ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টিকটক-রিলস : ব্যত্যয় ঘটছে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠা

খাদিজা বিনতে জহির (সুমাইয়া)
টিকটক-রিলস : ব্যত্যয় ঘটছে শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠা

বাচ্চাকে ‘অবজেক্ট’ বানিয়ে ভিডিও-রিলস তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা এখন অনেকের নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। অনেকে শখের বশে কিংবা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাপল ব্লগ-ফ্যামিলি ব্লগ পরিচালনা করে। মানুষের মনে হাসির খোরাক জোগানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী শালীন বা অশালীন নানান ভঙ্গিতে নিজেদের দর্শকের সামনে উপস্থাপন করে। আবার কেউ কেউ বাচ্চদের নিয়েও ব্লগ করা শুরু করেছে। সোশ্যাল প্লাটফর্মে যদি বাবা-মার খানিকটা ‘ফেসভ্যালু’ থাকে, তাহলে তাদের সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে জন্ম নেয়। বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তাকে টপিক বানিয়ে তৈরি করা ভিডিও থেকে বাবা-মার লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়ে যায়। সন্তানকে মূলধন এবং তার গুণকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হওয়ার এই প্রতিযোগিতায় বলি হয়, সন্তানের সাদামাটা শৈশব! এটা বড়ই বেদনার! চিন্তার ও হতাশার!

ইসলাম কী বলে? : সন্তান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রদত্ত মানুষের জন্য এক স্বর্গীয় উপহার। অন্য আর কোনো অর্জন কিংবা সফলতার সঙ্গে সন্তান নামক এই ‘সম্পত্তির’ তুলনা করা যায় না। কিন্তু বর্তমানে নবজাতক জন্ম নেয়ার পর আঁতুড়ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই তাকে টপিক বানিয়ে তৈরি করা ভিডিও মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে যাচ্ছে। বিভিন্ন মানসিকতার মানুষ সেই ভিডিও দেখছে! ফলাফল হিসেবে নবজাতক বাচ্চাটা বদনজরের স্বীকার হয়। যদিও বদনজরের বিষয়টা অনেকেই ঠুনকো মনে করে থাকে। কিন্তু এটি সাধারণের ধারণার বাইরে মারাত্মক একটি বিষয়। বদনজরের সত্যতা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বদনজর সত্য। তাই খারাপ মানুষের খারাপ দৃষ্টিকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।’ (মুসলিম : ৫৫৯৪; আবু দাউদ : ৩৮৭৯)।আমাদের মধ্যে আরেকটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটা হচ্ছে শুধুমাত্র হিংসার বশবর্তী হয়েই কারো প্রতি বদনজরের প্রভাব পড়ে। কিন্তু না, অনেক ক্ষেত্রে কারো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মনের অজান্তে মানুষ বদনজর দিয়ে ফেলে। তাই মানুষের অজান্তেই নিষ্পাপ-নবজাতক বাচ্চার ওপর বদনজর লাগার আশঙ্কা থাকে বেশি। সাধারণত ছোট শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তারা তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশেষ করে বাবা-মার আচরণ বেশি অনুসরণ করে থাকে। তাই বেড়ে উঠার এই সময়টায় তাদের দ্বীনি তরবিয়তের শিক্ষা দেয়া জরুরি; কিন্তু পরিবারের হাত ধরে বাচ্চাটা একদম ছোট বয়স থেকেই যদি সোশ্যাল মিডিয়ার নীল জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়, তাহলে অল্প অল্প করে দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে শিশুর আত্মিক এবং বাহ্যিক আখলাক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুহাক্কিক আলেমরা বর্তমান এই ফেতনার জামানায় ছোট বাচ্চাদের যেখানে মিডিয়ার সব ধরনের কন্টেন্ট ‘দেখা' থেকে বিরত রাখার অনুরোধ করেছেন, সেখানে তাদের প্রাত্যহিক জীবন নিয়েই কন্টেন্ট বানানো কোনোভাবেই ইসলামি মূল্যবোধ সমর্থিত নয়।

সাইকোলজির দৃষ্টিতে শিশুর ব্লগ : নিজের সন্তান নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রচলন সোসাইটিতে আগেও ছিল। এখন সেটা আরো ডাল-পালা ছড়িয়ে অনলাইন পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাচ্চা দিয়ে অনলাইনে কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে সাইকোলজিক্যাল সমস্যাটা মূলত শুরু হয় একটু বড় হওয়ার পর থেকে। এক-দেড় বছর পর্যন্ত সাধারণত বাচ্চার রেন্ডম কাজগুলোই ভিডিও আকারে পাবলিশড হয়ে যায়। কিন্তু একটু বড় হতে হতে বাবা-মা তখন জোর করে বাচ্চার এক্সট্রা অর্ডিনারি পারফরম্যান্স বের করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হোন। হতে পারে বাচ্চা পারিবারিক পরিবেশে কোনো একটা ছড়া আবৃত্তি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে, কিন্তু সেই একই কাজ জোর করে তাকে দিয়ে ক্যামেরার সামনে করানোটা জুলুম। বাচ্চার প্রতিদিনের কাজগুলো ‘পারফেক্ট’ হিসেবে ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে তার ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার এই বিকৃত প্রতিযোগিতা তার শিশুমনকেও গ্রাস করে। সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটি অন্যতম অংশ হচ্ছে, সমালোচনা। কমেন্ট বক্সে এসব নেতিবাচক মন্তব্য, কটূক্তি স্থায়ীভাবে থেকে যাবে। যা ভবিষ্যতে এই সন্তানের মানসিক অবসাদ সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত