জ্বালানি কাঠের পোড়া কয়লা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার আনোয়ার হোসেন। কম দামে কেনা কয়লা সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার ও বাছাই করে বস্তাবন্দি করেন। এরপর পাঠিয়ে দেন ঢাকায়। সেখানে সেই কয়লা ব্যবহার করা হয় ব্যাটারি তৈরির কারখানায়। প্রতিবস্তা পোড়া কয়লা ৫০০ টাকায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। এই সেদিনের কথা। প্রাথমিকের গন্ডি না পেরোনো আনোয়ার হোসেন বছর দুই আগেও ছিলেন শ্যালোইঞ্জিনচালিত নছিমনচালক। এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। খরচ বাদ দিয়ে এ কাজ করেই প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা আয় করছেন আনোয়ার হোসেন।
কয়লা ব্যবসায়ী আনোয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী, দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার তার। এ কাজে সহযোগিতা করে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় করছেন ২ নারীসহ ৮ জন শ্রমিক। আনোয়ার বলেন, ৬ থেকে ৭ বছর আগে থেকেই দয়রামপুর গ্রামের দুধ জ্বাল দেয়ার কাজে ব্যবহৃত পোড়ানো কাঠের কয়লা ঢাকার বিভিন্ন কারখানায় যায়। সে সময় তিনি কারখানার মালিকদের কাজে সহযোগিতা করতেন। কখনও তার বাড়িতেই কারখানার মালিকরা কয়লা মজুত রাখতেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারি চলাকালে ঢাকার কারখানার মালিকরা কুমারখালী আসা বন্ধ করে দেন। এই ফাঁকে নিজের দুরদর্শিতা কাজে লাগিয়ে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর বাজার এলাকায় প্রায় ১০ শতাংশ জায়গা ভাড়া নিয়ে পোড়া কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় তার কোনো পুঁজি ছিল না। গ্রামের এক মহাজনের কাছ থেকে মাসিক ১০ শতাংশ সুদে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
আনোয়ারের কয়লার ব্যবসার ব্যবস্থাপক শাজাহান আলী বলেন, এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে মাসে প্রায় ১৮ হাজার টাকা পান। এখানে আরও কয়েকজন কাজ করে তাদের সংসার চালান। আনোয়ার গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কেজি ওজনের এক বস্তা কয়লা কেনেন ২৫০ টাকায়। সেই কয়লা পরিবহণ, শুকানো ও মজুতের স্থান ভাড়া, শ্রমিকদের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় আরও ১০০ টাকা। আর প্রতিবস্তা কয়লা বিক্রি করেন ৫০০ টাকায়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ হাজার বস্তা কয়লা বিক্রি করেন। এতে তার খরচ হয় ৮ লাখ টাকা এবং বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকায়। বর্তমানে আনোয়ারের এ কাজে দুইজন নারীসহ মোট ৮ জন শ্রমিক সহযোগিতা করছেন। একজন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরি পান আর পুরুষ শ্রমিকরা মজুরি পান ৪৫০ টাকা। ভ্যানগাড়িসহ শ্রমিক রয়েছেন দুইজন। তারা প্রতিদিন ৬০০ টাকা করে মজুরি পান। কয়লার পাশাপাশি তিনি ধান থেকে চিড়া তৈরির কারখানা করেছেন। সহজ শর্তে সরকারি ঋণ বা সহযোগিতা পেলে বড় পরিসরে করতে চান কয়লার ব্যবসা। নির্মাণ করতে চান একটি ধান থেকে মুড়ি তৈরির মিল। কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, কয়লা উদ্যোক্তাকে সরকারি ঋণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।