আজকের শিশুই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। প্রতিটি শিশু পরিবার ও রাষ্ট্রের সম্পদ। এই শিশুদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামীদিনের সমাজপতি, বিচারপতি ও রাষ্ট্রনায়ক। প্রতিটি শিশুর মধ্যেই রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা, যা সঠিক যত্ন ও দিক-নির্দেশনায় পরিপুষ্ট ও বিকশিত হতে পারে। শৈশবকালেই মানুষের মানসিক, শারীরিক ও সৃজনশীল প্রতিভার ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই শিশুর প্রতিভা বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। শিশুর প্রতিভা বিকাশে করণীয় সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা নিম্নরূপ :
ভালোবাসা ও স্নেহ প্রদান : শিশুর মানসিক বিকাশে ভালোবাসা ও স্নেহের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুরা যখন পরিবারের লোকদের স্নেহ, ভালোবাসা ও সমর্থন পায়, তখন তারা নিজেদের নিরাপদ ও মূল্যবান মনে করে। এই অনুভূতি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে, যা তাদের সৃজনশীলতা ও প্রতিভার বিকাশে সহায়ক। তাই পিতামাতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য অবশ্যই শিশুদের সঙ্গে স্নেহ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা নিজেদের সমস্যার কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারে।
শেখার উৎসাহ দেয়া : প্রতিভা বিকাশের অন্যতম নিয়ামক হলো জ্ঞান। তাই জ্ঞান ও প্রতিভার বিকাশের জন্য শিশুকে শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। অভিভাবকদের করণীয় হলো- শিশুকে নতুন কিছু শেখার প্রতি উৎসাহিত করা। শিক্ষামূলক বই, খেলনা ও প্রকৃতির মাধ্যমে শিশুদের জ্ঞানঅর্জনের সুযোগ দেয়া বাঞ্ছনীয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়া, সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া, নতুন কিছু দেখা ও শেখার চেষ্টায় বাধা না দেয়া শিশুর প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করা : শিশুর প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকাশের অন্যতম উপায় হলো তাদের সৃজনশীল কাজকর্মে সম্পৃক্ত করা। ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি করা, গল্প লেখা ও হাতের কাজ করার প্রতি শিশুদের আগ্রহ সৃষ্টি করা উচিত। সৃজনশীলতার মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে ও তাদের প্রতিভা নতুনরূপে বিকশিত হয়। অভিভাবকরা তাদের পছন্দমতো সৃজনশীল কাজের সুযোগ করে দিলে শিশুরা সহজেই তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে।
প্রশংসা ও সমর্থন : প্রশংসা শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। শিশুরা যখন তাদের কাজের জন্য প্রশংসিত হয়, তখন তারা আরো ভালো করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। শিশুরা যে কাজই করুক না কেন, তার মধ্যকার ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। এই প্রশংসা ও সমর্থন শিশুর মনের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে, যা তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়।
ভুল থেকে শেখার সুযোগ দান : প্রতিভা বিকাশের পথে ভুল করা স্বাভাবিক। শিশুরা অনেক সময় ভুল করবে, তবে এটি তাদের শেখার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বাবা-মাকে শিশুদের ভুল থেকে শেখার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে আরো ভালো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে। শিশুরা ভুল করার পরও যদি সমর্থন পায়, তাহলে তারা নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খেলার সুযোগ : শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বিশ্রাম ও খেলার গুরুত্ব অসীম। খেলার সময় শিশুদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ থাকে। এ সময় তারা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা প্রতিভা বিকাশে সহায়ক। তাই অভিভাবকদের উচিত শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খেলার সুযোগ দেয়া।
শিশুর প্রতিভা বিকাশ একটি ধীর ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালোবাসা, প্রশংসা, শেখার সুযোগ ও পর্যাপ্ত খেলার সময় দিয়ে শিশুর প্রতিভা বিকাশ করা সম্ভব। অভিভাবকরা যদি এসব ব্যাপারে সচেতন হন, তাহলে শিশুরা তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ ঘটাতে পারবে এবং ভবিষ্যতে একটি মেধাবী প্রজন্ম হিসেবে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।