শাবান মাসের আমল
দিদার শফিক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শাবান হিজরি সনের অষ্টম মাস। এটি পবিত্র রমজানের আগের মাস। এ মাসের পূর্ণ নাম ‘আশ শাবানুল মুআজজম’। শাবান মাস বিভিন্ন কারণে মুসলমানদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মাস। বিশেষত নফল ইবাদত ও সিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে এ মাস অতিবাহিত করার উৎসাহমূলক নির্দেশনা রয়েছে রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন হাদিসে। তাছাড়া ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান, যা ভারত উপমহাদেশে শবে বরাত হিসেবে প্রচলিত তাও এ মাসেই রয়েছে। হাদিস থেকে জানা যায়, শাবান মাসে বান্দার বার্ষিক আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। এসব কারণে শাবান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে বিশেষ মর্যাদার মাস হিসেবে গৃহীত। শাবান মাসের আমল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
নফল রোজা রাখা : নবী করিম (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসে এত অধিক রাখতেন না। উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ : ২৩৩৬)। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, (নফল ) রোজা রাখার জন্য নবী (সা.)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মাস ছিল শাবান মাস। (মুসনাদে আহমাদ : ২৫৫৪৮; আবু দাউদ : ২৪৩১)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, আমি রাসুল (সা.) কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি। আর (রমজান ছাড়া) শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে অধিক রোজা রাখতে দেখিনি। (বোখারি : ১৯৬৯) তাই শাবান মাসে যথাসম্ভব নেক আমল করা উচিত। তাছাড়া সামর্থ্য অনুযায়ী রোজা রাখার চেষ্টা করা জরুরি। তবে রমজানের দুই তিন দিন আগ থেকে রোজা রাখা হতে বিরত থাকবে। সর্বোচ্চ শাবান মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা উচিত। কারণ হাদিসে রমজানের এক-দুই দিন আগে রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যাতে পূর্ণ উদ্যম ও আগ্রহের সঙ্গে রমজানের রোজা রাখা শুরু করা যায়। দোয়ার আমল : রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম রজব ও শাবান মাসে একটি দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। এ দোয়ায় আল্লাহর কাছে রজব ও শাবান মাসে বরকতের জন্য প্রার্থনা করতেন। দোয়াটি হলো: (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। অর্থ : হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; আর আমাদের হায়াত দীর্ঘ করে আমাদেরকে রমজান মাসে পৌঁছে দিন। (মুসনাদে আহমাদ : ২৫৯)
শবে বরাতের ফজিলত : চৌদ্দ শাবান দিবাগত রাতকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা শবে বরাত বলা হয়। এ রাতের আমলের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন; অতঃপর তিনি শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে হিব্বান : ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বাইহাকি ৩/৩৮২, হাদিস : ৩৮৩৩)।
এই হাদিস থেকে জানা যায়, অর্ধ-শাবানের রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সবার জন্য রহমত ও ক্ষমার দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির বা প্রতিমার উপাসনা করে শিরকে লিপ্ত থাকে এবং অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা এ রাতে মহান আল্লাহর দয়া, রহমত ও ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হবে। এটা বড় হতাশা ও দুর্ভাগ্যের। তাই চলার পথে মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ ও আল্লাহর প্রতি শিরক করা থেকে বিরত থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা একজন মোমিনের অবশ্য কর্তব্য।
লেখক : মুহাদ্দিস ও গণমাধ্যমকর্মী