চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী উপজেলার মধ্যবর্তী শঙ্খ নদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুর দক্ষিণ পাড়ে বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম পুকুরিয়া এলাকায় ভোরে সবুজ-হলুদের সংমিশ্রণে অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি ফল বাঙ্গি ও তরমুজের হাট বসে। সড়কের দুই পাশেই বাঙ্গির স্তূপ। ভোরের আলো ফুটতেই জমে ওঠে বেচাকেনা। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে এ হাট। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে ওই ব্রিজের পূর্ব পাশে বাঁশখালী পুকুরিয়া ইউনিয়নে বাঙ্গি-তরমুজের হাট বসে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের বাঙ্গির দাম ২০০-৩০০ টাকা, মাঝারির দাম ১৫০-২০০ টাকা এবং ছোটটির দাম ৮০-১৪০ টাকা। প্রতিদিন দুই শতাধিক ব্যবসায়ী সকালে সূর্য উদয় হওয়া থেকে শুরু করে রাত পযর্ন্ত এ ফল বিক্রি করেন সাধারণ যাত্রীদের কাছে। এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প পিএবি প্রধান সড়ক দিয়ে আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া (আংশিক), পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া-মহেশখালীসহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলাচল করা যাত্রীরাও গাড়ি থামিয়ে কিনে নেন সুস্বাধু এসব ফল। সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার পুকুরিয়া চাঁদপুর তৈলারদ্বীপ ব্রিজের দুই পাশেই প্রধান সড়কে বাঙ্গি বিক্রি করতে আসা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের শুরুর দিকে প্রথম কয়েকজন চাষি সড়কের উপর বাঙ্গি রাখতেন স্তূপ করে। প্রতিনিয়ত পথচারীরা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে নিয়ে যেতেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও ওখানে বাঙ্গি ও তরমুজের হাট বসাতে শুরু করেন।
পুকুরিয়ার চাঁনপুর এলাকার চাষি আবদুল মান্নান ও মো. ছগির বলেন, এ বছর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং পোকার উপদ্রব কম থাকায় বাঙ্গির লাভজনক উৎপাদন হয়েছে। তাই তো পুকুরিয়া অংশের শঙ্খ নদীর তীরে আমাদের মতো চাষিরা খুশিতে আত্মহারা। উৎপাদিত ফসল নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকে। গত ৭-৮ বছর ধরে এই সড়কে আমরা খুচরা দামে বিক্রি করি। সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত এই সড়কে চলাচলকারী পথচারীরা এখান থেকে বাঙ্গি ও তরমুজ ক্রয় করে। এতে করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা কমে গেছে আমাদের। চট্টগ্রাম শহর থেকে মহেশখালী যাওয়ার পথে কালমারচড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রাম শহর থেকে মহেশখালী যাওয়ার পথে এখান থেকে প্রতিনিয়ত বাঙ্গি ক্রয় করি। এখানকার বাঙ্গি অত্যন্ত মজার সুস্বাধু। দামেও কম। বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার আবু ছালেক বলেন, বাঙ্গির বাম্পার ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। যে কোনো সহযোগিতার জন্য আমরা কৃষদের পাশেই আছি। অনেক কৃষক আমাদের থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা এবং পরার্মশ নিয়ে থাকে। উপজেলার কয়েকটি এলাকার মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাঙ্গি চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়। কৃষকরা আরো একটু পরিশ্রমী হলে বহুমুখী ফসল উৎপাদন করে আরও বেশি সফল হতে পারবে।