বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে

বাড়ির আশপাশেই শিমের ফলন তাক লাগানোর মতো

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. ইসহাক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বেড়েছে বিষমুক্ত সবজি চাষ। উপজেলার প্রায় ২০ একর জমিতে ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পে’র আওতায় জৈব বালাইনাশক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধা কপি, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমোর, বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির চাষে ভালো ফলন এসেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি এ উপজেলার কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সবজি চাষে রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে কৃষকরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। সবজিতে এসব কীটনাশকের প্রভাব ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময়ের মধ্যে এসব সবজি মানুষ খেলে এর ক্ষতিকর প্রভাব মানব দেহে বিস্তার করার আশঙ্কা থেকে যায়। অনেক কৃষক না বুঝেই এ সময়ের মধ্যে সবজি বাজারে বিক্রি করে। তাই এসব ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বড়হিত ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলী আকছার খান বলেন, এই কৃষকদের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা অনেক বেশি। বাজারে অন্য সবজির চেয়ে এটির দামও ভালো পাবে আশা করি।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। পরিবেশবান্ধব হলুদ ট্র্যাপ, ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরিতে বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদন জরুরি। এদিকে ঈশ্বরগঞ্জে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আশপাশেই শীতের সবজি শিমের ফলন হয়েছে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। এতে শিম চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি। ঈশ্বরগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারে এখন শিমের সমারোহ। প্রতিদিন এখানকার উৎপাদিত শিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার, উচাখিলা, রাজিবপুর ও আঠারবাড়ি বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বাজারে দেশি জাতের শিমের প্রচুর সরবরাহ। বর্তমানে এখানকার বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা ফসলের ক্ষেত ও স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি দরে শিম ক্রয় করে ট্রাক বা বিভিন্ন যানবাহনে করে তা ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে নিয়ে যান। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ধান শস্যের মাঠ এখন শিম আবাদের একমাত্র ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ঈশ্বরগঞ্জে ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় বারি শিমণ্ড৪, ইপসা ও স্থানীয় জাতের শিমের আবাদ বেশি হয়।

এদিকে রাজিবপুর ইউনিয়নে চরনওপাড়া গ্রামের শিম চাষি মোখলেছ, মো. ফজলুল হক, মো. সালাম মিয়া, মো. লোকমান হেকিম, বাচ্চু মিয়াসহ আরও অনেক কৃষক শিম চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। বদলে ফেলেছেন তাদের নিজেদের ভাগ্য। সাব্বির হোসেন নামে একজন জানান, মৌসুমের প্রথমদিকে শিমের দাম ভালো ছিল। কিন্তু উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে শিমের দাম। তিনি আরও জানান, ফলন বাড়লে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ বছর শিমের বাম্পার ফলনে আমরা খুশি ও লাভবান। অপরদিকে মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছিলেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সেখানে এখন প্রতি কেজি শিম বিক্রি করছেন ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি। বাম্পার ফলন হলেও শিমের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ অনেক কৃষক। ঈশ্বরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রবিকুল ইসলাম জানান, বাজারে বেশি পরিমাণে স্থানীয়ভাবে চাষকৃত শিম আসতে শুরু করেছে। ক্রেতারা অন্য সবজির পাশাপাশি শিম বেশি কিনছেন। পাইকারি ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন জানান, চাষিদের ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় শিম কিনে ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িয়ে আমার ছয় সদস্যের সংসার ভালোই চলছে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, এ অঞ্চলের জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার কৃষক শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে শিম চাষ করে থাকেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সুষ্ঠু পরিচর্যায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ভালো দাম পেতে আগাম ও উন্নত জাতের শিম চাষের পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।