স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার কৌশল

ইসমাইল সিদ্দিকি

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

একজন মোমেন বান্দা হিসেবে নিজ আচরণেই স্ত্রীকে মুগ্ধ করতে হয়। জীবনসঙ্গীকে ভালোবেসে সুখময় জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী কী? কোরআন-হাদিসের আলোকে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

নিজেকে পরিপাটি রাখা : পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে স্ত্রীরাও তাদের সঙ্গীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ময়লা কাপড় গায়ে জড়িয়ে, ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে স্বামী স্ত্রী কেউ অপরের সান্নিধ্যে না যাওয়া। এতে হেলা প্রকাশিত হয়। ধীরে ধীরে অবজ্ঞার রূপ নেয়। তখন সংসারে ভাঙন ধরে। তাই পরিপাটি থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি’ (বায়হাকি : ১৪৭২৮)।

ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা : স্ত্রীর জন্য সামর্থ্যানুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে কৃপণতা পরিহার করে সাওয়াবের আশা রাখা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সাওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়’ (বোখারি : ৫৩৫১)।

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা : স্ত্রী যখনই স্বামীর সামনে আসবে, তখনই তাকে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানানো। বেশিরভাগ সাক্ষাতের সময়, আর বিদায়ের সময় নিবিড় আলিঙ্গনে তাকে বেঁধে রাখা কিছুক্ষণ। ভেবে দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি সবসময় আপনাকে হাসি-খুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে!

স্ত্রীর প্রশংসা করা : রাসুল (সা.) স্ত্রীদের প্রশংসা করতেন। ভালো কাজের জন্য শুকরিয়া জানাতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে থেকে খাদিজা (রা.)-এর চেয়ে অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ঈর্ষাপোষণ করিনি। কারণ, রাসুল (সা.) প্রায় তার কথা স্মরণ করতেন এবং তার প্রশংসা করতেন’ (বোখারি: ৫২২৯)।

দোষ গোপন রাখা : মন খারাপি অবসানের জন্য আমরা অন্যের কাছে নিজের প্রিয় মানুষটার সমালোচনা করে বেড়াই। এতে করে সংসারে কলহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এবং সুখ-শান্তি চলে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়’ (সূরা হুমাজাহ : ১)।

গোপনীয়তা ফাঁস না করা : স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস জঘন্যতম পাপ। নিজেদের একান্ত বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করা গর্হিত অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়’ (মুসলিম : ৩৪৩৪)।

ঘরের কাজে সহযোগিতা করা : কর্মব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও যখনই ঘরে ফেরা হবে, তখন একটু সময় বের করে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে ছুটির দিনটিতে দু’জনে ঘর গোছানোর কাজ শেয়ার করে নেওয়া যেতে পারে।

আসওয়াদ (রহ.) বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর সালাতের সময় সালাতে চলে যেতেন’ (বোখারি: ৬৭৬)।

প্রহার না করা : স্ত্রীদের মারধর করা চরম অন্যায় আর নিম্ন মানসিকতার পরিচয়। আবদুল্লাহ ইবনে যামআ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেন না, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে’ (বোখারি : ৫২০৪)।

লেখক : শিক্ষক