শিশুকেন্দ্রিক ধর্মীয় বিধান
জুনাইদ ইসলাম মাহদি
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলাম সহজ ও সুন্দর ধর্ম। শালীন, সভ্য ও শান্তির ধর্ম। ইসলামের প্রতিটি বিধান মানবের জন্য কল্যাণকর। ইসলামে এমন কিছু বিধান রয়েছে, যা পালনে বান্দার মনে যেমন আনন্দ আসে, তেমনি বিধান পালনেও অনুপ্রাণিত হয়। উৎসব উদযাপন ও ধর্ম পালন দুটোই হয়ে যায় একসঙ্গে মনের খুশিতে ও কিছু প্রাপ্তির আনন্দে। এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য। ইবাদত, আনন্দ ও সভ্যতা মিশেল কিছু ইসলামি বিধানের আলোচনা করা হলো-
নবজাতকের কানে আজান-ইকামত : কোনো দম্পতির কোলজুড়ে নবজাতকের আগমন ঘটলে মা-বাবাসহ আপনজন সবাই নবজাতককে স্বাগত জানায় হৃদয়ের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে। শিশুটি অভিনন্দিত হয় সবার কাছে। মুসলিম শিশু জন্ম থেকেই অধিকার প্রাপ্তির গৌরব লাভ করে। বাবা-মার কাছে জন্মলগ্নেই একটি শিশুর পাওনা হলো, তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত নিশ্চিত করা। এটা মুসলিম সভ্যতা। এ সভ্যতা হাজার বছরের। রাসুল (সা.)-এর আমল দ্বারা এ সভ্যতা প্রমাণিত। উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি বলেন, ফাতেমা (রা.) যখন আলীর ছেলে হাসানকে জন্ম দিলেন, তখন রাসুল (সা.) তার কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন। (আবুদাউদ : ৫১০৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, ফাতেমা (রা.) যখন আলীর ছেলে হাসানকে প্রসব করলেন, তখন রাসুল (সা.) তার ডান কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন এবং বাম কানে ইকামত দিয়েছিলেন। (শুআবুল ইমান : ৮৬২০)।
তাহনিক করা : সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কোনো বুজুর্গ ব্যক্তি নিজ মুখে খেজুর চিবিয়ে তার রস শিশুর মুখে লাগিয়ে দেওয়াকে তাহনিক বলে। ইমাম নববি বলেন তাহনিক করা সুন্নাত। আনাস (রা.) বলেন, আবু তালহা (রা.)-এর পুত্র আবদুল্লাহ যেদিন জন্মগ্রহণ করে, সেদিন আমি তাকে নিয়ে নবী (সা.)-এর নিকট গেলাম। নবী (সা.) তখন আবা পরিহিত অস্থায় তাঁর একটি উটের শরীর মালিশ করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমার সাথে খেজুর আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি কয়েকটি খেজুর তাকে দিলাম। তিনি সেগুলো তার মুখে ভরে চিবালেন, অতঃপর শিশুর মুখ ফাঁক করে তা তার মুখে দিলেন। শিশুটি তা চুষতে লাগল। তখন নবী (সা.) বলেন, খেজুর হলো আনসারদের প্রিয়। তিনি তার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। (আদাবুল মুফরাদ : ১২৬৬, বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)।
আকিকা করা : সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে বা চতুর্দশ (১৪) কিংবা ২১তম দিনে বকরি যবেহ করে নেককার লোক, আত্মীয়স্বজন ও গরিব-মিসকিনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোকে আকিকা বলে। এটা সুন্নাত। সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক। আকিকার মাধ্যমে সন্তানের বালা-মসিবত দূর হয়। হাদিসে এসেছে ছেলে সন্তান হলে তার জন্য দুটি বকরি আর কন্যাসন্তান হলে তার জন্য একটি বকরি যবেহ করে আকিকা করা সুন্নাত। সন্তান জন্মের খুশিতে সাহাবায়ে কেরাম মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াতেন।
মুআবিয়া ইবনে কুররা (রহ.) বলেন, আমার সন্তান ইয়াস জন্মগ্রহণ করলে আমি নবী (সা.)-এর একদল সাহাবীকে দাওয়াত করে আহার করাই। তারা দোয়া করলেন। আমি বললাম, আপনারা দোয়া করেছেন। আল্লাহ আপনাদের দোয়ার অসিলায় আপনাদের বরকত দান করুন। আমিও এখন কতগুলো দোয়া করব এবং আপনারা আমীন বলবেন। রাবী বলেন, আমি তার দ্বীনদারি, জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তার জন্য অনেক দোয়া করলাম। রাবী বলেন, আমি সেদিনের দোয়ার প্রভাব লক্ষ্য করছি। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১২৬৭।)
খতনা করানো : ছেলেদের লিঙ্গের মাথার বর্ধিত চামড়া কেটে ফেলাকে খতনা বলে। এটি ইবরাহিমি সুন্নাত। ইবরাহিম (আ.) সর্বপ্রথম খতনা করেন। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ইবরাহিম (আ.) ৮০ বছরোর্দ্ধ বয়সে খতনা করেন। তিনি কাদূম নামক স্থানে খতনা করেন। ইমাম বোখারি (রহ.) বলেন, ‘কাদুম’ একটি জায়গার নাম। (আল আদাবুল মুফরাদ : ১২৫৬, বোখারি, মুসলিম)।
খতনার উপকারিতা : খতনা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। স্বাস্থ্যগত এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। খতনার সুফল নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস গবেষণা করেছেন। তার সেই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়। তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।