ইংল্যান্ডের নলকূপ বিকল

বছরে সোয়া কোটি টাকা ক্ষতি

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাগর আহম্মেদ, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

দেশের সব অনাবাদি জমিতে চাষবাদের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে। ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে রপ্তানি। অথচ ইংল্যান্ডের গভীর নলকূপ বিকল হয়ে বাংলার শতাধিক কৃষকের জমি অনাবাদি রয়েছে। তিন ফসলি জমি পতিত থাকায় বছরে সোয়া কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষক। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে গত দুই বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। তাদের অভিযোগ, সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও এমন ক্ষতির হাত থেকে কোনো সুরহা পাচ্ছেন না।

সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিতে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলার মানুষ। যদিও শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটলেও এখনো অন্যতম কৃষিনির্ভর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ফলে কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই গুরুত্ব আরোপ করেছে বাংলার মানুষ। দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন সরকার ইংল্যান্ড থেকে ডিজেলচালিত রাষ্টন মেশিন এনে বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় তৎকালীন সমবায় মন্ত্রী মরহুম শামসুল হক বিনামূল্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর হিজলতলী এলাকায় ওই ইংল্যান্ডের নলকূপের ব্যবস্থা করেন। প্রতি মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন অফিসে ৫ হাজার টাকা দিতে হতো। কিন্তু নানা জটিলতায় ১০/১২ বছর পর ডিজেলচালিত মেশিন বাদ দিয়ে ওই নলকূপে বৈদ্যুতিক মোটর লাগানো হয়। সে সময় ওই নলকূপের আওতায় প্রায় ৩ শতাধিক বিঘা তিন ফসলি জমি চাষ করা হতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফসলি জমির বেশিরভাগ অংশ ইটভাটা ও বসতবাড়িতে বিলীন হয়ে গেছে। বছর দশেক আগে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় স্থানীয় খলিলুর রহমান মুন্না মাস্টারের কাছে ওই নলকূপটি কিস্তিতে বিক্রি করে বিএডিসি ও বিআরডিসি অফিস। এরপর তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপটি চালিয়ে আসছিলেন। গত ২০২১ সালের মৌসুমেও ওই নলকূপের আওতায় শতাধিক কৃষকের প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে চাষবাদ হয়েছিল। মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০ মণ ইরি, ১৫-১৬ মণ রূপা ধান এবং ৮-১০ মণ শরিষা উৎপন্ন হতো। এর বাজার মূল্য হিসেবে প্রতি বছরে যার প্রায় সোয়া কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। কিন্তু ২০২২ সালে ওই পরিমাণ জমি চাষবাদ হলেও অর্ধেক সময়ে নলকূপটি বিকল হয়ে পড়ে। ফলে ওই বছরের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এরপর খলিলুর রহমান মুন্না মাস্টার ওই নলকূপটি মেরামতের জন্য বিভিন্ন টেকনিশিয়ান ও মিস্ত্রিদের দেখিয়েছেন। কিন্তু যে ধরনের কারিগরি সহযোগিতা, মেশিনপত্র ও যন্ত্রাংশের অভাবে মেরামত করতে পারেনি। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস, জেলা-উপজেলা (বিএডিসি) সেচ প্রকল্প অফিসে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। এসব দপ্তরের কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। ফলে এখনো বিকল অবস্থায় নলকূপটি দাঁড়িয়ে আছে। পানির অভাবে চাষবাদ না হওয়ায় দুই বছরে শতাধিক কৃষক প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে আরো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সরকার কোনো প্রদক্ষেপ না নিলে কৃষি জমি পতিতই থাকবে। আর উৎপাদন না হলে কৃষকের সঙ্গে দেশবাসীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নলকূপের দায়িত্বে থাকা খলিলুর রহমান মুন্না মাস্টার, স্থানীয় কৃষক আব্দুর রউফ, আব্দুল লতিফসহ আরো অনেকে জানান, স্বাধীনতার পর আমাদের কালিয়াকৈরের তৎকালীন সমবায় মন্ত্রী মরহুম শামসুল হক উদ্যোগ নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে এনে বিনা পয়সায় এখানে এ গভীর নলকূপটি বসিয়ে দেন। আরো বিভিন্ন এলাকায় এ নলকূপ দেয়া হয়। আমাদের নলকূপটি নষ্ট হওয়ায় ২/৩ ফসলি জমিও পতিত পড়ে আছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে হতাশায় আছি। সরকারি দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। এখন খাওয়া-পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গাজীপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী জুয়েল মিয়া জানান, ১৯৯০ সালের দিকে সরকারের নির্দেশনায় বিএডিসি এবং বিআরডিসির যৌথ উদ্যোগে এসব গভীর নলকূপ কিস্তিতে বিক্রি করা হয়। এগুলো এখন সরকারি প্রকল্প নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রজেক্ট। এছাড়া নুতন করে ওই প্রকল্প হচ্ছে না। তবে নতুন করে প্রকল্প করার জন্য আমরা প্রস্তাব রেখেছি। নতুন প্রকল্প করে প্রকল্প হলে কোনো ব্যবস্থা করা যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, সেচের বিষয়টি দেখে বিএডিসি অফিস। কৃষকদের সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন। সেচের উৎপাদন ব্যাহতের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই এলাকায় ভুট্টাসহ বিকল্প উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।