এবং আখেরাতে তোমাদের জন্য’ (বোখারি : ৫৬৩৩, মুসলিম : ২০৬৭)। রাসুল (সা.) অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রুপার পাত্রে পানাহার করে, সে ব্যক্তি নিজ পেটে জাহান্নামের আগুন পূর্ণ করে’ (বোখারি : ৫৬৩৪, মুসলিম : ২০৬৫)।

৩. পাত্রের মাঝখান থেকে না খাওয়া : পাত্রের মাঝখানে বরকত নাজিল হয়। তাই রাসুল (সা.) পাত্রের মাঝখান থেকে খেতে নিষেধ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেন, খাদ্যের মাঝখানে বরকত নাজিল হয়। সুতরাং তোমরা (পাত্রের) পাশ থেকে খাও, মাঝখান থেকে খেয়ো না। (সুনানে তিরমিজি : ১৮০৫)।

৩. হেলান না দিয়ে খাওয়া : হেলান দিয়ে খাওয়া সুন্নাহর খেলাফ। তাই এভাবে পানাহার না করে সোজা হয়ে বসে পানাহার করতে হবে। নবী (সা.) বলেন, ‘আমি হেলান দিয়ে খাই না। [বোখারি : ৫৩৯৮-৯৯] নবী (সা.) হেলান দিয়ে খেতে নিষেধও করেছেন। তিনি বলেন, ‘হেলান দিয়ে খেয়ো না’। (সহীহাহ : ৩১২২)।

৪. শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং শেষে ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলা : খাবার খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ এবং শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, খাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়; খাবার খাওয়ার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া। (যাদুল মা‘আদ ৪/২৩২)।

বিসমিল্লাহ বলে খাবার খাওয়া শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরিক হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়’। ( মুসলিম : ২০১৭)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমাদের কেউ নিজ বাড়িতে প্রবেশকালে এবং খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বললে, তখন শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, ‘তোমাদের জন্য রাত যাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই’। আর সে বাড়িতে প্রবেশকালে ‘বিসমিল্লাহ’ বললে এবং রাতে খাবার সময় না বললে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাতের খাবার পেলে; কিন্তু রাত যাপনের জায়গা নেই। আর যখন সে খাবার সময়েও বিসমিল্লাহ না বলে, তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত যাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে’। (মুসলিম : ২০১৮, আবু দাউদ : ৩৭৬৫)।

খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোনো খাবার খাবে, তখন সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। প্রথমে বলতে ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র বলবে, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আ-খিরাহু’। (আবু দাউদ : ৩৭৬৭, তিরমিজি : ১৮৫৮)।

৫. ডান হাতে পানাহার করা : নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার বাম হাত দ্বারা না খায় এবং পান না করে। কারণ শয়তান তার বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে’। বর্ণনাকারী বলেন, নাফে (রা.) দু’টি কথা আরো বেশি বলতেন, ‘কেউ যেন বাম হাত দ্বারা কিছু গ্রহণ না করে এবং অনুরূপভাবে তা দ্বারা কিছু প্রদানও না করে’। (মুসলিম : ২০২০, তিরমিজি : ১৮০০)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত