১৬০০ শতাব্দীর শেষদিকে নির্মিত এ মিনারটি মহানন্দা ও কালিন্দ্রি নদীর সঙ্গমস্থলের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত। পুরোনো কালিন্দ্রি নদী বর্তমানে শুষ্কপ্রায় এবং এটি বর্তমানে মোটামুটি একটি খালের আকার ধারণ করেছে। মালদা রেল স্টেশনের নিকটবর্তী এ মিনারটিতে মালদা শহর থেকে সাইকেল রিকশা বা অটোরিকশায় যাওয়া যায়।
মিনারটি খিলানযুক্ত আয়তাকার আট কক্ষ বিশিষ্ট একটি উচ্চ মঞ্চের (ঢ়ড়ফরঁস) ওপর স্থাপিত। বর্তমানে মঞ্চটি আচ্ছাদনবিহীন। পূর্বদিক থেকে দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। একটি প্রবেশপথ দ্বারা মঞ্চে আরোহণ করা যায়। অন্য প্রবেশপথ দ্বারা মিনারে আরোহণ করা যায়। মিনারের ওপরে ওঠার জন্য এর ভেতরের দিকে ৪৫ ধাপবিশিষ্ট প্যাঁচানো (ংঢ়রৎধষ) সিঁড়ি রয়েছে। মিনারের অভ্যন্তরভাগ আলোকিত রাখার জন্য মধ্যে মধ্যে কিছু অংশ ফাঁকা (ংষরঃ) রাখা হয়েছে। মিনারের ওপরে ৪০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট রেলিংযুক্ত একটি উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। রেলিংটির চারদিকে চারটি ফাঁকা জায়গা (ংষরঃ) রয়েছে। মিনারটির বহির্গাত্রে আনুভূমিকভাবে স্থাপিত হস্তিশু-ের আকৃতির অনেকগুলো প্রস্তরখ- সংযুক্ত আছে।
এ সব প্রস্তরখ-ের ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। জন বার্টন পেজ মনে করেন, বিদ্রোহীদের মস্তক কর্তন করে এগুলোতে ঝুলিয়ে রাখা হতো। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমতের অবকাশ আছে বলে বর্তমান লেখক মনে করেন। তিনি মনে করেন, এ মিনারটি সম্ভবত একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ছিল। কালিন্দ্রি নদীর অন্য পাড়ে অবস্থিত পুরোনো মালদা মসজিদের স্থানে সম্ভবত একটি জলদুর্গ ছিল। এ জলদুর্গে নৌপথের প্রহরীরা অবস্থান করত। নিমসরাই মিনারের প্রস্তরখ-গুলোতে লণ্ঠন ঝুলিয়ে রাখা হতো। বিদ্রোহী বা জলদস্যুদের গতিবিধি সম্পর্কে লণ্ঠনগুলোর সাহায্যে এ মিনার থেকে সংকেত প্রদান করে নদীর অন্য পাড়ে অবস্থিত প্রহরীদের জানিয়ে দেওয়া হতো। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯১৭-১৯১৮ সালে মিনারটির কিছু অংশ সংস্কার করে।
লেখক : প্রত্নতত্ত্ববিদ ও গবেষক