ঢাকার কেরানীগঞ্জে শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। সারি সারি শীতকালীন সবজির ক্ষেতে সবজির বাম্পার ফলনই বলে দেয় কৃষকের মুখে হাসি। মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ, শিম, পটোল, শসা ও করলা। কোথাও আবার ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, লালশাকসহ নানা রকমের নতুন নতুন শীতের সবজি ক্ষেত। এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে। চলতি মৌসুমে কেরানীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষের বাম্পার ফলনে ভালো লাভের আশা করছেন কৃষকরা। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর ও রোহিতপুর ইউনিয়নে ব্যাপকহারে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ হচ্ছে। এ সবজি কেরানীগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারেও বিক্রি হচ্ছে।
এ এলাকার সবজির মান ভালো হওয়ায় সবজি ব্যবসায়ীরা জমি থেকে সবজি ক্রয় করে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৮ হাজার মে. টন। হেক্টরপ্রতি ২৪ মে. টন করে সবজি উৎপাদন হওয়ার আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবজি উৎপাদন হলে এ মৌসুমে কৃষকরা ভালো লাভবান হবে বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
হযরতপুর ইউনিয়নের কৃষক আমান উল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে ২৯ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। তিনি এবার গাঁজর, ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো ও কাঁচামরিচের চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। গতবছর তিনি সবজি উৎপাদন করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন। এ আয় দিয়েই তার সারা বছরের সংসার খরচ হয়ে যায়। এ মৌসুমে তার সবজি উৎপাদন আরো বেশি হবে বলে আশা করছেন। তবে এ বছর বীজের দাম বেশি হওয়ায় ও আন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কম হবে বলে ধারণা করছেন। তার উৎপাদিত সবজি জমিতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা ক্ষেতে এসে উৎপাদিত সবজি দেখে দামদর করে এখান থেকেই নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ২০ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করছি। এবার ধনিয়াপাতা, বাঁধাকপি, ওলকপি, ফুলকপি, গাজর, কাচামরিচ ও শিম এর চাষ করছি। ফলন ভালো হয়েছে, আশা করছি সবজি বিক্রি করে ভালো লাভবান হবো। তবে আমার নিজের কোন জমি না থাকায় আন্যের জমি চাষ করায় লাভের একটা বড় অংশ দিতে হয় জমির মালিককে। তারপরও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে ভালো আছি। আমাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে। আমি উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এবার ৩ লাখ টাকা কৃষি লোন পেয়েছি। এতে ভালোভাবে শীতকালীন সবজি চাষ করতে আমার আর কোনো সমস্যা হবে না।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল আমীন বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে কেরানীগঞ্জে এবার শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করছি, কৃষকরা এ মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষ করে ভালো লাভবান হবেন। শীতকালীন সবজি চাষ সফল করার লক্ষ্যে আমরা নিয়মিত কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং কোনো ধরনের সবজিতে কি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে লাভবান হবে সে বিষয় সবসময় সঠিক পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও আমারা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় কৃষি প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সরিষা বীজ, ভুট্টা বীজ, গমবীজ, মরিচের বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার বীনামূল্যে কৃষকদের সরবরাহ করে থাকি।