মাগফেরাত লাভে করণীয়
নাজমিন আক্তার ইতি
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রমজান মাস আমলের মাস। কোরআনের মাস। নিজেকে শুদ্ধ ও পবিত্র করার মাস। বছরের অন্য যে কোন মাসের চেয়ে রমজান মাসের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে সর্বাপেক্ষা বেশি। এ সময়ে মহান আল্লাহতায়ালা অসংখ্য জাহান্নামি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন। রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মানবজাতির জন্য কল্যাণ ও বরকত লাভের, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি প্রাপ্তির এক সুবর্ণ সুযোগ। রমজানে শয়তান থাকে বন্দি। তাই আমলের পরিবেশ থাকে সর্বত্র। মনে থাকে ইবাদতের আগ্রহ। হেলায় হেলায় সময় নষ্ট না করে এ সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। শয়তান কুমন্ত্রণা নিয়ে ফিরে আসার আগেই নিজেকে শুদ্ধবিমল মানবে পরিণত করা রমজানের দাবি। নিঃসন্দেহে রমজানকে আল্লাহ রহমত, মাগফেরাত, নাজাত এবং বিভিন্ন নেয়ামত দিয়ে সাজিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়, তখন আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বোখারি : ৩, হাদিস : ১৭৭৮)।
সুতরাং রমজান মাস হলো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে বিশেষ অফার এর মতো। যার বিনিময় সত্তর থেকে সাতশত গুণ। আল্লাহতায়ালা চাইলে আরো বেশিও দিতে পারেন। এজন্য আমাদের উচিত রমজান মাসের একটু সময়ও অবহেলায় নষ্ট না করে প্রতিটি মুহূর্তের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। মহানবী (সা.) রমজান মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে লোক সকল, তোমাদের নিকট এক মহান ও বরকতময় মাস এসেছে। এটি এমন এক মাস, যার শুরুতে রহমত, মাঝে মাগফিরাত এবং শেষে রয়েছে জাহান্নাম থেকে নাজাত ও মুক্তি। (ইবনু খুযাইমা, ইবনু শাহীন ও বায়হাকী প্রণীত শুআবুল ঈমান)।
বর্তমানে চলছে রমজানের দ্বিতীয় দশক অর্থাৎ মাগফিরাতের সময়। মাগফিরাত অর্থ ক্ষমা। অর্থাৎ রমজানের দ্বিতীয় দশক, মহান আল্লাহতায়ালার নিকট থেকে ক্ষমা লাভের এক বিশেষ সুযোগ আমাদের জন্য। আমরা কেউই যেহেতু পাপের ঊর্ধ্বে নই, সেহেতু এই সময়টাতে আমরা আমাদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য, জানা-অজানা, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত পাপ ও গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে, বিশ্বাসের সাথে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট মাগফিরাত কামনা করব। এ সময়ে আমরা ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিষয়ে আমল করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। যেমন-
কোরআন তেলাওয়াত : মহান রাব্বুল আলামিন, মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন পবিত্র রমজান মাসে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ (সুরা আল বাকারা : ১৮৫)।
কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে, প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে দশটি করে নেকি লাভের কথা হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। এজন্য মাগফিরাতের এ সময়ে আমরা সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআনুল কারীম তেলাওয়াতের পাশাপাশি অর্থ বুঝে এবং নিজ জীবনে ধারণ করার মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করতে পারি। কোরআনের প্রতি মনের টান, কোরআনের বিধান মেনে চলার মানসিকতা তৈরি করা বা হওয়া- এটা রমজানে খুব সহজ ও ফলপ্রসূ।
বেশি বেশি জিকির ও ইস্তেগফার করা : মহান রাব্বুল আলামিনের ক্ষমা ও নৈকট্য লাভে দোয়া যিকির ও ইস্তেগফারের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। আর সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর।’ (সূরা আল-আহযাব : ৪১-৪২) এ জন্য আমাদের উচিত সবসময়ই আল্লাহকে স্মরণ করা। বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দোয়া করা। ছোট্ট একটি ইস্তেগফার 'আস্তাগফিরুল্লাহ', যেটি আমরা চাইলে বেশিরভাগ সময়ই বলতে পারি। উচ্চারণে সহজ; কিন্তু নেকি অনেক বেশি।
নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় : নফল ইবাদতের মধ্যে অন্যতম হলো তাহাজ্জুদ সালাত। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কর। তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।’ (সুরা বনী ইসরাঈল : ৭৯) রমজান মাসে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় তুলনামূলক সহজ। যেহেতু সাহরির জন্য ঘুম থেকে উঠতেই হয়, তাই আমরা চাইলে কিছু সময় আগে উঠে সহজেই তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে পারি। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদাকা : সহমর্মিতা ও দানশীলতার মাস রমজান। রমজান মাস এলে রাসুল (সা.)-এর দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদাকা, আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভের বিশেষ উসিলা হতে পারে। এ সময়ে বিভিন্ন উপায়ে দান-সদাকা করা যেতে পারে। যার মধ্যে একটি হলো, রোজাদার ব্যক্তিকে সাহরি কিংবা ইফতার করানো। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে; তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি : ৮০৭)।
সর্বোপরি, বেশি বেশি তওবা ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ক্ষমা, সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের এ সূবর্ণ সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করা উচিত নয়। আল্লাহতায়ালা হলেন গফূর ও গাফফার। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তাই বিশ্বাসের সাথে, আমরা তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার অবাধ্য বান্দারা, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই তিনি সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (আয-যুমার : ৫৩)।
লেখিকা : শিক্ষার্থী, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়