সুস্থ ও সুখে থাকার তিন উপায়
সাঈদ শরিফ
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সুখ-দুঃখ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রাচীনকাল থেকে মানুষ সুখের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে চেয়েছে। সুখের অন্তর্নিহিত রহস্য উদ্ঘাটন করতে সাধনা করেছে। মানুষ সুখ? নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটেছে। সুখের ব্যাখ্যা ও অনুভূতি একেকজনের কাছে একেক রকম হলেও প্রকৃত সুখ স্রষ্টার আনুগত্যের মধ্যে। কোরআনের সুখে থাকার প্রেসক্রিপশন দেয়া হয়েছে?। বর্ণিত হয়েছে, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরগুলো প্রশান্ত হয়। (সুরা রাদ : ২৮) নুমান ইবনে বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি। শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব। (বোখারি : ৫০, মুসলিম: ১৫৯৯) কোরআন সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণে মানুষের জীবন সুস্থ ও সুখের হয়। ধরাবাঁধা নিয়মের বৃত্ত ভেঙে আরো তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সম্পাদন করতে হয়। যা সবাইকে রাখতে পারে প্রাণবন্ত, সুস্থ আর হাসিখুশি।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করা : প্রত্যেক মানুষের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রাত। আল্লাহপাক বলেন, আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাতকে করেছি আবরণস্বরূপ আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য। (সুরা নাবা : ৯১১) রাতে দেরিতে ঘুমানোয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দেরি করা ঠিক নয়। আবু বারজা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইশার আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। (বোখারি : ৫৪১) রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হলে সাতসকালের আজানে এলার্ম ছাড়া ঘুম ভেঙে যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তিদের জন্য রাসুল (সা.) বরকতে দোয়া করেছেন। সাখর গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, হে আল্লাহ তুমি আমার উম্মতের জন্য ভোরের মধ্যে বরকত দান করো। বর্ণনাকারী বলেন, নবী কারিম (সা.) যখন কোথাও ক্ষুদ্র সেনাদল বা বৃহৎ সৈন্যবাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদের দিনের প্রথমাংশে পাঠাতেন। সাখর ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায়ী দলকে দিনের শুরুতেই পাঠিয়ে দিতেন। ফলে তিনি ধনবান হন এবং তার সম্পদ প্রচুর বৃদ্ধি পায়। (তিরমিজি :১২১২)।
নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা : খাওয়া-দাওয়া করা আল্লাহর হুকুম এবং বড় একটি নেয়ামত। সুস্থ সবল শরীরে আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে সাধ্যমত সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন । অপচয় করা ঠিক নয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা আরাফ : ৩১) পরিমিত আহার করাই শরীয়তের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী। ভুরিভোজনে অভ্যস্ত হওয়া কোন মুমিনের শান নয়। এটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। খুব বেশি খেলে শরীর সুস্থ থাকবে এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক নয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেলে তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়। নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে এ শরীর দুর্বল হয়ে যায়। উমর (রা.) বলেন, সাবধান! পেট ভরে পানাহার করবে না। এতে শরীর নষ্ট হয়, অসুখ-বিসুখ দেখা দেয় এবং নামাজে আলস্য লাগে। পরিমিত খাবে। এটাই শরীরের জন্য উপযোগী। তাছাড়া তাতে অপব্যয় থেকেও বাঁচা যায়। খাদ্য গ্রহণে এই মূলনীতি সুস্থ থাকার বড় একটি মাধ্যম। মিকদাম ইবন মাদি কারাব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে, ততটুকু খাদ্য কোনো ব্যক্তির তোলা দূষণীয় নয়। যতটুকু আহার করলে মেরুদণ্ড সোজা রাখা যায়, ততটুকু খাদ্যই কোনো ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এরপরও কোনো ব্যক্তির উপর তার নফস (প্রবৃত্তি) জয়যুক্ত হয় তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ স্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৪৯)।
দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করা : ব্যস্ত জীবনে নিজেকে সময় দেয়ার সময়টাই যেন নেই। সারা দিনের কাজ ও নানা চিন্তাভাবনার পর যেটুকু সময় পাওয়া যায় তাও ভাগাভাগি করতে হয় পরিবার পরিজনের সঙ্গে। মানসিক প্রশান্তি বা একগুঁয়েমি কাটানোর জন্য সময় সুযোগ বের করে দেশ মহাদেশ ভ্রমণ করা প্রয়োজন। ভ্রমণের দ্বারা নানান জাতিগোষ্ঠী ও সমাজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি নৈপুণ্যে দেখে ঈমান বৃদ্ধি পায়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখো কীভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। (সুরা আনকাবুত : ২০) অপরাধ-অপকর্মের কারণে অতীতে অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো তাদের ধ্বংসস্তূপ রয়েছে। ওসবের মধ্যেও শিক্ষা গ্রহণের যথেষ্ট উপকরণ বিদ্যমান। আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকী তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়, তোমরা কি বুঝনা? (সুরা ইউসুফ : ১০৯) ভ্রমণ চিরকাল মানুষের দৈহিক এবং আত্মিক উন্নতি সাধনের জন্য শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা রাখে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ভ্রমণ কর সুস্থ থাকবে, রিজিকে বরকত লাভ করবে। (বায়হাকি : ১৩৫৮৮)।
লেখক : শিক্ষক ও খতিব