মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মাকদিস ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। যেটি জেরুজালেমের পুরোনো শহরে অবস্থিত। এটা মুসলমানদের কাছে ‘বায়তুল মাকদিস বা ‘আল আকসা’ মসজিদ নামে পরিচিত। ইসলামি স্থাপনার প্রাচীন এই নমুনাটি মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদি তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সমানভাবে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। ঈসা (আ.) এবং মরিয়ম (আ.)-এর সাথে প্রাচীনতম ইবাদত গৃহ বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদে আকসার সম্পর্ক সুনিবিড়ভাবে জড়িত।
মহানবি (সা.)-কে আল্লাহতায়ালা মিরাজের রাতে প্রথমে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান। এরপর ঊর্ধ্ব আকাশ ভ্রমণ করান। মসজিদুল আকসা ও এর আশপাশের এলাকাটি অনেক নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসুলের সমাধি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জেরুজালেমে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে কোনো নবী সালাত আদায় করেননি বা কোনো ফেরেশতা দাঁড়াননি।’ (তিরমিজি)।
মসজিদুল আকসার মোট সাতটি নাম রয়েছে। মসজিদুল আকসা, বায়তুল মাকদিস, আল-কুদস, মসজিদে ইলিয়া, সালাম, উরুশলেম ও ইয়াবুস। মসজিদুল আকসার নির্মাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। একদল ইতিহাসবিদ মনে করেন, মসজিদুল আকসা মূলত হজরত আদম (আ.)-এর হাতে তৈরি হয়, যা পরবর্তী নবীরা পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন। আবার অনেকে মনে করেন, হজরত সুলায়মান (আ.) এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে সঠিক তথ্য হলো, হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তার দৌহিত্র হজরত ইয়াকুব (আ.) মসজিদুল আকসা নির্মাণ করেন।
খ্রিষ্টপূর্ব ১০০৪ অব্দে হজরত সুলায়মান (আ.) আল-আকসা মসজিদের পুনর্নির্মাণ করেন। পরবর্তী বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙিনা, মিম্বার, মিহরাব, অভ্যন্তরীণ কাঠামো ইত্যাদি। ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে সাহাবি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে পুরো বায়তুল মাকদিস এলাকা মুসলমানদের দখলে আসে। এরপর মুসলিম শাসকরা কয়েকবার এ মসজিদের সংস্কার করেন। তবে ১০৯৯ সালের ১৫ জুলাই খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন দখলে নেয়ার পর মসজিদটিতে ব্যাপক পরিবর্তন করে গির্জায় পরিণত করে। মসজিদের গম্বুজের ওপরে তারা ক্রশ স্থাপন করে মসজিদের এক অংশকে আস্তাবল বানায় এবং অন্য অংশে নিজেদের থাকার ব্যবস্থা করে।
এভাবে জেরুজালেমে ৪৬২ বছরের মুসলিম শাসনের পতন ঘটে। এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন এবং আগের নকশা অনুযায়ী আল-আকসা মসজিদের পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপর খ্রিষ্টশক্তি পিছু হটলেও ইহুদি চক্র বায়তুল মাকদিসের দিকে লোলুপ দৃষ্টি রাখে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯৬৭ সালের জুনে পূর্ব আল কুদস, পশ্চিম তীর, গাজা ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। বর্তমানে দখলদার ইসরায়েল ঐতিহাসিক আল-আকসা মসজিদ দখল করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল-আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল।
বর্তমানে এ মসজিদে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইসরায়েলের মুসলিম বাসিন্দা এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা মসজিদুল আকসায় প্রবেশ ও নামাজ আদায় করতে পারেন। আবার অনেক সময় বাধাও দেয়া হয়। গাজার অধিবাসীদের জন্য বিধিনিষেধ অনেক বেশি কঠোর। বর্তমানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। মুসলিমদের কাছে আল আকসা মসজিদ নামে পরিচিত স্থাপনাটি ইহুদিদের কাছে ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত। আল-আকসা হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা এবং মক্কা ও মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। মসজিদুল আকসায় এক রাকাত নামাজ আদায় করলে ২৫০ অন্য বর্ণনায় ৫০০ রাকাতের সাওয়াব পাওয়া যায়। শেষ জামানার ঘটনাবলির কারণেও এ এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলেই দাজ্জাল ও ঈসা (আ.)-এর আগমন ঘটবে।
লেখক : আলেম ও সম্পাদক