পরিবার একটি পাঠশালা। একটি শিক্ষালয়। এখানে পরিবারের সদস্যরা দেখে, পড়ে ও শিখে। জীবন গঠনের প্রাথমিক সবক এখান থেকেই গ্রহণ করে। মানুষের জীবন গঠনে একটি আদর্শ পরিবারের অনেক প্রভাব রয়েছে। কেননা, পরিবার হলো মানুষের জন্য ভ্রাম্যমাণ একটি শিক্ষালয়।
প্রত্যেক পরিবারেই একজন অভিভাবক থাকে। থাকে এককজন তত্ত্বাবধায়ক। অভিভাবকের কাজ ও আচরণগুলো অন্য সদস্যদের মাঝে দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। ভালো অভিভাকত্ব ভালো পরিবার গঠন করে। পরিবারকে মজবুতভিত্তি ও একটি দৃঢ় কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। শিক্ষায়, চরিত্র গঠনে, নৈতিকতার পরিমার্জনে এবং জ্ঞান ঈমানের সঙ্গে সুরক্ষিত একটি প্রজন্ম প্রস্তুত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
অভিভাবকত্ব শরিয়ত প্রদত্ত একটি আমানত : অভিভাবকত্ব এমন একটি ক্ষমতা, যা স্বামীকে পরিবারের বিষয়গুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার দেয়। ফলে তিনি পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক এবং তিনি এর যত্ন ও সংরক্ষণ করেন। পরিবারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য যত্নের বিষয়ে সচেষ্ট থাকেন। এই অভিভাবকত্ব পুরুষের জন্য সম্মানের, এটা গুরুদায়িত্বও বটে। এটা শরিয়ত প্রদত্ত একটি আমানত। মহান আল্লাহ বলেছেন, পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। (সুরা নিসা : ৩৪)। আদর্শ পরিবার গঠনে একজন স্বামীর যেমন অবদান রয়েছে, তেমনিভাবে একজন স্ত্রীরও ভূমিকা রয়েছে, যা অন্য কেউ পূরণ করতে পারে না। তিনি শিষ্টাচার শিক্ষাদাতা, উপদেশদাতা ও বিজ্ঞ মতামত প্রদানকারী। তিনি স্বামীর জন্য শক্তিশালী অবলম্বন।
অভিভাবকের গুণাবলি : একটি পরিবারের মূল গার্ডিয়ানশিপ পুরুষের হাতেই ন্যস্ত থাকবে। আর সে ক্ষেত্রে পুরুষকে অর্জন করতে হবে বেশ কিছু যোগ্যতা, যা সুচারুরূপে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা দেবে। আদর্শিক উচ্চতার শীর্ষ চূড়ায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তার বিশেষ কিছু গুণ থাকা দরকার। নিচে উল্লেখ করা গুণাবলি অর্জন করা একজন অভিভাবকের জন্য খুবই জরুরি।
এক. নিজের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আদর্শের প্রতিফলন ঘটানো : একজন অভিভাবক তার পরিবার ও ছেলেমেয়ের তালিমণ্ডতরবিয়ত ও আখলাক চরিত্রের প্রহরী। আর যিনি প্রহরী তিনি নিজেই যদি আদর্শচ্যুত হন তবে অন্যদের শেখাবেন কী। আপনি যদি নিজেই কোন অপরাধ বা অন্যায় কাজে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, আর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপদেশ দেন, তোমরা তা করো না; কেননা তা ক্ষতিকর, তাহলে আপনার উপদেশ ধূম্রের মতো বাতাসে উড়ে যাবে। যাদের উপদেশ দিচ্ছেন তাদের মাঝে কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না। সে হিসেবে একজন সফল অভিভাবকের জন্য আদর্শের উপর অটল থাকা একটি অপরিহার্য গুণ। যা ব্যতিত সে সফল অভিভাবক হতে পারবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা তোমরা কর না। (সুরা সফ : ২)।
দুই. সন্তানকে দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়া : প্রতিটি মুসলিম পরিবারের জানা থাকা উচিত, আমাদের আসল পরিচয় আমরা মুসলমান। আমাদের মূল ঠিকানা ও আসল গন্তব্য পরকাল। সুতরাং পার্থিব চাহিদা, ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যের অভিলাষ এবং তথাকথিত আধুনিকতার স্রোতে আমরা যেন আমাদের পরিচয় ভুলে না যাই। তাই প্রত্যেক পিতা-মাতার আবশ্যিক কর্তব্য হবে তাদের সন্তানদের দ্বীন ও ঈমান রক্ষা করা। তাদের অন্তরে আল্লাহতায়ালার পরিচয় গেঁথে দেয়া। তাওহিদ ও রিসালাতের বিশ্বাস তাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল করা। কারণ সন্তান হয়ত প্রত্যাশামত দুনিয়ার সব কিছুই পেল। ভোগ-বিলাস ও আরামণ্ডআয়েশের সব উপকরণই অর্জন করল। কিন্তু সে আল্লাহকে পেল না, পরকাল চিনল না, মনে রাখতে হবে সে কিছুই পেল না।
মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবন মাজাহ) হজরত আলী (রা.) বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদের কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কোরআনের জ্ঞান দাও। (জামিউল কাবীর)।
তিন. স্নেহ ভালোবাসা প্রকাশ করা : প্রতিটি মা-বাবাই তাদের সন্তানকে ভালোবাসেন। হয়তো প্রকাশ ভঙ্গির ভিন্নতা থাকে। একজন সন্তানের সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য মা-বাবার স্নেহ মমতা অপরিহার্য। তাই অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। দেখাতে হবে যে একজন সন্তানের জন্য তাদের ভালোবাসা অতুলনীয়। নবীজি (সা.) তাঁর সন্তানকে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি তাঁর নাতিদেরও ভালোবাসতেন। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, এক রাতে আমার কোনো প্রয়োজনে নবী (সা.) এর কাছে গেলাম। নবী (সা.) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল, যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার প্রয়োজন সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কী? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেল তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রা.)। তিনি বলেন, এরা দুজন আমার পৌত্র (দৌহিত্র) এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ, আমি এদের দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমি তাদের ভালোবাসো এবং যে ব্যক্তি এদের ভালোবাসবে, তুমি তাদেরও ভালোবাসো। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৬৯)।
চার. বাচ্চাকে প্রশংসা করা : আদর্শ অভিভাবকত্বের অন্যতম গুণ হলো প্রয়োজনমাফিক বাচ্চার প্রশংসা করা। যে কোন কাজের ক্ষেত্রে সন্তানকে প্রশংসা করুন। এতে তার মাঝে ইতিবাচক আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা তৈরি হবে, যা তার বেড়ে উঠার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রশংসা শুধু আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে তা নয়, আপনি যখন তার কাজের প্রশংসা করবেন, তখন শিশু বুঝতে পারবে সেই কাজটা করা উচিত। আবার সেই রকমের কোনও কাজ করলে আপনি আবার ভালো বলবেন, সেটাও বুঝতে শিখবে। এইভাবে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল এই সম্পর্কেও তার মনে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, তার ভালো-মন্দ সম্পর্কে কতটা খেয়াল রাখেন, এই মেসেজটাও শিশুর ছোট মনে অনেকটা প্রভাব ফেলে। ছোট হলেও তারা বুঝতে পারে, আপনি তার দিকে খেয়াল রাখছেন। একটু যত্নের ছোঁয়া আর আন্তরিকতা, তাতেই শিশুর মন আনন্দে ভরে উঠবে।
পাঁচ. সন্তানকে ভালো ও সুন্দর উপদেশ দেয়া : শিশুর মাঝে সৎ স্বভাব জাগ্রত করতে অভিভাবকের সন্তানকে বলা উচিত : সত্য কথা বলো, আল্লাহ খুশি হবেন। মানুষের খেদমত করো, আল্লাহ খুশি হয়ে জান্নাত দান করবেন।
মন্দ স্বভাব থেকে পবিত্র করার ক্ষেত্রে বলা উচিত : মিথ্যা বল না, কারণ আল্লাহ মিথ্যুককে পছন্দ করেন না। ঝগড়া-বিবাদ কোরো না, তাহলে আল্লাহ নারাজ হবেন। সন্তান কোনো ভালো কাজ করলে, তাকে বলতে হবে, মাশাআল্লাহ, তুমি একটা ভালো কাজ করেছ। আল্লাহ তোমার প্রতি অনেক খুশি হয়েছেন; যারা ভালো কাজ করে আল্লাহ তাদের খুব ভালোবাসেন। কোনো মন্দ কিছু করলে বলতে হবে, এমন আর করবে না, এতে আল্লাহ তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন।
এভাবে তার মনে আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা সৃষ্টির চেষ্টা করা। তাহলে আশা করা যায়, সন্তান খাঁটি মোমেন ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
ছয়. নিজের মাঝে আদর-শাসনের সমন্বয় ঘটানো : শাসনের নামে অযথা বাড়াবাড়ি এবং মারপিট করা যাবে না। আগে মায়া-মুহাব্বতের সাথে তাদের বুঝাতে হবে। রাসুল (সা.) কোনো শিশুকে কোনো দিন মারধর করেননি। বেশির বেশি তিনি হালকাভাবে কান মলা দিয়ে দিতেন। এমনকি জিহাদের ময়দান ছাড়া তিনি তার নিজ হাতে কাউকে প্রহার করেননি। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তার হাত দিয়ে কাউকে কখনো প্রহার করেননি। না কোনো নারীকে, না খাদেমকে। হ্যাঁ, যদি তিনি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে থাকতেন, (তবে ভিন্ন কথা)। (মুসলিম, হাদিস : ৪২৬৯)।
তাই শিশুকে আদব শেখানো প্রহারের আশ্রয় ছাড়াই সম্পন্ন হওয়া উচিত। হিকমত-প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, পরিণতি-চিন্তা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে শিশুকে আদব শেখানোর উত্তম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কখনো প্রয়োজন হলে তাদের হালকাভাবে প্রহার করতে হবে। এ ভাবনা ও গুণ একজন অভিভাবকের মাঝে থাকা উচিত।
সাত. সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা : অভিভাবককে বিবেচক হতে হবে। যা মাথায় আসে তাই করা যাবে না। আবেগের মাথায় হুট করে একটা কিছু করে ফেললেই হবে না। তাকে যথেষ্ট পরিমাণ সহিষ্ণু হতে হবে। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় গুণ। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) জনৈক সাহাবিকে বলেছেন, তোমার মধ্যে এ দুটি গুণ রয়েছে, যা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় : সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা। (মুসলিম : ১৭)।
আট. দয়া ও কোমলতা প্রদর্শন : কোমলতা ও নম্রতাকে মোমেনের অপরিহার্য গুণ বিবেচনা করে ইসলাম। কারণ একজন মানুষের মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত বিনয়, নম্রতা ও কোমলতা না থাকবে, ততক্ষণ সে অন্যকে নিজের কাছে টানতে পারবে না। অন্যকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিনয়, নম্রতা ও কোমলতা অপরিহার্য শর্ত। এ কারণেই মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে কোমল ও নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’। (সুরা ফোরকান : ৬৩)।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা নিজে কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না। (মুসলিম :২৫৯৩)।
নয়. রাগ বর্জন করা : একজন সফল অভিভাবকের অন্যতম একটি গুণ হলো রাগ থেকে দূরে থেকে ঠান্ডা মাথায় কার্যবিধি পরিচালনা করা। কেননা- রাগ, উন্মত্ততা ও একঘেয়েমি আদব শেখানোর ক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক গুণ। সামাজিকভাবেও তা অনাকাঙ্ক্ষিত একটি অভ্যাস। মানুষ যদি তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, হজম করতে পারে, তবে তা নিজের জন্য ও সন্তানদের জন্য বয়ে আনবে কল্যাণ। এর উল্টো হলে ফলাফলও হবে বিপরীত। কেননা, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ সংবরণকে আসল বীরত্ব বলে আখ্যায়িত করেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে এক বর্ণনায় এসেছে, নবী কারিম (সা.) বলেন, বীর-বাহাদুর সে নয় যে কুস্তিতে অন্যকে পরাজিত করতে পারে। বরং বীর-বাহাদুর সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। (বুখারি ও মুসলিম)।
দশ. মধ্যপন্থা অবলম্বন : পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনব্যবস্থা এবং ধর্মীয় বিধিবিধান বাস্তবায়নে ইসলাম মধ্যপন্থি আচরণের প্রতি উৎসাহিত করে। সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি সম্প্রীতিপূর্ণ ব্যবহার এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে ইসলাম সমর্থন করে। ক্ষমা, উদারতা ও নৈতিক আদর্শের মাধ্যমে এ ধর্ম বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। জীবনযাত্রা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা বাকারা : ১৯০)।
এগারো. সন্তানকে সময় ও সঙ্গদান : ব্যস্ত শিডিউলের মাঝেও সময় বের করে বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া। খোলাখুলি কথা বলা। তার পছন্দণ্ডঅপছন্দের গুরুত্ব দেয়া। একাধিক বাচ্চা হলে তাদের সবাইকে সমান গুরুত্ব দেয়া এবং একত্রে সময় কাটানো। শিশুদের সাথে কখনোই বৈষম্যমূলক আচরণ না করা। তার ব্যক্তিগঠন, আখলাক-চরিত্র নির্মাণ ও মানবিকতা বিকাশের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন। এই জিনিসের আজ বড় আকাল অথচ এটাই মানুষের আসল সম্পদ। এ সম্পদে নিজ সন্তানকে বলিষ্ঠ করতে হলে বালক বয়সেই তার হাত ধরতে হবে। যদি হাত ধরার বয়স থেকে আমরা তাদের ঠিকভাবে সঙ্গদান করি, তাহলে লেখাপড়ার পথে চলা তাদের জন্য খুব সহজ হয়ে যাবে। অভিভাবক সন্তানকে সময় দিলে সে শক্তি-সাহস পাবে। উদ্যমণ্ডউদ্দীপনা পাবে। অগ্রগামিতার প্রেরণা পাবে। বাধা-বিপত্তি ও ক্ষতিকর পরিপার্শ্ব অপসৃত হয়ে যাবে।
বারো : গোনাহমুক্ত পরিবেশ গঠন : একজন সফল অভিভাবকের অন্যতম গুণ হলো গুনাহমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। পরিবারের সবাইকে গুনাহমুক্ত জীবন গঠনের জন্য তাগিদ দেওয়া। উৎসাহ দেওয়া। সন্তানদের গুনাহে জড়িয়ে যাওয়ার আগেই বিয়ের ব্যবস্থা করা। ঘরে বাইরে পর্দার বিষয়ে সর্তক থাকা। সবার প্রাপ্য হক আদায়ের বিষয়ে সবাইকে মানসিকভাবে তৈরি করা। হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
উপরে বর্ণিত গুণগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে কারও মধ্যে পাওয়া গেলেই কেবল অভিভাকত্বের ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের আশা করা যেতে পারে। তাই একজন সফল অভিভাবক হতে হলে অবশ্যই তাকে এই গুণগুলো অর্জন করতে হবে। পরিবার পরিচালনায় গ্রহণ করতে হবে মধ্যমপন্থা। কাজেই একজন অভিভাবককে তার পোষ্যের লালন-পালনের ক্ষেত্রে এই গুণগুলো অবলম্বন করা অবশ্যই জরুরি।
লেখক : শিক্ষক, মাদ্রাসা আশরাফুল মাদারিস, তেজগাঁও ঢাকা