বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ছন

প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  গোলাম কাদের, পটিয়া (চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের গ্রামীণ এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতি বছর জানুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়িঘরে পুরোনো ছন সরিয়ে নতুন ছন ব্যবহার করেন। এ সময় গ্রামবাংলার মানুষ ব্যস্ত থাকে ঘর ছাউনিতে। অর্থাভাবে টিনের পরিবর্তে ছনকে তারা ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করেন। অক্টোবর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পাহাড়ে ছন কাটা উৎসব চলত। কিছুদিন শুকানোর পর তা বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। একসময় পাহাড়গুলো এলাকাভিত্তিক ছনখোলা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি এলাকার ছন। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ এখন পাকা-আধাপাকা বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করছে টিনকে। ফলে গ্রামবাংলা থেকে ছনের ব্যবহার ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।

ছন বিক্রেতা আবু ছালেক, দিদারুল আলম ও মো. ইউনুছ জানান, এখন কেউ পাহাড়ে ছনের চাষাবাদ করছে না। কারণ, ছন এখন মানুষের ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজন হয় না। তারা জীবিকা নিবাহের জন্য ১৫ থেকে ২০ জন মিলে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ের গহিন জঙ্গল থেকে ছন কাটা হয়। ছন শুকানোর পর পাহাড় থেকে প্রতিজনে একটি করে বোঝা নির্দিষ্ট স্থানে জমা রাখেন। এভাবে তারা শুষ্ক মৌসুমে গহিন জঙ্গল থেকে ছন এনে মজুদ করে রাখেন। এ ছন বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ছন শুধু পান চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে এটি ছনের বোঝা ৪ থেকে ৬ শত টাকায় বিক্রি হয়। বর্ষা মৌসুম হলে এ ছনের দাম দ্বিগুণ দামে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়ি ছন থেকে উন্নতমানের সুতা ও দড়ি উৎপন্ন হয়। উপজেলার হাটবাজারে সপ্তাহে দুই দিন ছনের হাট বসত। প্রতি হাটে শত শত ভার ছন উঠত। জানুয়ারি মাস থেকে হাটবাজারে ছন আসা শুরু হয়। বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রামীণ এলাকার ঘরবাড়িতে ছাউনি হিসেবে ছনের ব্যবহারে ধুম পড়ে যায়। প্রায় পরিবার ছনের ওপর নির্ভরশীল। বছর গত হলে ঘরের ছাউনিতে ছনের প্রয়োজন হয়। গ্রামীণ এলাকার লোকজন জ্বালানি এবং গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ছন ব্যবহার করেন। কিন্তু কালক্রমে গরিবের ছাউনি সেই ছন হারিয়ে যেতে বসেছে।