ইসলামে সামাজিক নিরাপত্তার মূলনীতি

শরিফ আহমাদ

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সামাজিক নিরাপত্তা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য প্রয়োজন। এটা ছোট বড় নির্বিশেষে সবার মৌলিক অধিকার। আল্লাহতায়ালা মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ সামাজিক শৃঙ্খলা ছাড়া মানুষের সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব নয়। সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করাও অসম্ভব। এজন্য কোরআনে সামাজিক নিরাপত্তার মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তারা সন্ধির প্রতি ঝুঁকে পড়লে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সুরা আনফাল : ৬১) এ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো।

এক. ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠা : সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ইসলাম মানুষকে পরস্পর ভাই ভাইয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে বলেছে। চলমান হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করার তাগিদ দিয়েছে। এটাই সামাজিক নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেন না, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা রেখো না বরং পরস্পর ভাই হয়ে যাও। (বোখারি : ৪৭৭১)।

দুই. সমাজ? ব্যবস্থার পরিবর্তন : সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন। কোরআন সুন্নাহর আয়নায় সমাজ? পরিচালিত হলে নিরাপত্তা সহজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। খোলাফায়ে রাশেদা ও পরবর্তী যুগের মুসলিম শাসন এটাই প্রমাণিত হয়। মুসলিম শাসনে অন্যান্য নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতকারীদের প্রকৃত মোমেন বলে ঘোষণা করেছে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত মুসলিম সেই, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির সেই, আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করেন। (বোখারি : ৬০৪০)।

তিন. দায়িত্ব সচেতন হওয়া : সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ডুবে থাকা অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতন ও চুরি-ডাকাতি বন্ধ করতে প্রত্যেককে দায়িত্ব সচেতন নাগরিক হতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা করলে হাশরের ময়দানে কঠিন জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (বোখারি : ২৫৫৪)।

চার. নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা : সামাজিক নিরাপত্তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা একান্ত প্রয়োজন। সুরা বাকারার ১২৬ নং আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করার কথা বলা হয়েছে। দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য দোয়া করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আজান ও ইকামাতের সময় দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল?! ওই সময় আমরা কী বলব? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। (তিরমিজি : ৫৩৯৪)

লেখক : কবি ও শিক্ষক