ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্মরণ

অধ্যক্ষ প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম গণি

সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকি
অধ্যক্ষ প্রফেসর মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম গণি

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ২৪০ বছরের প্রাচীন সরকারি ইসলামি শিক্ষায়তন মাদ্রাসা-ই আলিয়া ঢাকা। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ এবং হেড মাওলানা ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম গণি। ১৭৮০ সালে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিং কর্তৃক মাদ্রাসা-ই আলিয়া কলিকাতা প্রতিষ্ঠিত হলেও এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযোগ করা হয় ড. এ. স্প্রেংগারকে ১৮৫০ সালে। তার পর থেকে মাওলানা মুহাম্মদ ইসলাম গণি পর্যন্ত আরো ২২ জন অধ্যক্ষ এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন।

জন্ম ও পরিবার : মাওলানা ইসলাম গণি ১৯৫২ সালে ১ জুলাই যশোর জেলার সদর উপজেলার দৌলতদিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ডা. মো. জুনাব আলী (এলএমএফ)। দাদা আকতার উদ্দীন। ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে ইসলাম গণি ছিলেন তৃতীয়। তার স্ত্রীর নাম হাফিজা ইসলাম। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে : শিরিন, নাদিরা, ফুয়াদ ও ফয়সাল।

শিক্ষাজীবন : তিনি গ্রামের দৌলতদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর দোগাছিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে বেরুইল দাখিল মাদ্রাসা হতে ১ম বিভাগে দাখিল, ১৯৬৫ সালে শাহবাদ আলিয়া মাদ্রাসা হতে প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান দখল করে আলিম, ১৯৬৭ সালে একই মাদ্রাসা হতে প্রথম বিভাগে ফাজিল, ১৯৬৯ সালে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা হতে প্রথম শ্রেণীতে সপ্তম স্থান অধিকার করে কামিল হাদিসে ডিগ্রী লাভ করেন।

উচ্চ শিক্ষা : শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজ হতে বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক, যশোর এম. এম. কলেজ হতে দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থানসহ বিএ এবং ১৯৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ হতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৫ সনে তিনি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকা হতে রিসার্চ সমাপ্ত করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল যশোর জেলার মুসলিম মনীষী।

কর্মজীবন : তিনি ১৯৭৬ সালে শাহবাদ আলিয়া মাদ্রাসায় প্রভাষক এবং ১৯৭৮ সালে মাগুরা সহরাওয়ার্দী কলেজে যোগদান করেন। এখানে ৮ মাস অধ্যাপনা করার পর ১৯৭৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পিএসসি-এর মাধ্যমে মাদ্রাসা-ই- আলিয়া ঢাকার আদব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে ৩০ আগস্ট সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করে ঢাকা সরকারি বদরুন্নেছা কলেজে যোগদান করেন। ১৯৯০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি ওই বিভাগের প্রধান হন। ২০০০ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োজিত হন।

এরপর তিনি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া ঢাকায় হেড মাওলানা পরে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি মাদ্রাসা বোর্ড এবং ঢাকা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষক। মাদ্রাসা বোর্ড হতে প্রকাশিত দাখিল আলিম ও ফাজিল অ্যরাবিক সিলেকশন বোর্ডের সাত সদস্যের তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন।

চরিত্র : মৌলানা ইসলাম গণি খুব হাশিখুশি মানুষ। সুন্দর ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। দায়িত্ব পালনে খুবই সচেতন ও কর্মঠ। কাজের মধ্যেই সময় কাটাতে তিনি ভালোবাসেন। শরীয়তের পূর্ণ পাবন্দ ছিলেন। ছাত্রদের প্রতি তিনি ছিলেন খুবই স্নেহশীল। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ছাত্রদের যারপর নাই উৎসাহ দিতেন।

রচনা ও গবেষণা : তিনি ছিলেন একজন সুলেখক। ইসলামি বিশ্বকোষে তার মৌলিক ও অনুদিত দুই শতাধিক প্রকাশিত নিবন্ধই তার পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর বহন করে। তিনি গত বছর ২০ মার্চ দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন, আমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত