পাকিস্তান একটি মুসলিম দেশ। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। এই জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (৯৫-৯৭ শতাংশ) মুসলিম। এছাড়াও এখানে খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে যাদের অনুপাত শতকরা ৩-৫ শতাংশ। মুসলিমদের মধ্যে অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান এবং ৫-২০ শতাংশ শিয়া মুসলিম। দেশটির মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২.২ শতাংশ আহমাদিয়া মতবাদের অনুসারী। ইরানের পরে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সর্বাধিক শিয়া মুসলিম বসবাস করে, এখানে সর্বনিম্ন ১৬.৫ মিলিয়ন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মিলিয়ন শিয়া মুসলিমের বসবাস আবাস।
ঔপনিবেশিক আমল : ভারতীয় অঞ্চলে ঔপনিবেশিক আমলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় যথা: ১. ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামল, ২. ব্রিটিশ সরকারের শাসনামল। তবে পাকিস্তান প্রথম থেকেই ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনে যায়নি। কারণ তখনও এই অঞ্চলে স্বাধীনভাবে রাজারা শাসন করত। তারপর ধীরে ধীরে পাকিস্তান অঞ্চল ব্রিটিশ অধিভুক্ত হয়।
স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা : ১৯৪৭ সালে দখলদার ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হলে তখন এই উপমহাদেশ ধর্মেরভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে এ দুটি দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ), এই রাজ্যগুলো নিয়ে গঠিত হয়। পরবর্তীতে প্রতিবেশী রাজতান্ত্রিক কাশ্মীর রাজ্যের পশ্চিমাংশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধিকারে আসে এবং ১৯৭১ সালে নিজ ভুলের কারণে পূর্ব বাংলা (বাংলাদেশ) হাতছাড়া হয়। অপরদিকে মূলত: হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলো নিয়ে অধুনা ভারত রাষ্ট্রটি গঠিত হয়।
পাকিস্তান আন্দোলন : (তেহরিক-ই-পাকিস্তান) উপমহাদেশে সংঘটিত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হয়ে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিমের চারটি প্রদেশ ও উত্তর পূর্বের বাংলা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠনের জন্য এই আন্দোলন সংঘটিত হয়। আশরাফ আলী থানভীর দুই খলিফা শাব্বির আহমদ উসমানি ও জাফর আহমদ উসমানি এই আন্দোলনের ধর্মীয় সমর্থনের প্রধান ব্যক্তিত্ব।
আন্দোলনের লক্ষ্য : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সমান্তরালে এই আন্দোলন চলে। দুই আন্দোলনের উদ্দেশ্য একই ছিল। তবে পাকিস্তান আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এর ধর্মীয় পরিচয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা।
ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনগুলো : প্রথম সংগঠিত আন্দোলন সৈয়দ আহমদ খান কর্তৃক আলিগড়ে শুরু হয়, যা আলিগড় আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। এটি পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তিস্থাপন করে। ১৯০৬ সালে একটি শিক্ষা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম সংস্কারকরা আন্দোলনকে রাজনৈতিক পর্যায়ে নিয়ে যান। এসময় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতে মুসলিমদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনের পর এটি দার্শনিক আল্লামা ইকবালের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে।
মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর সাংবিধানিক প্রচেষ্টা আন্দোলনের জন্য জনসমর্থন সৃষ্টি করে। উর্দু কবি ইকবাল ও ফয়েজ সাহিত্য, কবিতা ও বক্তৃতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা গঠনে ভূমিকা রাখেন। নারীদের মধ্যে বেগম রানা লিয়াকত আলি খান ও ফাতেমা জিন্নাহ এতে ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তান আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়। পরবর্তীতে ভারত স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ প্রণীত হয় যার আওতায় স্বাধীন ডোমিনিয়ন ভারত ও পাকিস্তান গঠিত হয়।
পাকিস্তান আন্দোলন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক, রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ার ফলাফল স্বরূপ ছিল। প্রতিষ্ঠাতারা এরপর শক্তিশালী সরকার গঠন করতে সচেষ্ট হন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান অংশ পাকিস্তান রাষ্ট্র নামে পরিচিত হয়।