ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝুট কাপড়ের দড়ি তৈরিতে স্বাবলম্বী

ঝুট কাপড়ের দড়ি তৈরিতে স্বাবলম্বী

নওগাঁয় ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা। এক সময় যাদের অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী এখন তাদের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরির পর তাদের অভাব দূর হতে শুরু করেছে। জেলার সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় অন্তত ৫ হাজার গ্রামীণ নারীরা এ দড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসব গ্রামীণ নারী। পাশাপাশি পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের সহযোগিতা করছে। এসব দড়ি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

জানা গেছে, ইলশাবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে ঝুট কাপড় থেকে এ দড়ি তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়। গত প্রায় দেড় যুগ আগে তিনি এসব কাপড় থেকে মাদুরে (সপ) মুড়ি সেলাইয়ের কাজে লাগাতেন। পরবর্তী সময় তার হাত ধরে দড়ি তৈরি শুরু হয়। গ্রামের গৃহবধূরা এক সময় সাংসারিক কাজ শেষে অলস বসে থাকলেও এখন দড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। এসব দড়ি পানের বরজ ও বিভিন্ন বাগানে গাছ বাঁধার কাজে ব্যবহার করা হয়। টেকসই হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।

এসব দড়ি তৈরির উপকরণ ঝুট কাপড় স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রকারভেদে ২৫ টাকা এবং ৫০ টাকা কেজি দরে কেনা হয়। যার প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি এবং ৮০ কেজি ঝুট কাপড় থাকে। যে দামে ঝুট কেনা হয় দড়ি বিক্রির পর তার অর্ধেক লাভ হয়। তবে দড়ির দাম কমে যাওয়ায় এখন লাভের পরিমাণ কমেছে বলে জানান কারিগররা।

সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে দড়ি তৈরি। প্রতিটি মেশিন দিয়ে দিনে অন্তত ১০০-১৫০ পিস দড়ি তৈরি হয়। এ কাজে পুরুষরা সহযোগিতা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি মায়েদের দড়ি তৈরি কাজে সহযোগিতা করছে শিক্ষার্থীরাও।

সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী সরদার পাড়া গ্রামের গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বলেন, গরিব মানুষ অভাবী সংসার। স্বামী ভ্যান চালিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালায়। গত ৮ বছর থেকে দড়ি তৈরির কাজ করছি। পাইকারদের কাছ থেকে ঝুট কাপড় ২৫ টাকা কেজি হিসেবে কিনে নিয়ে আসা হয়। ৮ কেজি দড়ি থেকে প্রায় ১২ হাতের ১০০ পিস দড়ি তৈরি হয়। যার পাইকারি মূল্য ৩৫০ টাকা। এ কাজ করে খরচ বাদে মাসে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা আয় হয়। এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে আয় করছি। সংসার মোটামুটি ভালোই চলছে।

একই গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আরা বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে অধিকাংশ সময় গল্প করে সময় কাটাতে হয়। এ সময়টুকু এখন বসে না থেকে দড়ি তৈরি করে বাড়তি লাভ হচ্ছে। গত ১০ বছর থেকে দড়ি তৈরির কাজ করা হচ্ছে। প্রতি মাসে খরচ বাদে প্রায় ৪ হাজার টাকা আয় থাকে। বাড়তি আয়ে সংসার ভালো চলে। সংসারের উন্নয়ন হয়েছে। একটা মেশিনে তিনজন কাজ করে একসঙ্গে দুইটি দড়ি তৈরি হয়। একজন মেশিনে থাকে আর দুজন ঝুট কাপড় ছেড়ে দেয়। আর যদি দুইজন হয় তাহলে একজন মেশিনে থাকে অপরজন কাপড় ছেড়ে দেয়। দুইজনে দিনে শতাধিক দড়ি তৈরি করা যায়।

রানীনগর উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী নাইম ইসলাম বলেন, আমাদের কাছ থেকে কারিগররা প্রকারভেদে ২৫ টাকা এবং ৫০ টাকা কেজি দরে ঝুট কাপড় কিনে নিয়ে যায়। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি থেকে ৮০ কেজি ঝুঁট কাপড় থাকে। ৮ কেজি (২৫ টাকা হিসেবে ২০০ টাকা) ঝুট কাপড় থেকে ১২ হাত লম্বা ১০০ পিস দড়ি তৈরি হয়। ১০০ পিস দড়ির পাইকারি মূল্য ৩৫০-৪০০ টাকা। যার খুচরা মূল্য ৪৫০-৫০০ টাকা। দড়ি তৈরি হলে তাদের কাছ থেকে পাইকারি দরে আমরা কিনে নেই। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব দড়ি বগুড়া, রাজশাহী ও নাটোরসহ কয়েকটি জেলায় বিক্রি করা হয়। জেলার সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় অন্তত ৫ হাজার গ্রামীণ নারীরা এ দড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বলেন, বিভিন্ন গ্রামে নারীরা কুটির শিল্প বা হস্তশিল্পের কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে পুরুষদের পাশাপাশি স্বাবলম্বি হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুট কাপড়ে দড়ি তৈরি করে গ্রামীণ নারীরা এখন তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছে। নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। তারা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। নারীদের যদি আরেকটু কাজ করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে তাদের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত