নতুন বছর মানব জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি অতীতের ভুলগুলো সংশোধনের এবং আকাশছোঁয়া স্বপ্ন জয়ের আশা জাগায়। কিন্তু নতুন বছরকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ এমন কিছু কাজ করে, যা ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনার বিপরীত। তাই নতুন বছরে একজন মোমেনের করণীয় এবং বর্জনীয় কী তার পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।
ইবাদাতের রুটিন তৈরি করা : নতুন বছরের শুরুতে সকলের উচিত গত বছরের কর্মগুলোর পর্যালোচনা করা । ইবাদাতের রুটিন প্রস্তুত করা। ভুলত্রুটি শুধরে নেয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর কাছে তওবা করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দোয়া ও ইস্তিগফারে সময় ব্যয় করা। নতুন বছরে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া, যা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার পথ প্রশস্ত করে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ইবাদাতের তাগিদ দিয়ে আল্লাহপাক বলেন,আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদত করো। ( সুরা হিজর: ৯৯)।
হালাল রিজিক উপার্জন করা : সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য রিজিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হালাল উপায়ে রিজিক উপার্জন মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে উন্নত করে। নতুন বছরে শরিয়ত নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা সচেতন মোমেনের পরিচয়। মিকদাম ইবনে মাদিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোন মানুষ নিজ হাতের উপার্জনের চেয়ে উত্তম উপার্জন আর কিছুই করতে পারে না। আর মানুষ তার নিজের, তার পরিবারের, তার সন্তান এবং তার খাদিমের জন্য যা ব্যয় করে তা হলো সদকাহ। (ইবনে মাজা: ২১৩৮)।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করা : নতুন বছর একটি সময়ের বাঁক যেখানে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। গত বছরে সময়ের সঠিক মূল্যায়ন না করার কারণে অনেকের রঙিন রঙিন স্বপ্ন ও প্রত্যাশা খোয়া গেছে। যারা সময়কে কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছে, তারা সেগুলো থেকে উৎসাহ নিয়ে আরো ভালো কাজের পরিকল্পনা করছে। অতএব, নতুন বছরে একটি সুশৃঙ্খল সময়সূচি তৈরি করে ইবাদত, শিক্ষা, পরিবার এবং কাজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করা উচিত। সময়ের অপব্যবহার করা হলে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে। আবু বারজা আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বান্দার পা (কেয়ামতের দিন) নড়বে না যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে- তার বয়স সম্পর্কে যে, কী কাজে সে তা শেষ করেছে, তার ইলম সম্পর্কে; তদানুযায়ী কী আমল করেছে সে, তার সম্পদ সম্পর্কে; কোথা থেকে তা অর্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে, তার শরীর সম্পর্কে; সে কীসে তা বিনাশ করেছে। (তিরমিজি : ২৪১৭)।
বর্ষবরণে ইসলামি বিধান : ইসলাম আনন্দ ও উৎসব পালনে বাধা দেয় না। তবে শর্ত হলো সেগুলো শারীরিক ও আত্মিক কল্যাণে এবং আল্লাহর বিধানের পরিপন্থি হতে পারবে না। বর্ষবরণের প্রচলিত কিছু রীতি ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। তাই পটকা ফোটানো, আতশবাজি, গান-বাজনা এবং বিজাতীয় সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ পরিহার করা উচিত। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু দাউদ : ৩৯৮৯)। ইসলামি পদ্ধতিতে শোকর আদায়ের মাধ্যমে বর্ষবরণ করা উচিত। কারণ এটি সারা বছরের বরকতের চাবিকাঠি।
নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা : নতুন বছরের শুরুতে ছোট বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিজ্ঞা করা একজন মুসলমানের জন্য একটি মহৎ কাজ। গুনাহমুক্ত জীবন গঠনের মাধ্যমে সমাজে নৈতিকতা, শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আর পাপের কারণে সমাজে অরাজকতা, অন্যায় এবং অসন্তোষের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গুনাহমুক্ত জীবনের জন্য সাধনা ও কান্না করার বিকল্প নেই ।
উকবা ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নাজাত কীসে নিহিত? তিনি বললেন, তুমি তোমার জবানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবে, তোমার ঘর যেন সুপশ্রস্ত হয় আর স্বীয় গুনাহর জন্য রোনাজারি করবে। (তিরমিজি: ২৪০৬)।