ধান ছেড়ে ভুট্টায় ঝুঁকছেন নকলার কৃষক

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর)

ভুট্টা চাষে দ্বিগুণ লাভ পাওয়ায় শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার কৃষকরা ধানের আবাদ ছেড়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। নামমাত্র শ্রমে, সামান্য সার ও অল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় শস্য ভাণ্ডারখ্যাত এ উপজেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ভালো দাম থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ পতিত থাকা বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটির মাঠজুড়ে শুধু বুট্টার ক্ষেত নজরে পড়ে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার প্রায় সব বেলে ও বেলে দো-আঁশ মাটির জমিতে এবং বাড়ির পাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধি ও কৃষকের অধিক আগ্রহের কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার উপজেলায় ভুট্টা চাষে অর্জন হয়েছে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০.৪ মেট্রিক টন হারে উপজেলায় ভুট্টার মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, উপজেলায় এ বছর পাইওনিয়ার, এনকে-৪০, সুপার সাইন ও প্যাসিফিক জাতের ভুট্টা চাষ বেশি করা হয়েছে। এরমধ্যে, রাজস্ব খাতের আওতায় ২০টি প্রদর্শনী প্লট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি প্রদর্শনী প্লটে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহিন রানা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে সরকারি কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। প্রতি কৃষককে একবিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করার জন্য দুই কেজি করে ভুট্টার বীজ, ২০ কেজি করে ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ১০ কেজি করে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার প্রদান করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) আনোয়ার হোসেন, সারোয়ার জাহান শাওন ও আশরাফুল আলমসহ অনেকে জানান, তারা নিজ নিজ কর্ম এলাকার ভুট্টা চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাছাড়া কৃষকরা সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে এ বছর ভুট্টা আবাদে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়েছে; এমনকি গত বছরের চেয়ে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে ৫০০ হেক্টর। আগামীতে উপজেলায় এই আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন। ভুট্টার পাইকারি ক্রেতা ও মজুদ ব্যবসায়ীরা বলেন, অন্যান্য শস্য কিনে মজুদ করলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে, এমনকি পোকার আক্রমণ হলে নিশ্চিত লোকসান গুণতে হয়। কিন্তু ভুট্টাতে তাদের আজ পর্যন্ত লোকসান গুণতে হয়নি। তাই দিন দিন ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। ফলে নকলায় ভুট্টা চাষির সংখ্যা ও পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে বলে তারা জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উপজেলার চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা, গনপদ্দী, নকলা, গৌড়দ্বার, চরঅষ্টধর ইউনিয়নসহ উপজেলার সর্বত্রই ভুট্টার আবাদ হলেও চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, উরফা, গনপদ্দী ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নে এ বছর বেশি ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।