ঢাকা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমজান শেষে আমাদের করণীয়

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
রমজান শেষে আমাদের করণীয়

পবিত্র মাহে রমজান আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। রমজান ছিল প্রশিক্ষণের মাস। কীভাবে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হওয়া যায় তার প্রশিক্ষণ ছিল এক মাসব্যাপী। রাতজেগে তাবাবি নামাজ, শেষ রাতে সাহরি খেয়ে পরের দিন আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে রোজার প্রস্তুতি এবং শেষ রাতের তাহাজ্জুদের নামাজ এবং দিনের বেলা পানাহার ও যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থেকে এবং যাবতীয় পাপকাজ বর্জন করে আমরা নিজেদের সুধরে নেয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। রমজান শেষে ঈদ ছিল সেই প্রশিক্ষণে সমাপ্তির কুচকাওয়াজ।

রমজানের সাধনা ও প্রশিক্ষণে আমরা কতখানি সফলকাম হলাম তা নির্ভর করবে আমাদের পরবর্তী জীবনের উপর। আমরা রমজানের নিবিড়ভাবে কোরআন তেলাওয়াত করেছি। এমনকি সারাদিন উপোস থাকার পর রাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারাবি নামাজ আদায় করেছি।

এখন প্রশ্ন সেই ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করছি কি না। কিংবা কোরআনের শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে অনুসরণ করছি কি না। প্রথম পদক্ষেপ হবে, প্রতিদিন সকালে নিজে এবং পরিবারের সদস্যরা যাতে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করে সে ব্যাপারে যত্ন নিতে হবে। ফজর নামাজের পর যদি কোরআন তেলাওয়াত করি তারপর কর্মস্থলে হাজির হই তাহলে ধরে নিতে পারি যে, আমার দিনটি সুন্দরভাবে কাটবে এবং রমজানের সাধনার প্রতি সম্মান প্রদান করা হবে।

রমজানের পর শাওয়াল মাসের একটি বিশেষ ইবাদত হল ছয়টি নফল রোজা রাখা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল তারপরে শাওয়াল মাসে অতিরিক্ত ছয়টি রোজা রাখল। সে যেন সারা বছর রোজা পালন করল। বিষয়টি আমরা এভাবে হিসাব করতে পারি। ইসলামে যে কোনো সৎকর্মের সওয়াব কমপক্ষে দশ গুণ। সেই হিসেবে রমজানে একমাস রোজা রাখার সওয়াব হবে কমপক্ষে দশ মাস। এক বছর হওয়ার জন্য বাকি আর দুই মাস। যদি কেউ শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে তাহলে তার সওয়াব হবে কমপক্ষে ৬০টি রোজার সমান। ষাট মানে হলো- দুই মাসে। এভাবে বার মাস রোজা রাখার সওয়াব বান্দার আমলনামায় লেখা হয়ে যাবে।

রমজানের আরেকটি বিশেষ ইবাদত ছিল জাকাত ও দান-সদকা।

পুরো রমজান মাসে আমরা অসহায় গরিবদের সাহায্য সহযোগিতা ও দান-সদকার চেষ্টা করেছি। রমজানের পরও সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আমার আশপাশে যারা আছে, আত্মীয়-স্বজন বা গরিব জনগণ তাদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, সহযোগিতার অর্থ সব সময় আর্থিক সহায়তা নয়। বরং কথা দিয়ে সুপরামর্শ দিয়ে, ছোটোখাট প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে, রোগীদের সেবার মাধ্যমে, কিংবা অসুখ সংগ্রহ বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেও আমরা অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারি। হাদিস শরিফে আছে। মুমিন বান্দা তার ভাইকে স্বধর্মের লোকদের হাসিমুখে কথা বললেও তাও সদকা বা নিঃস্বার্থ দান হিসেবে গ্রহণ করা হবে এবং আল্লাহর রাস্তায় দান হিসেবে গণ্য হবে। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর ভয়ে দিনের বেলা আমরা পানাহার থেকে বিরত ছিলাম। সেই ভয় তাকওয়ার জীবন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন, আমার সবকিছু নিরীক্ষণ করছেন। কাজেই সৎপথে চলতে হবে। মনে রাখবেন, সৎপথে চলে এ জীবনে কেউ ব্যর্থ হয়নি। আমাদের আসল জীবন পরকাল সেই লক্ষ্য সমানে রেখেই আমাদের জীবনকে সাজাতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত