জমিতে রোপণের পর পরই মরে যাচ্ছে পেঁয়াজের চারা। কিং জাতের পেঁয়াজ বীজ কিনে জমিতে চারা রোপণের পর চারায় শিকড় গজাচ্ছে না। ধীরে ধীরে চারার মাথা মরে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। কোনো কিছুতেই প্রতিকার পাচ্ছে না চাষি। ফলে পেঁয়াজ চাষাবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পেঁয়াজ চাষিরা। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ৭৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ২৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের সান্দিয়ারা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রায় ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন। চারা রোপণের পর প্রায় ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে জমিতে দুবার সেচও দিয়েছেন। কিন্তু চারা বড় হওয়ার পরিবর্তে চারার মাথা হলুদ হয়ে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। সান্দিয়ারা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, শফিকুলসহ এই গ্রামের শতাধিক চাষি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে ও বীজ ব্যবসায়ী মো. কামির হোসেনের কাছ থেকে ২০০ কেজি ভারতের বীজ কিনেছিলেন। তার ২ বিঘা জমির পেঁয়াজসহ সব কৃষকের পেঁয়াজই মরে যাচ্ছে। চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান তুষার বলেন, প্রতি বছর প্রণোদনায় কৃষকদের নাম না পাঠিয়ে বিপাকে পড়তেন তিনি। এবছর পেঁয়াজের চারা মরে যাওয়ায় প্রণোদনাপ্রাপ্ত কৃষকরা পথেঘাটে তাকে অপমান-অপদস্ত করছেন। যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তার ইউনিয়ন থেকে এ বছর ১৭ জন কৃষক পেঁয়াজের প্রণোদনা পেয়েছিলেন। ১৭ জনেরই চারা মরে গেছে। কৃষকদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এদিকে পান্টি ইউনিয়নের ডাঁসা গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী কামির হোসেন চাষিদের পেঁয়াজ চারা মারা যাওয়ার খবর জানার পর থেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। বাজারে ভেজাল বীজ থাকা অস্বাভাবিক নয় স্বীকার করে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ির) উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, আমরা কৃষকদের বারবার সতর্ক করছি ডিলার ছাড়া অনুমোদিত বা অন্য কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনো ধরনের বীজ ক্রয় না করার জন্য। কিন্তু অনেক সময় কৃষকরা ডিলারদের কাছ থেকে বীজ না কিনে অন্য জায়গা থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলার মধ্যে কুমারখালী উপজেলায় বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। চারা রোপণের পর চারা হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। তিনি জানান, সাধারণত ১৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। শৈত্যপ্রবাহ চলাকালীন সময়ে যদি চারা রোপণ করা হয় তাহলে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে পেঁয়াজসহ যে কোনো চারা মারা যাওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। আমরা কৃষকদের অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়লে চারা রোপণ না করার জন্য বারবার সতর্ক করলেও তারা আমাদের কথা কর্ণপাত করেনি।