ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পদ্মায় ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে

উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

পদ্মা সেতুর পর দ্বিতল হিসেবে পদ্মা রেল সেতু ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের একটা অংশ। এ সেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ বাসিন্দারা পদ্মায় দ্বিতল সেতু হিসেবে রেল সেতু নির্মাণে যোগাযোগের এক নতুন দ্বার উন্মোচনের প্রতিক্ষায় দিন গুনছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক জেলায় এখনও নেই কোন ট্রেন যোগাযোগ। পদ্মায় দ্বিতল সেতু হিসেবে রেল সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ৪টি নতুন জেলায় চলবে এই ট্রেন। এতে মানুষের সহজ যোগাযোগের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন সংযুক্ত হওয়া জেলার বাসিন্দারা। শরীয়তপুর জেলায় চলছে এই রেললাইন নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। ঢাকাণ্ডমাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা, ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত তিন ধাপে চলছে রেললাইন নির্মাণ কাজ। যেখানে ছিল না আদৌ কোনো রেল যোগাযোগ। পদ্মায় দ্বিতল রেল সেতু থেকে নেমে এই লাইন যাবে নড়াইল পর্যন্ত। নতুন রেল লাইন নির্মাণ কাজ দেখে খুশি ঐসব জেলার বাসিন্দারা। ট্রেনে চড়ার স্বপ্ন তাদের ঘনিয়ে আসছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় দুটি সেতু। নিচে রেল সেতু, ওপরে ছয় লেনের সড়কপথ। নিচে ট্রেন চলবে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। এটা ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটা অংশ। পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঢাকাণ্ডযশোর রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে এই সেতু। ঢাকার জুরাইন থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত হচ্ছে উড়াল রেলপথ। এই অংশের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গায় নৌযান চলাচল যাতে নির্বিঘœ থাকে সেজন্য পানি থেকে ২০ মিটার উচ্চতায় নির্মিত হচ্ছে রেল সেতু। ঢাকাণ্ডমাওয়া রেল প্রকল্পের ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট ইনচার্জ আমিনুল করিম বলেন, ধলেশ্বরী রেল সেতু ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জকে সংযোগ করবে। এই সেতুর ৫টি স্প্যানের মধ্যে ২টি বসানো হয়েছে। বাকিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। একই সঙ্গে ঢাকাণ্ডমাওয়া রেলপথ নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।

জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং সব কিছু পেরিয়ে সুবিশাল এই কর্মকাণ্ড মাঠ পর্যায়ে শুরু হয় পরবর্তী বছর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পটির আওতাধীন রয়েছে ২৩ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ভায়াডাক্ট বা উড়াল রেল সেতু, ৫৯টি বড় দৈর্ঘ্যরে সেতু, ১৪২টি কালভার্ট ও ১৩৫টি আন্ডারপাস। জনগণের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহণের সুবিধার্থে এই প্রকল্পে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ১৬টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ৪টি পুরাতন স্টেশনের সংস্কার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।

প্রকল্পটিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, নড়াইল ও মাদারীপুরকে নতুন করে সরাসরি রেল সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা বন্দরকেও সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে এই নির্মাণ কাজে। সর্বোপরি কাজ বাস্তবায়ন শেষে এ রেল ব্যবস্থা হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আনুমানিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে আশা করছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেল-লাইন পরিচালনায় থাকছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার বেস্ড রিলে ইন্টারলক্ড সিগনালিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দ্রুতগতির পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক রেললাইনে সকল সুযোগও উন্মুক্ত থাকছে।

বর্তমান সরকারের দেয়া বহু প্রতিশ্রুতির মধ্যে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় রেললাইনের শতভাগ কাজের মধ্যে এরই মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া সেকশনে কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা সেকশনে কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর সেকশনের কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে গড়ে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। বর্তমানে পদ্মা মূল সেতুতে মাওয়া এবং জাজিরা দুই প্রান্ত থেকে পাথরবিহীন রেললাইন বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মা মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিমি. এর মধ্যে ২ দশমিক ৯৯ কিমি. সম্পন্ন হয়েছে; যা মূল সেতুর দৈর্ঘ্যরে ৪৯ শতাংশ।

আগামী মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেল লাইনের কাজ সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে সিএসসি এবং সিআরইসির প্রতিনিধিরা নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেলপথ।

বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০ তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের সার্বিক কাজের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের যে অগ্রগতি হয়েছে তা সন্তোষজনক। আগামী জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলবে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের রেল প্রজেক্টের মেয়াদ আছে। আগেই ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত রেলসংযোগ করা হয়েছে। আর আগামী জুনের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত কাজ শেষ হবে। কাজের সুবিধার জন্য ঢাকা থেকে গে-ারিয়া পর্যন্ত রেলের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত