ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জিন থেকে নিরাপদ থাকার আমল

শরিফ আহমাদ
জিন থেকে নিরাপদ থাকার আমল

মহান আল্লাহর এক সৃষ্টি জিন। তিনি মানবজাতির পূর্বে তাদের সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (সুরা যারিয়াত : ৫৬)। পবিত্র কোরআনের প্রায় ৯০টি আয়াতে জিনের অস্তিত্বের প্রমাণ বিদ্যমান। জিনজাতি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করেছেন। কাজেই জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করা কুফরি। জিনজাতি মানুষের মতো ভালো ও? খারাপ উভয় শ্রেণিতে বিভক্ত। ওরা ইচ্ছে করলে মানুষের ক্ষতি করতে পারে। মানুষের শরীর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই নিয়মিত এমন কিছু আমল করা জরুরি। যে আমলের ওসিলায় আল্লাহতায়ালা বান্দাকে জিনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখেন। এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

যখন জিন আছর করে : জিনজাতি বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় মানুষের ওপর আছর করে। তবে সাধারণত চারটি অবস্থায় মানুষের ওপর আছর করে। এক. ভীত সন্ত্রস্ত থাকলে । দুই. অত্যাধিক রাগান্বিত থাকলে। তিন. উদাসীন অবস্থায় থাকলে। চার. কোনো গোনাহে লিপ্ত থাকলে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য এক শয়তান নিযুক্ত করে দিই। এরপর সে হয় তার সঙ্গী। আর তারাই মানুষকে সৎ পথে চলতে বাধা দেয়, কিন্তু মানুষ মনে করে সে হেদায়াতের পথে আছে। (সুরা যুখরুফ : ৩৬-৩৭)। জিন ও শয়তান একই গোত্রভুক্ত। শয়তানের মতো তারাও সহজে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

আত্মরক্ষায় কোরআনের আমল : জিনের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কোরআনে অনেক আমল রয়েছে। খুব সহজ একটি আমল হলো নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। হজরত হাসান ইবনে আলি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকে। (তাবারানী কাবীর : ২৬৬৭)। আরেকটি সহজ আমল দৈনিক সকাল সন্ধ্যায় তিন কুল পাঠ করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা এক বৃষ্টিমুখর অন্ধকার রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) কে খুঁজতে বের হলাম। যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর নবীজির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বললেন, তুমি কুল পাঠ কর। আমি বললাম কী পাঠ করব? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে। এ সুরাগুলো সব কিছু থেকে তোমার হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে?। (আবু দাউদ : ৫০৮২, তিরমিজি : ৩৫৭৫)।

হাদিসে বর্ণিত আমল : হাদিসে জিনের বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য অনেক আমল বর্ণিত হয়েছে।? হজরত আবান ইবনে উসমান (রা.) বলেন, আমি আমার পিতার জবানে শুনেছি যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়া পাঠ করবে, কোনো ব্যক্তি বা কোনো বস্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। দোয়াটি হলো- ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআস মিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়া হুওয়াস সামিউল আলীম। (তিরমিজি : ৩৩৮৮, আবু দাউদ : ৫০৮৮)। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত তাসবিহ ১০০ বার পাঠ করা। অন্তত ১০ বার করে পাঠ করা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আলা কুলি¬ শাইয়িন কাদির।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে সকালে ১০ বার ওই দোয়াটি বলে এর বিনিময়ে তার আমলনামায় ১০০ নেকি লিখে দেওয়া হয় এবং ১০০ গোনাহ মুছে দেওয়া হয়। আর এ বাক্যগুলো একটি গোলাম আজাদ করার সমতুল্য এবং এর দ্বারা ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে হেফাজত করা হয়। আর সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো বলে তারও অনুরূপ প্রাপ্য হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৮৭১৯)।

রাতে নিরাপদ থাকার আমল : দিনের চেয়ে রাতে জিনেরা বেশি ডিস্টার্ব করে থাকে। তাই রাতে নিরাপদে থাকার জন্য অন্তত তিনটি আমল করা জরুরি। এক. সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ আয়াত পড়বে ওই ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে।

অর্থাৎ জিনের ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি, সকল পেরেশানি ও মুসিবত থেকে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে। (বোখারি : ৪০০৮, মুসলিম : ১৮৭৮)। দুই. ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করে দেবেন এবং কোনো পুরুষ ও নারী জিন শয়তান তার কাছে আসতে পারবে না। (বোখারি : ৫০১০)। তিন. তিন কুলের আমল করা। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) প্রতি রাতে যখন শয্যায় আশ্রয় নিতেন তখন তার দুই অঞ্জলি একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন। সে সময় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউজু বিরাব্বিন্নাস পাঠ করতেন। তারপর উভয় হাত যথাসম্ভব দেহে মুছে দিতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের দিক থেকে তিনি তা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (বোখারি : ৫০১৭)। উপরোক্ত আমল করার পরেও কারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে শরীয়তসম্মত রুকইয়াকারীর শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

লেখক : আলেম ও কবি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত