ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নতুন দিনের বার্তা

রুহুল আমিন খান
নতুন দিনের বার্তা

চলে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে বিগত বছর অনেককে ভাবিয়ে তোলে। জাগিয়ে তোলে জাগতিক ব্যর্থতার অনুশোচনা। মগ্ন রাখে গভীর আত্মসমালোচনায়। অনুশোচনা শেষে অনেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে পরবর্তী কর্মে আত্মনিয়োগ করে। অনেকে আবার সফলতার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে দৃঢ়ভাবে নতুন পরিকল্পনায় নতুন কর্মে নিমগ্ন হয়। জাগতিক জীবনের কাজ-কারবারে যেমন সফলতা ও ব্যর্থতা আছে, তেমনি মানুষের গোটা যাপিত জীবনেরও সফলতা বা ব্যর্থতা আছে। দুনিয়ার জীবনের পর আরেকটা জীবন আছে। আখেরাত মৃত্যুর পরের জগৎ। সে জীবনেও সফলতা বা ব্যর্থতা আছে। এর জন্য আমাদের সঞ্চয় কী? গত এক বছরে কতটুকু সফল আমাদের আমলি জীবন? পরকালীন সফলতার জন্য গত বছরকে কী সঞ্চয় বৃদ্ধির কাজে লাগাতে পেরেছি? না গতানুগতিকভাবে কেটেছে? কতটা সময় কাজে লেগেছে আর কতটা সময় অপচয় করা হয়েছে, এসব বিষয়ে আত্মসমালোচনা করা জরুরি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমেনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’ (সুরা হাশর : ১৮)। আল্লাহর ভয় ও পরকালীন জবাবদিহির এ অনুভূতি সর্বদা অন্তরে ধারণ করতে হবে।

ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক আমাদের জীবন থেকে কতটুকু সময় কেড়ে নিল? এসবের মাধ্যমে ব্যয়িত সময়টুকু কী উপকারে এলো? শুধু আবেগের বশে প্রযুক্তির কাছে আমরা আটকে গেছি? এটা ভাবতে হবে। ভাবনা পরবর্তী ফলাফল নেতিবাচক হলে আগামী বছরের জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে, অযথা সময় নষ্ট করব না। সময়ের সদ্ব্যবহার কতটুকু করতে পেরেছি, সৎকাজে কতটুকু সময় ব্যয় করেছি, আমার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে সফলতার সঙ্গে পৌঁছার জন্য কী পরিমাণ পাথেয় সংগ্রহ করেছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখন থেকেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। নইলে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাতারে শামিল হব; যা অবাঞ্ছনীয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কালের শপথ! নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম সম্পাদন করেছে এবং পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।’ (সুরা আসর)। অন্যের সমালোচনায় আমরা সর্বদা মগ্ন থাকি, কিন্তু নিজের ভুলত্রুটির দিকে নজর দিই না। নিজের দোষ-ত্রুটি নিয়ে ভাবার সময় পাই না। অথচ এ ভুলগুলোই আমার পরকালের নাজাতের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন করবে। আমাকে অনাকাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।

জাগতিক অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগে গত বছর কত মানুষ অনন্ত জীবনের পথে পাড়ি জমিয়েছে! যে কোনো সময় আমাদেরও অনন্ত জীবনের পথে যাত্রা শুরু করতে হতে পারে। সেই যাত্রাপথকে কণ্টকমুক্ত করতে কতটুকু চেষ্টা করেছি, আমাদের গন্তব্য কোথায় হবে? সেই গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কতটুকু পাথেয় সংগ্রহ করেছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন বছরে আত্মসমালোচনা করা উচিত; যা পরকালের মুক্তির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত