যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৪২ সালের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কবির জন্মদিনে মধুমেলা উদ্বোধন করেন এবং সাগরদাঁড়িকে ‘মধুপল্লী’ হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৪ বছরেও এর কোনো কার্যক্রম শুরুই হয়নি। কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাঁড়ির দূরত্ব ১৩ কিলোমিাটার। পিচের রাস্তা কিন্তু বন্ধুর পথ। যেহেতু কবির বাবা জমিদার ছিলেন। কালের আবর্তে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ভূ-সম্পত্তি এখন বেহাত হয়ে গেছে। ১৮৬৫ সালে পাক-সরকার কবি ভক্তদের থাকার জন্য চার শয্যাবিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ বানিয়েছিল। ১৮৮৫ সালে কবির বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যস্ত করে। কবির মূলবাড়ি সংলগ্ন আম বাগানে অবস্থিত আবক্ষ মূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জমিদারবাড়ির অসংখ্য ঘরের পলেস্তারা নতুন করে করেছে। একটি ঘরে কবির ব্যবহৃত অনেক কিছুই ঠাঁই পেয়েছে। ১৮৮৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়ির পুকুরসহ পুরো এলাকাটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। যে বজরায় কপোতাক্ষ নদীতে কবি সস্ত্রীক অবস্থান করেছিলেন সাত দিন। সেখানে একটি পাথরের খোদাই করে লেখা আছে ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। কবিতা সংবলিত এই জায়গাটি ‘বিদায় ঘাট’ নামে খ্যাত। কবি মধুসূদনের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি ঘিরে রয়েছে অনেক স্মৃতি অনেক বেদনা কাহিনী।
সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন একাডেমি নামে একটি পাঠাগার রয়েছে। যেখানে মাইকেলের পিতা- পিতামহের আমলের অনেক দুর্লভ ছবি এবং অনেক চিঠিপত্র সংরক্ষিত আছে। স্বাধীনতার পর এখানে মাইকেল মধুসূদন একাডেমি এবং সাগরদাঁড়ি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুসজ্জিত মঞ্চ এবং অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে। কবির বাড়ি সংলগ্ন আমবাগানটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য লোক সাগরদাঁড়িতে পিকনিক করতে আসে। এ ছাড়া শিক্ষা সফরে আসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কবির অনেক আত্মীয়স্বজনও প্রতি বছর ভারত থেকে এসে থাকেন। এর ফলে একদিকে সরকার যেমন লাভবান হবেন তেমনই বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত আরও বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠবেন।