বগুড়ার প্রধান প্রধান নদীগুলো মরে যাচ্ছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীর পানি দূষণ, পলি পরে ভরাট, নদী বুকে চাষাবাদ, অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, ড্রেনের প্রবাহ, ময়লা অবর্জনা ফেলা, কলকারখানার বর্জ ফেলাসহ নদীর দুই পার ইচ্ছেমতো দখলের কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। যমুনা, বাঙালি ও করতোয়াসহ অন্য উপনদীগুলো ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়া বিভাগ সূূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় ও বর্ষাকালে যমুনা নদী কানায় কানায় ভরে ওঠে ভয়াবহরূপ ধারণ করে। এই কারণে নদীর তীর ভেঙে তলদেশে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরে যাচ্ছে। ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা যমুনা গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। একারণেই দিন দিন নদীর গভীরা হ্রাস পাচ্ছে। যমুনা নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় একদিকে বন্যা বাড়ছে অপর দিকে পলি পরে নদীর যৌবন হারিয়ে যাচ্ছে। সে পলিতে কৃষি কাজ করছে স্থানীয় চাষীরা। ১২২ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর গোড়া পত্তন হলেও সেই সভ্যতার সাথে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটার। এরমধ্যে দখল আর ভরাটের কারণে এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা। জেলায় শাখা নদী রয়েছে গজারিয়া, সুখদহ, ইছামতি, নাগর, গাংনাই। খাল রয়েছে ২৫টি। জানা যায়, যমুনা নদী ৪০ বছর আগে সারিয়াকান্দি শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে সারিয়াকান্দি শহর হতে যমুনা নদীর দুরত্ব মাত্র কয়েকশ মিটার। ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের বৈচিত্রময় এ নদীটির ইতিহাস সুপ্রাচীন। আন্তর্জাতিক নদী গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, যমুনা নদী এককালে রংপুর, বগুড়া, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অপরদিকে নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী থেকে বাঙ্গালী নদীর জন্ম। বাঙ্গালী নদী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালি হয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করে। তিনটি উপজেলা শহরের কোন কোন স্থানে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্তাও করা হয়েছে। যা পানি দুষিত হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে। শহরের মহাস্থানগড় থেকে শাজাহানপুর থানার প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রভাবশালীরা যে যেখানে পেরেছে ইচ্ছেমত দখল করে নিয়েছে।
বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, নদীগুলোর নব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে ওঠে। এতে করে নদীর তীরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। নদী ভাঙার কারণে প্রতি বছর তলদেশে পলি জমে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রতি বছর উজান থেকে হাজার হাজার টন পলি নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমে যাচেছ। যে কারণে নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলোর প্রাণ ফিরে নিয়ে আসতে মোট ২২৩ কিলোমিটার খনন করা হবে।