ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দ্বীনের জন্য খাদিজা (রা.)-এর অবদান

নুসরাত জাহান আয়েশা
দ্বীনের জন্য খাদিজা (রা.)-এর অবদান

খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি অনেক গুণে গুণান্বিত। তার অনন্য গুণ হলো তিনি ইসলামের জন্য অকাতরে তার সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছেন। তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য কোনো পুরুষের হয়নি। কারণ, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য দিয়েছিলেন হজরত খাদিজা (রা.) কে। শুধু প্রথম ইসলাম গ্রহণই নয়, বরং হজরত খাদিজা (রা.) সর্বপ্রথম অজু করেছিলেন, সালাত আদায় করেছিলেন, প্রথম দান করেছেন, এমনকি তিনিই রাসুল (সা.)-এর একমাত্র স্ত্রী যিনি সন্তান জন্মদানের গৌরব অর্জন করেছিলেন। তিনিই প্রথম উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।

আল্লাহতায়ালা খাদিজা (রা.) কে পাঠিয়েছিলেন নেয়ামতস্বরূপ। কারণ, রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে কঠিন সময়ে তিনি (সা.) কে সাহস যুগিয়েছিলেন। যখন মক্কার কাফেররা রাসুল (সা.)-এর উপর উৎসব ও উপাসনায় অংশগ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল, তখন খাদিজা (রা.)-এর কাছে থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছিলেন উপাসনা না করার জন্য। মুসনাদ ইবনে হাম্বলের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, খাদিজা (রা) এর এক প্রতিবেশী এক রাতে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বলতে শুনলেন, ‘হে খাদিজা! আল্লাহর কসম, আমি কখনো লাত উজ্জার পূজা করব না, আল্লাহর কসম, কখনোই তাদের অর্চনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ তখন খাদিজা (রা) বলেন, ‘দূর হোক লাত উজ্জা। লাত উজ্জার বিষয়ে আলোচনাই করবেন না।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৪৮৭)।

প্রথম অহি অবতীর্ণের আগে রাসুল (সা.) অস্বাভাবিক কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেন। বোখারি শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (সা.) নবুয়ত লাভের পূর্বে ছয় মাস সত্য স্বপ্ন দেখেছেন। ‘এসব ঘটনা রাসুল (সা.) খাদিজা (রা) কে বর্ণনা করলে তিনি তাকে সমর্থন করেন এবং রাসুল (সা.) কে সাহস জোগান। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘মাঝেমধ্যে রাসুল (সা.) একটি আলো দেখতেন অথবা (সা.) সালাম ধ্বনি শুনতেন।’ রাসুল (সা.) খাদিজা (রা) কে বলেন, ‘হে আবদুল্লাহর সন্তান! আল্লাহতায়ালা কখনো আপনাকে অমঙ্গল করবেন না।’ অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) খাদিজা (রা) কে বললেন, ‘আমি যা স্বপ্নে দেখি তা সত্যে পরিণত হয়।’ খাদিজা (রা) বলেন, ‘এটা ভালো সংবাদ, আপনার সঙ্গে ভালো ছাড়া খারাপ কিছু ঘটতে পারে না।’

বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম যুহরি বলেন,‘ রুকাইয়ার জন্মের সময় থেকে মুহাম্মদ (সা.) নির্জনতা পছন্দ শুরু করেন, হেরা গুহায় যাওয়া শুরু করেন।’ অর্থাৎ সে সময় বিভিন্ন কারণে কোরাইশদের সঙ্গ তার পছন্দ হচ্ছিল না। সে সময় রাসুল (সা.) হেরা গুহায় বহু রাত কাটিয়েছেন। হজরত খাদিজা (রা.) রাসুল (সা.) কে খাবার প্রস্তুত করে দিতেন। খাবার শেষ হলে তিনি মক্কায় ফিরে আসতেন, কাবা শরিফ তাওয়াফ করতেন অতঃপর খাদিজা (রা)-এর ঘরে ফিরে যেতেন। হজরত খাদিজা (রা.) অনেক সময় খাবার নিয়ে হেরা গুহায় রাসুল (সা.)-এর কাছে যেতেন। কখনো কখনো তিনি হেরা গুহায় রাসুল (সা.)-এর সাথে অবস্থান করেছেন। হেরা গুহা থেকে খাদিজা (রা)-এর বাড়ির দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টার পথ। খাদিজা (রা.)-এর ঘর ছিল কাবার পাশে। সেখান থেকে তিনি মরুভূমির প্রায় দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে হেরা গুহায় পৌঁছাতেন। রাসুল (সা.) এমন কঠিন মুহূর্তে হজরত খাদিজা (রা) কে তার পাশে পেয়েছেন। আর খাদিজা (রা) রাসুল (সা.)-এর উপর আস্থা রেখেছেন, তাকে প্রেরণা দিয়েছেন। এটাই খাদিজা (রা.)-এর অনিন্দ্য বৈশিষ্ট্য। এছাড়া রাসুল (সা.)-এর ওপর যখন প্রথম অহি নাজিল হয়, তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খাদিজা (রা.)-এর কাছে এলে তিনি তাকে চাদরাবৃত করেন। তাকে সাহস যোগান, যা আমরা সবাই অবগত।

হজরত খাদিজা (রা) ছিলেন আরবের অন্যতম ধনাঢ্য মহিলা। সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তার বাণিজ্য চলত। তার সমুদয় সম্পত্তি ইসলাম প্রচারের জন্য রাসুল (সা.) কে দিয়ে দেন। খাদিজা (রা.) সমস্ত সম্পত্তি রাসুল (সা.) দান করে দিতে থাকেন। এতে খাদিজা (রা.) তাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন। নবুয়তের সপ্তম বছরে কুরাইশরা যখন রাসুল (সা.) সহ বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিবকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করে শিয়াবে আবু তালিবে বন্দি করে, তখন মক্কার সেই সম্ভান্ত্র মহিলা খাদিজা (রা.)-ও সেখানে প্রায় ৩ বছর বন্দি ছিলেন। তারা খাদ্যাভাবে অনেক সময় গাছের পাতা খেয়েও দিনাতিপাত করেছিলেন।

অর্থাৎ খাদিজা (রা.) ইসলামের পূর্ব থেকে রাসুল (সা.) কে যেভাবে অভয়, অনুপ্রেরণা ও সাহায্য করে এসেছেন তা অতুলনীয়। তাই তো খাদিজা (রা.)-এর প্রতি রাসুল (সা.)-এর গভীর অনুভূতি প্রকাশ পায়। খাদিজা (রা.)-এর জীবদ্দশায় তিনি কোনো স্ত্রী গ্রহণ করেননি। তিনি অন্যান্য উম্মুল মুমিনীনদের থেকে অধিক মর্যাদাবান। আর তাই স্বয়ং আল্লাহতায়ালা খাদিজা (রা.) কে সালাম পাঠিয়েছেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। একজন নারী হয়েও তিনি দ্বীনের জন্য যতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা বিশ্বের প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য এক অতুলনীয় আদর্শ।

লেখিকা : শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত