মোমেন নারীর গুণাবলি

সাদিয়া আক্তার

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

কোরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে মোমেন নারীর বেশকিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণের কথা আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক মোমেন নারীর জীবনে এ গুণগুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ গুণগুলো অর্জনের মাধ্যমে একজন মোমেন নারী পৃথিবীতে যেমন শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারবে, তেমনি আখিরাতেও পাবে সুখময় জান্নাতের ঠিকানা। তার সংস্পর্শে সংসার জীবন হয়ে উঠবে, এক টুকরো জান্নাতের বাগিচা। মোমেন নারীর বৈশিষ্ট্যগুলো কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো।

সতী-সাধ্বী হওয়া : দ্বীনদারী ও সতী-সাধ্বী নেককার হওয়া মোমেন নারীর প্রথম ও প্রধান গুণ। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহতায়ালা ‘ছালিহাতুন’ তথা দ্বীনদার সতী-সাধ্বী গুণের অধিকারী হিসেবে নারীকে উল্লেখ করেন। নেককার নারীদের সম্পর্কে হাদিসে এসেছে হজরত সাওবান (রা:) বর্ণনা করেন, ‘স্বর্ণ-রুপা সম্পর্কিত আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কোন ধরনের মাল সঞ্চয় করব? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে- কৃতজ্ঞ অন্তর, জিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকাণ্ডে সহায়তাকারিনী মোমেনা নারী।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)। আয়াত ও হাদিস থেকে নারী সৎ ও চরিত্রবান হওয়া প্রমাণিত হয়েছে।

লজ্জা ও শালীনতা : লজ্জা ও শালীনতা মানুষের ব্যক্তিত্বের মূলভিত্তি। শালীনতা মোমেন নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে। কোরআনে আল্লাহ একজন নারীর শালীন আচরণের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পায়ে তার কাছে এলো।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের জন্য সজোরে পা না ফেলে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)। আয়াতদ্বয়ে পর্দা ও শালীনতা বজায় রেখে নারীর জীবনযাপনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

চারিত্রিক পবিত্রতা : অশ্লীলতা, অনৈতিকতা ও অমার্জিত আচরণ থেকে বেঁচে থাকা এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় আল্লাহ নারীদের সংযত চলাফেরা, দৃষ্টি অবনত রাখা ও লজ্জাস্থান হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মোমেন নারীকে বলুন, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)। অবৈধ প্রেম, লিভ টুগেদার, জিনাসহ অনৈতিক সব আচরণ থেকে বিরত থাকে মোমেন নারী। সুরা নুরের এ আয়াত থেকে একথা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়।

স্বামীর অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টিকারী : নারীরা হবে তার স্বামীর হৃদয়ের প্রশান্তিদায়ক। ইরশাদ হচ্ছে ‘তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের ভেতর থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রোম : ২১)। প্রকৃত মোমেন ও জান্নাতি নারী তো সে, যার প্রতি স্বামী তাকালে স্বামীর মনজুড়ে যায়। এ জন্য নারীকে হতে হয় প্রতিভক্ত। বৈধ আদেশের আনুগত্যশীল।

স্বামীর প্রতি আনুগত্য : স্বামীর অনুগত হওয়া মোমেন নারীর অন্যতম গুণ। ‘অনুগত’ শব্দটি কোরআনুল কারিমে ‘কানিতাত’ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কোরআনের ভাষায় স্বামীর প্রতি অনুগত নারীদের কানিতাত বলা হয়। হাদিসে এসেছে হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (মুসনাদে আহমাদ)। অন্যত্র হজরত আবু-হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, নারীদের মধ্যে কোনো নারী উত্তম! তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে, তা থেকে বিরত থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)।

দ্বীনদারিতায় সহযোগিতা : একজন মোমেন নারী স্বামীকে দ্বীনদারির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) একবার রাসুলে পাক (সা.)-এর কাছে আবেদন করলেন, আমরা যদি জানতাম কোনো সম্পদ সর্বোত্তম যা আমরা অর্জন করব! তখন রাসূলল্লাহ (সা:) বললেন, ‘সর্বোত্তম সম্পদ হলো, জিকিরকারী জিহ্বা, শোকরগোজার অন্তর এবং মোমেন স্ত্রী, যে তার স্বামীকে তার ঈমানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।’ (তিরমিজি-৩০৯৪)। এ হাদিসে নারীকে পুরুষের কাছে খুব গুরুত্বের জিনিস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সম্পদ অর্জনের জন্য যেমন সাধনা প্রয়োজন, তেমনি উত্তম স্ত্রী পাওয়ার জন্যও পুরুষকে সৎ ও চরিত্রবান হওয়া জরুরি।

 

সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজতকারী : মোমেন নারীর আরেকটি অন্যতম গুণ হলো সতীত্ব ও সম্পদের হেফাজত করা। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেছেন “নিজের সতীত্বের হেফাজত করা এবং স্বামীর (অনুপস্থিতিতে) ধন-সম্পদ হেফাজত করা।” (সুরা নিসা : আয়াত ৩৪) চরিত্র নারীর অলঙ্কার। উপরের আয়াত থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয়েছে। একজন মোমেন নারী যার তার কাছে নিজের সতীত্ব তুলে দিতে পারে না। অশ্লীলতায় গা ভাসিয়ে চলতে পারে না। বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এভাবেই মোমেন নারী নিজের সতীত্বকে রক্ষা করে চলে।

 

গৃহে অবস্থানকারিণী : সচ্চরিত্রা নারীরা গৃহে অবস্থানকারী। তাদের উচিত বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া। যেমন ইরশাদ হচ্ছে। ‘তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান কর। সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলি যুগে প্রদর্শন করা হত।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৩)। আজকাল স্বামীরা থাকে দেশের বাইরে বা জীবনের তাগিদে দূরে। এক্ষেত্রে নারীরা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। এটা কাম্য নয়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া উচিত। আর বের হলে শালীনভাবে বের হওয়া জরুরি।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, ৪র্থ বর্ষ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়