সালাম ইসলামের সৌন্দর্য
হুমায়ুন কবীর
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি হলো সালাম। পরিচিত হোক বা অপরিচিত, পরস্পর দেখা হলেই সালাম দেয়া ইসলামের নিয়ম। সালামকে ইসলামের সর্বোত্তম আমলও বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলামের সর্বোত্তম আমল কোনটি? নবীজি বললেন, মানুষকে খাবার খাওয়ানো, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া।’ (বোখারি : ১২)।
আমরা শুধু আমাদের পরিচিত মানুষ, সম্মানীত ব্যক্তিদের সালাম দিই; এটা ইসলামি শিক্ষা নয়। ইসলামি শিক্ষা হলো, সবাই সবাইকে সালাম দেবে। ছোট হোক বা বড়, পরিচিত হোক বা অপরিচিত, কাউকেই সালাম থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। যে আগে সালাম দেয়, হাদিসে তাকে অহংকারমুক্ত মানুষ বলা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে আগে সালাম দেয়, সে অহংকার থেকে মুক্ত।’ (বায়হাকি : ৮৪০৭)। হাদিসে আগে সালাম দেয়ার আরো ফজিলত বর্ণিত আছে। ‘যে সালামের ক্ষেত্রে অগ্রগামী, সে আল্লাহর নিকট অগ্রবর্তী।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৯৭)। সুতরাং আমাদের জন্য উচিত হলো, পরিচিত হোক বা অপরিচিত, ছোট হোক বা বড়; আমরা সবাইকে আগে সালাম দিব। তাহলে ইনশাআল্লাহ অহংকার থেকে বাঁচতে পারব এবং আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহের ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী হতে পারব।
একজন মুসলিমের উপরে আরেকজন মুসলিমের পাঁচটা হক রয়েছে। তার প্রথমটা হলো- কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেয়া। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের তার ভাইয়ের উপরে পাঁচটি হক রয়েছে। ১. সালামের উত্তর দেয়া। ২. হাঁচির উত্তর দেয়া (হাঁচিদাতা হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)। ৩. দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা।
৪. অসুস্থ হলে সেবা করা। ৫. জানাজায় অংশগ্রহণ করা।’ (মুসলিম : ২১৬২)।
কোরআনের শিক্ষা হলো, যখন কাউকে সালাম দেয়া হবে, তখন সালামের উত্তর উত্তমভাবে দেয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের যখন অভিবাদন জানানো হবে, তখন তোমরা তা অপেক্ষা উত্তম পদ্ধতিতে অথবা অনুরুপ পদ্ধতিতে অভিবাদন জানাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে হিসেব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : ৮৬)। মুফাসসিরগণ বলেছেন, সালাম প্রদানকারী যতটুকু অংশ বলে সালাম দিয়েছে তারচেয়ে বেশি (শব্দ) বলে উত্তর দিলে কোরআনের উল্লেখিত আয়াতের ‘উত্তম অভিবাদন’ শব্দের উপরে আমল হয়ে যাবে। অর্থাৎ কেউ আসসালামু আলাইকুম বললে উত্তরে ওয়া রহমাতুল্লাহ বাড়িয়ে বলা। কেউ ওয়া রহমাতুল্লাহ পর্যন্ত বললে ওয়া বারাকাতুহ পর্যন্ত বলা। কেউ ওয়া বারাকাতুহ পর্যন্ত বললে উত্তরে এ পর্যন্তই বলা। কারণ, হাদিসে এরচেয়ে বেশি সালামের কোনো শব্দ বর্ণিত হয়নি। সালামের প্রচার-প্রসার ঘটানোর ফজিলত হিসেবে হাদিসে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘সালামের প্রচার করো, নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুনানে তিরমিজি : ১৮৫৫)। সালাম শুধু দুনিয়ায় নয়, জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জান্নাতে জান্নাতিদের অভিবাদন হবে সালাম।’ (সুরা আহযাব : ৪৪)। সালামের উত্তরের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় একটা ভুল করে বসি। কেউ সালাম দিলে আমরা হাত বা মাথা নাড়িয়ে অথবা অন্য কোনোভাবে তাকে বুঝায় যে, উত্তর দিয়েছি। এটা উচিত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, সালাম দেয়া সুন্নাত আমল তবে কেউ সালাম দিলে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। এবং এমন শুদ্ধ ও স্পষ্ট আওয়াজে দিতে হবে, যাতে করে যে সালাম দিয়েছে সে যেন শুনতে পারে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি সালাম দেয়ার, সমাজে সালামের প্রচার ঘটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, ঢাকা, মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬