পোশাক সভ্যতার প্রতীক
জুবাইর মাবরুর
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
একটি প্রজন্মের রুচি ও আচরণ সমষ্টির ভিত্তিতে সভ্যতা গড়ে ওঠে। সুস্থ আচরণ বিধি, শালীন পোশাক ও ভদ্রোচিত দেহভঙ্গি মানুষকে শুদ্ধতার প্রতি আহ্বান করে। গড়ে ওঠে সুস্থ সভ্যতা। এ ক্ষেত্রে নারীর মার্জিত অঙ্গভঙ্গি ও শালীন পোশাকের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মন-মননে ও সমাজে এর প্রভাব পড়ে। শালীন পোশাক একটি শুদ্ধবিমল চরিত্রবান প্রজন্মের ইঙ্গিত বহন করে। পোশাকে মানুষের লজ্জা নিবারণ হয়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। পোশাক ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার বা ঐতিহ্য। ইসলামে পোশাকের বিষয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা আছে। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে আছে মৌলিক কিছু রীতিনীতি। যা মেনেই একজন মুসলিম তার পরিধেয় বস্ত্র ঠিক করবে। আল্লাহতায়ালা পোশাক সম্পর্কে বলেন, হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাজিল করেছি, যা তোমাদের লজ্জা নিবারণ করে এবং যা দ্বারা তোমরা সাজসজ্জা করো। আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম। (সুরা আরাফ : ২৭)।
পোশাকের মূলনীতি : পোশাকের মূলনীতি সম্পর্কে দুটি হাদিস উল্লেখযোগ্য। এক. রাসুল (সা.) বলেছেন, যা মনে চায় (হালাল) তা খাও এবং যা চাও (নিষিদ্ধ নয়) তা পরিধান করো। যতক্ষণ অপচয় এবং অহংকার না হয়। (মিশকাত : ৪/২১৭)। দুই. যে ব্যক্তি বিজাতির, অমুসলিমের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১)। অতএব, পোশাকের ক্ষেত্রে এই খেয়াল রাখা আবশ্যকীয় যে, কোনো মুসলমানের পোশাক যেন কোনোভাবেই বেজাতি-অমুসলিমের পোশাকের ও তাদের রুচির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়। বাকি পোশাকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে যে ভিন্নতা ও প্রচলন আছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। (ফাতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ১৬/১৪৪)।
এ কথা মনে রাখা চাই, পোশাক যাই হোক, তা অবশ্যই ঢিলেঢালা হওয়া চাই এবং পাতলা ফিনফিনে না হয়ে এতটুকু মোটা অবশ্যই হওয়া চাই, যাতে পোশাকের অভ্যন্তরের শরীর দেখা না যায়।
রাসুল (সা.) টাইট-ফিট, আঁটোসাঁটো পোশাক পছন্দ করতেন না। নারীদের এমন পোশাক পরিধান করতে তিনি নিষেধ করতেন। এমনিভাবে তিনি পুরুষদের টাখনুর নিচে লুঙ্গী, প্যান্ট, পায়জামা ইত্যাদি ঝুলিয়ে পরতে নিষেধ করতেন। হাদিসে এসেছে- তিনি বলেন, যে অহংকারের সাথে পরিধেয় টেনে চলবে, আল্লাহতায়ালা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। (বোখারি : ৫৭৮৩, মুসলিম : ২০৮৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, টাখনুর নিচে কাপড়ের (পায়ের) যে অংশ থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। (নাসায়ি : ৫৩৩০)। কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের দিকে আল্লাহ তাকাবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে আজাব। তার প্রথম শ্রেণি হলো, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী। (মুসলিম : ১০৬)।
নারীর নিষিদ্ধ পোশাক : আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, হে নারীরা তোমরা নিজেদের প্রাক-জাহেলি যুগের মতো প্রদর্শন করবে না। (সুরা আহজাব : ৩৩)। ইসলাম মহিলাদের জন্য এমন পোশাক নির্ধারণ করেছেন, যা পরিধানের দ্বারা তাদের ব্যক্তিত্ব প্রশংসিত হবে এবং সব ধরনের অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। রাসুল (সা.) তাদের বিশেষ কিছু কাপড় পরিধান করতে বারণ করেছেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) সেই মহিলাকে অভিসম্পাত করেছেন, যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ : ৪০৯৮, মুসনাদে আহমাদ : ৮১১০)। বর্তমান সময়ে এটা এক ধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এটাকে কোনো গোনাহ-ই মনে করা হচ্ছে না। মুসলিম নারীরা অমুসলিম নারীদের অনুকরণে এমন পোশাক পরিধান করে আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতায় নিজেকে লিপ্ত করছে। মুসলিম নারীদের পুরুষালি পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকা উচিত। আঁটোসাঁটো, পাতলা ফিনফিনে কাপড় পরিধান করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেন, দুই শ্রেণির জাহান্নামিকে আমি এখনো (তার সময়ে) দেখিনি। এমন একশ্রেণির লোক যাদের কাছে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা জনগণকে পেটাবে এবং এমন একশ্রেণির মহিলা, যারা পোশাক পরা থাকবে; কিন্তু তারপরেও উলঙ্গ থাকবে। তারা পুরুষদের নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ অনেক দূর থেকে পাওয়া যায়। (মুসলিম : ৮৪৫১, মুসনাদে আহমাদ : ৯৩৩৮৮।)
ফ্যাশনের নামে মুসলিম নারীরা কাঁধ-ফাঁকা, গলাকাটা পোশাক পরতে অভ্যস্ত হচ্ছে। অথচ কাধখোলা পোশাক পরতে ইসলামে বারণ রয়েছে। সাহাবি আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এমন পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন, যাতে এক-কাঁধে কাপড় থাকে এবং অন্য কাঁধে কাপড় থাকে না বরং খোলা থাকে। (মুসলিম : ২০৯১)।
তাকওয়ার পোশাক : যে ধরনের পোশাক আল্লাহর রাসুল (সা.) পরিধান করেছেন, পরিধান করতে বলেছেন তা-ই তাকওয়ার পোশাক। যে কোনো ব্যক্তি তার সাধ্যমতে সুন্দর ও উন্নতমানের কাপড় পরিধান করতে পারে। তবে সেটা নিষিদ্ধ ও অহংকার প্রকাশকারী না হওয়া জরুরি। রাসুল (সা.) কে একলোক জিজ্ঞেস করল, মানুষ তো ভালোবাসে যে তার পোশাক সুন্দর হোক, জুতা সুন্দর হোক। তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। অর্থাৎ সুন্দর পোশাক পরতে কোনো সমস্যা নেই। শর্ত হলো, নিষিদ্ধ কাপড় যেন না হয় এবং সেটা দ্বারা অহংকার প্রদর্শনের মানসিকতা যেন না থাকে। (মুসলিম : ৯১, তিরমিজি : ১৯৯৮)।