মসজিদ কমিটিতে চাই সৎ ও নির্মোহ লোক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মুহাম্মাদ আবু আখতার
অর্থ ও ক্ষমতার কাছে নতি স্বীকার করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলে সেখানে পরিপূর্ণ দ্বীনদারি থাকে না। প্রতিষ্ঠানেও আদর্শ ও সঠিক চেতনা ধারণ ও লালন করতে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। এটাই বাস্তবতা। আরো হতাশাজনক কথা বা সামাজিক অবক্ষয় হলো, অধিকাংশ মসজিদণ্ডমাদরাসার কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্ষমতা, সম্পদ, সম্মান ইত্যাদির প্রতি যত গুরুত্ব দেয়া হয় তাকওয়ার বিষয়টিকে তত গুরুত্ব দেয়া হয় না। এর ফলে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এমন সদস্যও নির্বাচিত হয় যাদের মধ্যে তাকওয়ার লেশমাত্র নেই। মসজিদ মাদরাসার এমন অনেক সভাপতি, সেক্রেটারি ও ক্যাশিয়ার আছে যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে না। এমনকি অনেকে তো জুমার নামাজেও নিয়মিত উপস্থিত হয় না। তাদের মধ্যে অনেকেই এমনও আছে যারা প্রকাশ্য পাপ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। কমিটির অনেকে মসজিদ মাদরাসার কোন খোঁজখবরই নেয় না।
হাল জমানায় অধিকাংশ মসজিদণ্ডমাদরাসার কমিটিতে তাকওয়াবান লোকের বড়ই অভাব। কমিটির অধিকাংশ লোকজন ইসলামের বিধি-বিধান পালনের ব্যাপারে উদাসীন। ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কেও তাদের অনেকেই অজ্ঞ। ফলে মসজিদ মাদরাসার প্রতি তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালনে তারা অবহেলা করে এবং এদের প্রভাবে সার্বিক বিবেচনায় যোগ্য ও দক্ষ পরিচালকপর্ষদ বা শিক্ষক কিংবা প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী লোক মসজিদ মাদরাসায় টিকে থাকতে পারে না।
কমিটির লোক তাকওয়াবান না হলে মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষক তাদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকে। তাদের স্বার্থবিরোধী কোনো হক কথা বললে তারা ক্ষেপে যায়। অনেক সময় হক কথা বলার অপরাধে কিংবা তুচ্ছ কোন কারণ দেখিয়ে অনেক ইমাম ও শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগের সময় কমিটির কিছু লোক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। এর ফলে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের পরিবর্তে কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক নিয়োগ পায়। আলিয়া মাদরাসা সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হলেও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এসব মাদ্রাসায় সরকার কর্তৃক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ হলেও কমিটির লোকেরা নিয়োগের সময় তাদের কাছে মাদরাসার উন্নয়নের নামে এবং বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিতে না চাইলে তারা নানা ধরনের হয়রানি করে থাকে। এর ফলে অনেকে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়। আজকাল কওমি মাদরাসায়ও পরিচালনাগত নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক ক্ষমতাসীনদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ যেমন এর সঙ্গে জড়িত তেমনি কিছু অযোগ্য মুহতামিমেরও অযোগ্যতা ও ব্যক্তিস্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত। মসজিদ মাদরাসা ক্ষমতা প্রকাশের জায়গা নয়। আদর্শ মানুষ গড়ার পবিত্র স্থান। ধর্মের সঠিক বার্তা ও স্বরূপ উপস্থাপনের পাঠশালা। এর সঙ্গে ভেতর বাইরের অনৈতিক সংযোগ বা হস্তক্ষেপ দুঃখজনক!
মুত্তাকি লোক হবে মসজিদ কমিটিরি সদস্য : মসজিদণ্ডমাদরাসা দ্বীনী প্রতিষ্ঠান?। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তাকওয়ার অধিকারী লোক দরকার। যাদের মধ্যে তাকওয়া নেই তারা এসব দ্বীনী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অযোগ্য। মসজিদ মাদরাসার কমিটি অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করে। তাই কমিটিতে এমন লোক নির্বাচিত করা উচিত নয়, যাদের মধ্যে তাকওয়ার লেশমাত্র নেই। এমন লোক মসজিদ মাদরাসার অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ ‘আল-মাসজিদুল হারাম’-এর অভিভাবক যে মুত্তাকী ব্যতীত কোন পাপাচারী ব্যক্তি হতে পারে না এ ঘোষণা দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর তাদের কী আছে যে, আল¬াহ তাদের আযাব দেবেন না? অথচ তারা মসজিদুল হারাম থেকে বাধা প্রদান করে, আর তারা এর অভিভাবকও নয়। তার অভিভাবক তো শুধু মুত্তাকীগণ; কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না।’ (সুরা আনফাল : ৩৪)।
এখানে মসজিদুল হারামের কথা বলা হলেও এটা সব মসজিদণ্ডমাদরাসার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তাকওয়াবান লোকেরা মসজিদ মাদরাসার অভিভাবক হলে তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। পক্ষান্তরে এসব দীনী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে তাকওয়াবান লোক না থাকলে নানা ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই মসজিদ মাদরাসার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কমিটিতে শুধু তাকওয়াবান লোকদের নির্বাচিত করা উচিত।
লেখক : প্রভাষক (আরবি), রাজারভিটা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা, চিলমারী, কুড়িগ্রাম