মানুষ হিসেবে আমরা স্বপ্ন ও প্রত্যাশাহীন নই। আমাদের জীবন নিয়ে যেমন স্বপ্ন আছে, তেমনই স্বপ্ন আছে দেশ নিয়েও। আমরা জীবনকে দেখতে চাই নির্মল ও আনন্দময়। দেখতে চাই সুখময় ও সমৃদ্ধ ঐশ্বর্যে ভরপুর। ঠিক সেইভাবে নিজের দেশটাকেও সুখী ও সমৃদ্ধ দেখতে চাই। একটা কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে উঠার হিসেবে আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাধীনতা-পরবর্তী বহু সরকার ও বহু উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে আমাদের ছোট্ট এই দেশটির পথচলা। কিন্তু কখনোই একটি দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে মানচিত্রের বাইরে মাথা উঁচু করে নিজেদের জানান দিতে পারিনি। আকণ্ঠ দুর্নীতি আর অবাধ ঘুষ আমাদের স্বাধীনতার সত্য ও সৌন্দর্যকে করেছে ম্লান। ফলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলো কয়েকটি কীওয়ার্ডের মাধ্যমে আলোচনা করবো আজকের এই নিবন্ধে।
রাজনীতি প্রশ্নে বাংলাদেশ, রাষ্ট্র ও সরকার প্রশ্নে বাংলাদেশ, ইসলাম ও মুসলিম প্রশ্নে বাংলাদেশ, মৌলিক অধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ ও বৈদেশিক সম্পর্ক প্রশ্নে বাংলাদেশ।
রাজনীতি প্রশ্নে বাংলাদেশ : আমরা একটু বুঝে ওঠার পর থেকে দেখছি এখানে রাজনীতি মানেই মিটিং, মিছিল, হরতাল, অবরোধ, আন্দোলন, ক্ষমতা, নির্বাচন, সংসদ, দোষারোপ, জেদাজেদি, দল-দলান্ধতা এইসব। হামলা-মামলা, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, মায়ের কোলখালি হওয়া। জনপ্রতিনিধিদের প্রতি মানুষের সর্বোচ্চ নেগেটিভ ধারণা; এরপরেও সেই জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন। কোন ভালো মানুষ অথবা কোন আলেম জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে মানুষ নিরুৎসাহিত করেন। বলেন, ‘জায়গাটা ভালো না। কেনো যাবেন। যেই যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।’ যতো ভালোই করেন মানুষ ডাকবে চোর-ই। এইসব ধ্যান-ধারণা থেকেই ‘আই হেইট পলিটিক্স টার্ম ও জেনারেশনের উৎপত্তি। এরপর ইন্টারনেটের যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যস্ততা, মাল্টিমিডিয়া ব্যবস্থা ও আউটসোর্সিংয়ের ব্যবস্থায় তারুণ্য প্রায় রাজনীতি বিমুখ হতে থাকে। যে কোনো সংক্ষুব্ধতাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েই নিরসন হয়ে গেছে ভাবতে থাকে তারুণ্য। কিন্তু এভাবে কতোদিন! তারুণ্য জাগে। সংগঠিত হয় জুলাই অভ্যুত্থান। যেহেতু একটা নতুন সময়ে আমরা প্রবেশ করেছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের প্রচল রাজনীতি দেখে আসছি। সেই রাজনীতির সব ধরনের নেতিবাচকতার শিকার আমরা হয়েছি। সুতরাং এখন আমাদের সময় এসেছে নয়া রাজনীতি ও নয়া ইশতেহারের। সময় এসেছে গণমানুষের প্রত্যাশার রাজনীতির।
গণমানুষের প্রত্যাশা : আমরা চাই আমাদের রাজনীতি দেশ-জাতি গঠনের জন্য হোক। গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন হোক রাজনীতিতে। এখানে যে দল ক্ষমতা পায় সেই দল ছাড়া আর কেউ অধিকার পাবে না। আর কেউ কথা বলবে না। রাজনীতি যেনো চর দখলের লড়াই। এমন চিন্তা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হবে এই প্রত্যাশা। এটা বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি, চিন্তা, জীবন-যাপন, কৃষি আর শ্রমের প্রতি লক্ষ্য রেখে একটা নিজস্ব রাজনৈতিক কালচার জরুরি। কোন ধার করা তন্ত্র-মন্ত্র-ইজমের রাজনীতি না। নীতি আদর্শ আর আমাদের সামাজিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে নেতৃত্বে আসুক আগামী নেতৃবৃন্দ। এই ভাটি বাংলার মানুষবান্ধব রাজনীতি আমাদের একান্ত কামনা। যেখানে রাজনীতি হবে একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। রাজনীতি করলেই ‘টাকা আর ক্ষমতা’ এই ন্যারেটিভ ধ্বংস হোক চিরতরে।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : আমাদের রাজনীতির বদলের জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জরুরি। আমরা কেমন রাজনীতি করবো! এই অঞ্চলের মানুষের রাজনীতিটা কেমন হবে! এই রাজনীতিটা কাদের জন্য হবে! এই প্রশ্নের মীমাংসা করেই রাজনীতিটা করা দরকার আমাদের। আগামীর বাংলাদেশ একটা অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিতামূলক রাজনীতির সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হবে এই প্রত্যাশা রাখি। মানুষের জন্য করা রাজনীতির রাজনীতিক যেনো মানুষের জন্য ফ্রঙ্কেস্টাইন হয়ে না যায়। নেতা যেনো মুনিব না হয়। নাগরিক যেনো দাস না হয়ে যায়।
এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলিম। তাদের জীবনে প্রতিফলিত হবে ইসলামের আমানতদারিতার সুমহান আদর্শ। নাগরিক থেকে শুরু করে নেতা, জনপ্রতিনিধি, সংসদ, আদালত, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ দেশের প্রতিটি অংশ নৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত হবে। সুদ, ঘুষ ও দুর্নীতিকে স্থায়ীভাবে এই দেশ থেকে বিদায় করবে। কেউ যেনো স্বপ্নেও এইসবের কথা কল্পনা করতে না পারে। কোন পিয়ন যেনো শতোকোটির মালিক না হতে পারে দুর্নীতির মাধ্যমে। শেয়ার বাজার ও ব্যাংকগুলো যেনো কোন লুটেরার কাছে ইজারা দেয়া না হয়। রাস্তায় চলতে গিয়ে অটো, সিএনজিসহ কোন বাহনকেই যেনো ভিট, পৌর, জিপি ট্যাক্স নামক দৈনন্দিন চান্দা দিতে না হয়। পলিটিক্যাল অথর্বদের পুনর্বাসনে যেনো সাধারণ দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণি শোষিত না হয়। এইসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের সর্বদলীয় ও সর্বসম্মতি ক্রমে একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। এখনই জরুরি।
রাজনীতির ব্রিটিশ উত্তরাধিকার: রাজনীতি কোনো আলাদীনের প্রদীপ না হোক। এই জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কারসহ আমলাকেন্দ্রীক ব্রিটিশ উত্তরাধিকারের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি। নানাবিধ পুরোনো ধ্যান-ধারণা বদলে নতুনভাবে ভাবার সুযোগ তৈরি করতে হবে। যেমন এই ডিজিটাল যুগে একজন চাকরি প্রার্থীর ছবি ও ডকুমেন্ট একজন গেজেটেড অফিসার সত্যায়ন করেন। এটা শুধুই সময় অপচয় এবং মানুষকে বিরক্ত করা। একজন মানুষকে শনাক্ত করার আধুনিক যতো উপায় আছে এর মধ্যে (দূরতম কোন সম্পর্কহীন) একজন মানুষের স্বাক্ষর কোনোভাবেই যৌক্তিক পদ্ধতি না। এইসব আমলাতান্ত্রিকতামুক্ত একটা বাংলাদেশ হবে এই প্রত্যাশা আমাদের। ব্যক্তিকে শনাক্ত করার ডিজিটাল প্রযুক্তি যেন ব্যবহার করা হয়। বায়োমেট্রিক্সকে যেন কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করা হয় আগামীর দিনগুলোতে। যে কোনো আবেদন ও নথিপত্রের কাজে সফট কপির সঙ্গে সঙ্গে হার্ড কপি কুরিয়ার করার রীতি বন্ধ হোক। দেশির বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ‘পোয়াবারোর’ জন্য ডাক বিভাগকে অথর্ব ও অকেজো করে রাখার পদ্ধতি থেকে উত্তরণ করে ডাক বিভাগকে আধুনিকায়ন করে গণমানুষের জন্য উপকারি করে তুলতে হবে।
দলীয় অন্ধত্ব : দলীয় রাজনীতির অন্ধ অনুকরণভিত্তিক রাজনীতির অবগুণ্ঠন ভেঙে অধিকার, চাহিদা ও কর্তৃত্ব কেন্দ্রিক অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এখন জরুরী। সেইটে কেমন; আমরা উমর রা: এর জামার ঘটনাটি এই ক্ষেত্রে স্মরণ করতে পারি।
অর্ধেক জাহানের শাসক। মসজিদে খুতবা দিচ্ছেন। গায়ে বাইতুল মালের দেয়া কাপড়ের জামা। অথচ প্রত্যেকের ভাগে যেটুকু কাপড় মিলেছে তাতে একজনের জামা হয় না। উমরের (রা:) কীভাবে হলো? মসজিদে মুসল্লি সরাসরি খলিফাকে প্রশ্ন করেছেন। খলিফা উত্তর দিয়েছেন। পুত্র ও বাবার কাপড় মিলিয়ে জামা হয়েছে। অথচ আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কোটি কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন। কেউ কথা বলতে পারেননি। প্রতিটা গণমাধ্যমের মুখ সেলাই করা ছিল।
কেউ কেউ স্বার্থের ধান্ধায় নিজেরাই নিজেদের মুখ সেলাই করে নিয়েছিল। আমাদের এ দেশের জন্য একটা সাসটেইনেবল পলিটিক্যাল এনভাইরনমেন্ট খুব জরুরি। এতে করে টেকসই উন্নয়ন সম্ভবপর হয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। দেশ এগিয়ে যায়। না হলে প্রত্যে সরকারকেই নতুন করে শুরু করতে হয়। এই নতুন করে শুরুর সংস্কৃতি দ্রুত বদলে যাবে এই আশাবাদ করছি। সামাজিক রাজনীতিকে একটা মজবুতভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। যেখানে মানুষ নিজেদের কাজগুলো নিজেরা দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে করবে। সমাজগুলো ও পঞ্চায়েতগুলো সক্রীয় হয়ে উঠলে উঠতি তরুণদের বখে যাওয়া, জুয়া, ড্রাগে অভ্যস্ত হয়ে ধ্বংস হওয়াটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রাষ্ট্র ও সরকার প্রশ্নে বাংলাদেশ : রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ একটা গণমুখী উদার এবং মানবিক রাষ্ট্র হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের নাগরিক অধিকারগুলো নিয়ে কাজ করবে। এখন যেইটে হয়; দুর্গাপুজোর সময় রাষ্ট্র তৎপর থাকে খুব। প্রণোদনাসহ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগানকে প্রমোট করে। কিন্তু ঈদে পরিবহণ মাফিয়াকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যেনো বা ঈদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্ক রাষ্ট্রের সম্পর্ক নেই। এইসব ছোট কিন্তু অপরাধ হিসেবে বড় ঘটনাগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডল করতে হবে রাষ্ট্র ও রাজনীতির মাধ্যমেই।
রাষ্ট্রের আদর্শ : আমাদের কোনো যথার্থ রাষ্ট্রীয় আদর্শ নেই। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহ মূলত রাজনৈতিক সুবিধা ও ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনের কারণে দলগুলো টিকিয়ে রাখছে। কোন আদর্শিক অথবা ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে নয়। আগামীর বাংলাদেশ আদর্শিক চরিত্রে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও চরিত্র ধারণ করবে এই চাওয়াটা আমাদের অন্যতম চাওয়া। বিদেশের একজন মানুষ এই দেশ সফর করে গিয়ে যেনো বলতে পারে বাংলাদেশি মানুষের মধ্যে একটা আদর্শ দেখেছি। তারা যেন আমাদের চরিত্র, ব্যবহার এবং লেনদেন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে না পারে।
রাষ্ট্রের মূল্যবোধ : মূল্যবোধ জায়গায় আমাদের বিশেষ কোনো চর্চা নেই। একটা গণমূল্যবোধ তৈরি হোক আমাদের। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানুষ হিসেবে আমাদের যদি বাইরের কেউ চিত্রিত করতে চান তাহলে ইতিবাচক রঙে চিত্রিত করতে পারবেন না অনেক ক্ষেত্রেই। বলা হয় আমরা সুযোগের অভাবে সৎ। এমন অভিযোগ চাইলেই দূর করা সম্ভব। রাষ্ট্র, সরকার, দল, নেতা সবাই মিলে যদি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্যাম্পেইন শুরু করা যায় তাহলে আমরা এর একটা বিহিত অবশ্যই করতে পারব।
সরকার : আমাদের সরকার ব্যবস্থায় যে দলীয় অন্ধত্ব আছে তা দূর করা অপরিহার্য। যখন যে দল ক্ষমতায় তখন সে দলের বাইরে সবাই যেন বহিরাগত। এসব সংস্কৃতি থেকে দেশ বের হবে এই প্রত্যাশা আমাদের।
আইন, বিচার, পুলিশসহ যে ধরনের দলীয়করণের চর্চা আছে এগুলো জারি থাকলে কখনোই আমরা একটা কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে সুশাসন জারি করতে পারবো না। দেশের টপ টু বটম একটা দলের লেজুড়বৃত্তির চক্রে যখন আটকে যায় তখন পুরো দেশের অন্যান্য সকল পক্ষ রীতিমত নাই হয়ে যায়। আর দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষকে বঞ্চিত রেখে কখনোই একটা দেশ সফল ও উন্নত হতে পারে না। একক দলীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা দরকার। ভোটের প্রাপ্তির অনুপাতে সংসদীয় আসন প্রাপ্তির ভিত্তিতে একটা সরকার হলে আশা করা যায় সংকট থেকে বের হওয়া যাবে। একজন প্রার্থী মোট ভোটের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ ভোট পেয়ে পাস করেন। অথচ প্রায় ৬০ ভাগ ভোট তার বিপক্ষে। এটা কেমন গণতন্ত্র? ষাট ভাগের বিরোধিতার কোনো মূল্যই তো নেই এখানে!
পুলিশের রিফর্মেশন : একটা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় উপাদান পুলিশ। পুলিশ ছাড়া আধুনিক রাষ্ট্রে শৃঙ্খলার কথা কল্পনাই করা যায় না। অথচ বাংলাদেশের পুলিশ নিজেই একটা বিশৃঙ্খলার উদাহরণ। ঘুষ, মিথ্যা মামলা, দখল, অবদমন ইত্যাদি কাণ্ডে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজির, হারুন, বিপ্লব কুমারসহ অনেকের আমলনামা আমাদের সামনে এখন। এর আগেও ওসি আকরামের কথা আমরা খবরে দেখেছি। পুলিশ মানেই টাকার গাছ। এই ন্যারেটিভ সমাজে প্রবাদতুল্য হয়ে আছে। ফলে পুলিশ নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। পুলিশকে নৈতিক আদর্শে উজ্জীবিত করে সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে পুলিশের পুরো চেইন অব কমা- বদলে দিতে হবে। কমান্ডিং সিস্টেমে ব্যাপক রদবদল করা জরুরি।
অধিকাংশ পুলিশকেই দেখা যায় আনফিট এবং স্থূল। ফলে একটা নিয়মিত বাহিনী হিসেবে তাদের আরও বেশি স্বাস্থ্য সচেতনতা জরুরি। দৈনিক ট্রেইনিং ও শরীর চর্চা বাধ্যতামূলক করা জরুরি। প্রতিটা ইউনিট বা প্লাটুনে তাদের ধর্মীয় নীতি ও আদর্শ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হলে হয়তো ভালো ফলাফল আশা করা যেতে পারে। একজন সেনা অফিসারের জন্য যেমন পাইপলাইন হিসেবে ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণি থেকে ভর্তি নিয়ে একজন মানুষকে তৈরি করা হয়; তেমনইভাবে পুলিশের জন্যও স্পেশাল রিক্রুটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যারা পুলিশ হতে আগ্রহী তাদের একটা যাচাই ও বাছাই প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট বয়েসেই আলাদা করে দেশপ্রেমিক, আদর্শিক, নৈতিক ও সক্ষম নেতৃত্বের জন্য তৈরি করা যেতে পারে।
ইসলাম ও মুসলিম প্রশ্নে বাংলাদেশ : পৃথিবীকে ইসলামের কাছেই ফিরে আসতে হবে। এই আদর্শ ছাড়া মানুষের আসলে মুক্তি নেই। আর মুসলিমদের জন্য ইসলামের চেয়ে বড় আদর্শ নিয়ে ভাবার কোন সুযোগই নেই। একটা সরকার ব্যবস্থা প্রায় ৮৮ ভাগ মুসলমানের নেতৃত্ব দেবে সেখানে ইসলাম কোথায়? ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া অবদমনমূলক আইন কানুনে একটা জাতিকে শাসন করা খুব ভালো কিছুর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে না। শাসন করা হচ্ছে মুসলিমদের আর আইন নেওয়া হচ্ছে খ্রিষ্টানদের। কীভাবে? ইংরেজদের তৈরি করা আইন আদালত মূলত খ্রিষ্ট-ধর্মের প্রেরণা থেকেই। তারা যতোই নিজেদের সেক্যুলার বলুক; দিনশেষে তারা খ্রিষ্টান।
আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের হীনমন্যতাবোধ নেই। যেইটে এই দেশের বহু চিন্তক, রাজনীতিক আর বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আছে। সুতরাং শুধু রাষ্ট্র ধর্ম আর বিসমিল্লাহ নয়; রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ প্রতিফলিত হবে এই প্রত্যাশা। এখানে কেউ শুধু ধার্মিক হওয়ার কারণে অথবা ইসলামি শাসন ও খিলাফতের প্রচেষ্টার কারণে যেনো আর কোনদিন গুম না হয়। কাউকে যেনো তুলে নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে গ্রেফতার নাটক করা না হয়। দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে যেনো ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান্য থাকে।
মৌলিক অধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ
শিক্ষা : বহুধারার শিক্ষায় সমন্বয় হোক খুব দ্রুত। এইসব শিক্ষাধারার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব সুপিরিয়র ও ইনফেরিয়র কমপ্লেক্স তৈরি হয়; তাতে করে এই দেশ সবসময়ই একটা অসম্পর্কের চক্রে ঘুরতে থাকে। সামাজিক ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সম্ভাবনাগুলোকে আশরাফ-আতরাফ চৈতন্য একেবারেই ঠুনকো করে তোলে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু ধর্ম পালনের জন্য কেউ হ্যারাসমেন্ট হবে না। নেকাব, বোরকা, দাড়ি পাঞ্জাবী কিংবা নিয়মিত নামাজের জন্য এই দেশে যেনো আর কেউ বিব্রত ও অবদমনের শিকার না হয়।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হবে আমাদের মতো। আমাদের মাটি সংলগ্ন। কোন আমদানি শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের মুক্তির গ্যারান্টি দিতে পারে না। ঢাকার একটা অভিজাত স্কুলের শিক্ষার্থী যে শিক্ষা ও শিক্ষাখরচ এফোর্ট করতে পারবে দেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর জন্যও সেই শিক্ষা ও শিক্ষাখরচ এফোর্ট করার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। না হলে বৈষম্য আর শোসন চলতেই থাকবে।
অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান : দেশের সকল বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। মানুষের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সবধরনের ফটকা বণিক নিয়ন্ত্রিত হবে আগামীর বাংলাদেশে। যেই ক্ষমতায় আসুক তাদের কাছে আমাদের এই প্রত্যাশা থাকবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। খাদ্যপণ্য, বস্ত্রপণ্য, নির্মাণপণ্যের বাজারকে স্থিতিশীল রেখে মজুতদারীদের থেকে মুক্ত করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির পাগলা ঘোরা থেমে যাবে এই স্বপ্ন আমাদের।
বিনোদন : এই জায়গাটাতে রাষ্ট্রকে যথাযথ ফোকাস করতে হবে। বিনোদন যেনো কখনও পথ হারানোর পথ না হয়। আর বিনোদনই যেনো জীবন না হয়ে যায়। এই দিকে যদি সতর্ক থাকতে পারি তাহলে দেশ স্থিতিশীল হবে নিশ্চিত। যদিও আধুনিক পৃথিবীতে মৌলিক অধিকার তিনটি।ক্ষমতা, অধিকার, কর্তৃত্ব এই তিনটি বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা : রেলপথকে ব্রিটিশ আমলের আইনের ফাঁদ থেকে উদ্ধার করে একটা আধুনিক ও যুগোপযোগী যোগাযোগ বাহন বানানো জরুরি এখন। সড়ক আর নদীপথগুলোকে জনবান্ধব করা খুব জরুরি। ব্রিটিশ আইনের ভেজালচক্র থেকে আমাদের রেলকে এবং পুরো পরিবহণ সেক্টরকে উদ্ধার করতে হবে। যেসব নদীকে খাল বানিয়ে নদীপথকে ধ্বংস করা হয়েছে সেসব উদ্ধার করতে হবে। ছোট ছোট ব্রিজ বানিয়ে যেসব ছোট ছোট নদীর জলপথকে মেরে ফেলা হয়েছে, সেসব উদ্ধার করে আধুনিক জলপথের জন্য তৈরি করতে হবে। পরিবহণ মাফিয়াতন্ত্রকে চিরতরে নির্মূল করে একটা গণবান্ধব বাংলাদেশি পরিবহণ সেক্টর নির্মাণ এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি দাবি।
বৈদেশিক সম্পর্ক প্রশ্নে বাংলাদেশ : কেউ প্রভু নয়। সবাই বন্ধু। যিনি আমার দেশকে সম্মান দেবেন তিনি সম্মান পাবেন। বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈদেশিক নীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করা খুব জরুরি। যদি আমাদের একটা শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি থাকে তাহলেই এটা সম্ভব হবে। যেদিন এই বৈদেশিক নীতি একটা ইনসাফি ভিত্তির উপর দাঁড়াবে সেদিনই আমরা পৃথিবীতে একটা সুসভ্য ও উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব।
ইসলাম ও খিলাফত : ইসলামের আদর্শ আর খিলাফত ব্যবস্থা একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই খিলাফত কায়েমের প্রথম ধাপ হবে এই দেশের ইসলামপন্থি প্রতিটি দল-উপদল ও ঘরাণার মধ্যে ইসলাম ও খিলাফত প্রশ্নে একটা সমঝোতা। আপাতত কোন ঐক্যের প্রস্তাবনা আমি করছি না। আমি নিজস্ব চিন্তায় আশা করি; সবাই সবার প্রতি সহমর্মী হবে, শ্রদ্ধা রাখবে, নিজের কাজটা নিজের মতো করে করবে, ইখলাসের সঙ্গে করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য করবে, কেউ কারও পেছনে লেগে থাকবে না, ওয়াজের মাহফিলগুলোকে মিডিয়া হিসেবে কাজে লাগাবেন, মিম্বারগুলোকে যথাযথ ইসলামের মিম্বার বানাবেন। ইনশাআল্লাহ এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় যদি আমরা পার করতে পারি, তাহলে ঐক্যের একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেই সম্ভাবনার পথ ধরে খিলাফতের পথে আমরা এগিয়ে যাব দুর্বারগতিতে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও কবি