ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রতাপাদিত্যের বাসভূমি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রতাপাদিত্যের বাসভূমি

বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্যের স্মৃতি বিজড়িত ভূমি শ্যামনগর। এই শ্যামনগরের নামকরণ নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মতামত হলো- ইংরেজ আমলে এখানে একটি ফাঁড়ি ছিল। পরবর্তীতে ফাঁড়িটিকে থানায় উন্নীত করার সময় শ্যামসুন্দর নামে একজন ভদ্রলোক প্রয়োজনীয় গৃহাদি নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি ইংরেজ সরকারকে দান করেন। সেই থেকে স্থানটির নাম দাতার নামানুসারে ‘শ্যামনগর’ হয়েছে। ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ আমলে সৃষ্টি হওয়া শ্যামনগর উপজেলাটির মোট আয়তন ১৯০৩ বর্গ কিলোমিটার। যার মূল ভূখণ্ড ৪৫৫ বর্গ কিলোমিটার এবং সুন্দরবন জুড়ে রয়েছে ১৪৪৮ বর্গ কিলোমিটার। প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে এখানে রয়েছে বংশীপুর ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ, হাম্মামখানা/হাবসিখানা, যশোরেশ্বরী কালী মন্দির, জাহাজঘাটা নৌ দুর্গ, গোপালপুর গোবিন্দ দেবের মন্দির, জমিদার হরিচরণ রায় বাহাদুরের বাসভবন, নহবতখানা ও মন্দির, ঈশ্বরীপুরের জেযুইট গির্জা উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সময়ে নানা বৈশিষ্ট্য নিয়ে শ্যামনগরে সুন্দরবনের বৃহৎ অংশের অবস্থানের কারণে হাজার হাজার দর্শনার্থী শ্যামনগর ভ্রমণে আসেন। এতসব প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও সবচেয়ে ভয়ংকর হতাশাজনক সত্য হলো, আমাদের দেশের এবং বিদেশের ঐতিহ্য, প্রাচীন স্থাপত্যপ্রেমী দর্শনার্থী এখানে হাতে গোনা। তার কারণ হলো উল্লেখিত নিদর্শনগুলো রক্ষার্থে এখানে আজ পর্যন্ত কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নামমাত্র দুয়েকটি জরাজীর্ণ প্রাচীন নিদর্শনের পাদদেশে, প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা আদৌ নেয়া হয়নি। সে সুযোগে নিদর্শনগুলোর গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বসতি। জমি দখল সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে। তাতেও আমাদের ঘুম ভাঙেনি। কথিত আছে তৎকালীন সময় ঐতিহ্যের শ্যামনগরের নকিপুরে অবস্থিত জমিদার হরিচরণ রায় বাহাদুরের বাসভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে কোন প্রজারা হেঁটে গেলে নাকি জমিদারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য পা থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে জমিদার বাড়ি অতিক্রম করে আবার জুতা পরতো। একসময় কি ছিলো এখানে। কতকিছুই না হতো! কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো শ্যামনগরের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন রায় হরিচরণ রায় বাহাদুরের বাসভবন ‘নকিপুর জমিদার বাড়িটি রক্ষায় এর পাদদেশে নামমাত্র কোন সাইনবোর্ডও এখোনো বসেনি। বর্তমানে প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর নকিপুর জমিদার বাড়ির মূল ভবনটির প্রায় অর্ধেক অংশ ধংসপ্রাপ্ত হয়েছে। আর যে অংশটুকু এখনো টিকে আছে, তা কোনরকম সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনা না থাকায় ধংসের দারপ্রান্তে। এতবড় বড় একটা প্রাচীন নিদর্শন সবার চোখের সামনে তীলে তীলে ধংস হচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ বা সংরক্ষণের দাবি নেই বললেই চলে। যদি কোনো সরকারি উদ্যোগে এই স্থাপনাটি রক্ষা করা যেত, তাহলে প্রচুর সংখক ঐতিহ্যপ্রেমী পর্যটকের ভিড় জমতো এখানে। দেশ বিদেশে শ্যামনগরের আলাদা পরিচিতি হতো, আমরা গর্ব করে বলতে পারতাম, আমাদের রয়েছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, রয়েছে, ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। কিন্তু তা কি বলতে পারবো আমরা? আমরা তো নিতান্তই স্বার্থপর! ভুলে যাই বার বার নিজেদের গর্বের ইতিহাস ঐতিহ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত