ঢাকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

আবদুল্লাহ
কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

ছয় হাজারেরও বেশি আয়াত রয়েছে পবিত্র কোরআনে, যার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আয়াত আছে বিজ্ঞান বিষয়ে। প্রচলিত বিজ্ঞানের থিওরি ভুল হতে পারে, কিন্তু কোরআনের কথা কখনো ভুল হতে পারে না। কারণ আল কোরআন আসমানি কিতাব, আল্লাহর কালাম। তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমের সুরা আল বাকারায় অবিশ্বাসীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আর তোমরা যদি সে বিষয়ে? সন্দেহের মধ্যে থাক, যা আমি নাজিল করেছি আমার বান্দা (মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর, তাহলে অনুরূপ একটি সুরা রচনা কর এবং? আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদের ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। আর যদি তা করতে না পার, আর নিশ্চয়ই তোমরা তা ?পারবে না, তাহলে ভয় কর সেই আগুনকে, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা: ২৩-২৪)।

কোরআনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির তত্ত্ব ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব’ এর বর্ণনা (Big Bang Theory in the holy Quran) : কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অবিশ্বাসীরা কি লক্ষ্য করে না যে, আসমানসমূহ ও পৃথিবী একসাথে ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করেছি, আর আমি প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি। তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’ (সুরা আম্বিয়া : ৩০)। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, মহাবিশ্ব একটি একক বিন্দু থেকে বিস্তৃত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি মহাবিশ্বের সূচনাকে ব্যাখ্যা করে।

পাহাড়ের ভূমিকা : কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীতে স্থির পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে তা তোমাদের নিয়ে কেঁপে না ওঠে।’ (সুরা নাহল : ১৫)। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পর্বতসমূহ পৃথিবীর ভূ-ত্বকের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। পর্বতসমূহ মূলত ভূ-ত্বকের ভেতরে গভীর ভিত্তি বা শিকড়ের মতো কাজ করে, যা ভূমিকম্প বা ভূ-ত্বকের অস্থিরতা হ্রাস করে।

পবিত্র কোরআনে ভ্রূণতত্ত্বের বর্ণনা (Embryology in the holy Quran) : কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি মানুষকে মিশ্রিত তরল থেকে সৃষ্টি করেছি, যাতে তাকে পরীক্ষা করি। পরে আমি তাকে বিন্যস্ত (নতুন) রূপে পরিণত করেছি এবং আমি নুতফা (বীর্য) থেকে আলাকা (রক্তের জমাট অংশ), অতঃপর আলাকা থেকে মুদগা (মাংসপি-) সৃষ্টি করেছি, অতঃপর মুদগা (মাংসপি-) থেকে ইযাম (হাড়গোড়) সৃষ্টি করেছি, অতঃপর ইযাম (হাড়গুলো) এ লাহম (মাংস) লাগিয়ে দিয়েছি।’ (সুরা মোমিনুন : ১২-১৪)।

ড. কিথ মুর একজন প্রখ্যাত ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ, এই তথ্যগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বলেছেন, ‘কোরআনে ভ্রূণের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা আধুনিক ভ্রূণবিদ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

পানি জীবনের উৎস : কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক জীবন্ত বস্তুকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩০)।

বিজ্ঞান বলছে, পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তির জন্য পানি অপরিহার্য। জীবনের মৌলিক কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করতে পানি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। আল কোরআনে মহাজাগতিক ঘটনাবলির বর্ণনায় (Cosmology in the holy Quran) আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সূর্যের জন্য সম্ভব নয় যে, সে চাঁদের নাগাল পাবে, আর রাতের জন্য (সম্ভব নয়) দিনের অগ্রবর্তী হবে; আর প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৪০)। বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, সূর্য এবং গ্রহগুলো তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান রয়েছে। এই ধারণা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আকাশের সুরক্ষা স্তর : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি পৃথিবীর আকাশকে এক সুরক্ষাময় ছাদ বানিয়েছি, কিন্তু তারা এটির নিদর্শনগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩২)। আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আমাদের সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি ও মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। এটি একটি ‘সুরক্ষা স্তর’ হিসেবে কাজ করে। উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক তথ্যে বলা হয়েছে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে আর বিজ্ঞান এগুলো প্রমাণ করেছে কিছুদিন পূর্বে। এ থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল কোরআন সর্বশক্তিমান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ও সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহর বাণী।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফলিত গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত