ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত সারা দিন দেখা মেলে না সূর্য্যের
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
সারা দেশে হাড় কাঁপানো শীতে লোকজন নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বগুড়া : বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েক দিনে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় খেটেখাওয়া মানুষগুলো কষ্টে দিনযাপন করছেন। বগুড়ায় শৈত্যপ্রবাহে শীত বেড়েই চলছে। তীব্র শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘনকুয়াশার কারণে সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচলে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। যানবাহনগুলো দিনের বেলায় আলো জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। সারাদিনই প্রায় সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনের বেলাও থাকছে প্রচন্ডশীত। শীতের প্রকোপে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে শহরের মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। বগুড়াসহ জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে দুপুর পর্যন্ত থাকছে কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ঘনকুয়াশা থাকায় প্রতিদিন তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে।
বগুড়া স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলা মিলিয়ে শীতজনিত কারণে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বগুড়ায় শীতের প্রকোপ সবেমাত্র বেড়েছে। শীত এতদিন কম ছিল। যে কারণে শীতজনতি রোগীর সংখ্যা খুবই কম। শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার সব হাসপাতাল মিলিয়ে ৩০ থেকে ৫৫ জন করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসা পাওয়ার কারণে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে রোগী আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৪৫ জন ডায়রিয়ায় এবং ৭ জন শিশু ও বৃদ্ধশ্বাস কষ্টজনিত রোগে হাসপতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে আরো প্রায় অর্ধশত ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, হঠাৎ করেই বগুড়ায় তীব্র শীত দেখা দিয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া আছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ। তবে এখনো সে হারে রোগী আসছে না। প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগ মিলিয়ে ১২ থেকে ১৫ জন রোগী আসছেন চিকিৎসা নিতে। এদের কেউ কেউ আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে প্রায় ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সপ্তাহজুড়ে এসব কম্বল বিতরণ করেন। শহরের রেলস্টেশন, বিভিন্ন পার্ক ও রাস্তার ধারে বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষের মাঝে এই কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণে উপস্থিত ছিলেন জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা।
বগুড়া রেলস্টেশনে থাকা জমির মিয়া জানান, গত কয়েক দিন হলো বগুড়ায় প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। কখনও রেলস্টেশনে আবার কখনো ফুটপাতে রাত্রি যাপন করি। শীত বেড়ে যাওয়ায় অনেক কষ্টে আছি। রাতে ঠান্ডা বাতাসে ঘুমানো যায় না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কম্বল পেয়েছি। সেটা গায়ে দিয়ে কোন রকম থাকছি। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, শীতের কারণে মানুষের নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর, কাশি, আমাশয় রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এসব রোগে ইতিমধ্যে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি রোগী চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন। সাধ্যানুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা বাড়ছে দিনের পর দিন। গত দুই দিন সূর্য্যের আলোর দেখা মিলছে না। কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতায় দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আরও দুই দিন ঘনকুয়াশা থাকবে। কুয়াশা আর মেঘের কারণে রোদ উঠতে না পারায় কমে গেছে দিনের তাপমাত্রা। বেড়েছে ঠান্ডা বাতাস, জেগে বসেছে শীত। গত দুই দিন সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে।
গত বুধবার বিকালে সূর্য্যের আলো দেখা গেলেও বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার সূর্য্যের আলো একেবারেই দেখা যায়নি। বিকাল থেকে শীতে তীব্রতা বাড়তে থাকে, রাত যতই গভীর হয় ঠান্ডা ততই বাড়তে থাকে। উপজেলা বিভিন্ন এলাকার ঘুরে দেখা যায়, দোকানপাট চৌরাস্তার মাঝে কাঠের গুড়ি, খড় জ্বালিয়ে আগুনের গরম তাপ নিচ্ছেন অনেকে। মহাসড়কে সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে গাড়ি চলতে দেখা গেছে।
এদিকে তীব্র শীত ও কুয়াশার প্রভাবে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক লোকেরাও ঠান্ডায় কাঁপছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, পুরো হাসপাতালজুড়ে ঠান্ডাজনিত রোগী। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুদের আধিক্যই বেশি দেখা গেছে।
রিকশাচালক জহির মিয়া জানান, তীব্র শীত ও ঠান্ডার কারণে রিকশা নিয়ে বের হতে পারছি না। ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হবে, আবার স্কুলের পোশাক তৈরি করতে হবে। ঠান্ডা না কমলে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হবে।
মধুখালী (ফরিদপুর) : ঘনকুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফরিদপুরর মধুখালী উপজেলার জনজীবন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ঘনকুয়াশার দাপট থাকায় মিলছে না সূর্য্যের দেখা। শনিবার দিনভর সূর্য্যের দেখা মেলেনি। দিনে ও রাতের বেলায় খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে নিম্ন আয়ের ও হতদরিদ্ররা। মধুখালী বাজারে বেলা ১১টায় নিম্ন আয়ের সরদার বা কুলি শ্রমিকরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায়। মধুখালীতে বেলা সাড়ে ১১টায় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল দুপুরের পরে অর্থাৎ বিকাল ৪টায় তাপমাত্র বেড়ে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সকালে ঘর থেকে বেরোতে না পারায় বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের খেটেখাওয়া মানুষ।