ভরাট হয়ে নালায় পরিণত হয়েছিল খালগুলো। পাড়ে গাছগাছালি ও লতাপাতায় হাঁটা যেত না। অনেক স্থানে জোয়ার-ভাটার পানি আসা-যাওয়া ছিল বন্ধ। এতে খালের পাশে আবাদি অনেক জমি জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। খালগুলো খননের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হয়েছে। দুই পাড়ে মাটি দিয়ে বাঁধাই করে তৈরি করা হয়েছে হাঁটার রাস্তা। সহজে জোয়ার-ভাটার পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা শ্রীরামকাঠীতে ৯টি খালের প্রায় ১১ দশমিক ৯২৫ কিলোমিটার খননে এই চিত্র বদলে দিয়েছে। সরকারের সুদূরপ্রসারী টেকসই ও মেগা বিভিন্ন প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমে দিন বদলের পালায় বদলে গেছে পিরোজপুর।
পিরোজপুরের উত্তরের উর্বর জমি সমৃদ্ধ জনপদের নাম নাজিরপুর উপজেলা। জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি. দূরত্বে নাজিরপুর উপজেলার অবস্থান। উপজেলার ৯ ইউনিয়নেই বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ইউনিয়নে শুকনো মৌসুমে পানির আঁধার হ্রাস পাওয়ায় আউস ও বোরো ফসলসহ বিভিন্ন ফসল আবাদে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রামের ভেতর থেকে বয়ে যাওয়া প্রধান খাল ও শাখা খালগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ হ্রাস পেয়েছে, ফলে প্রতিবছর শত শত একর ফসলি জমি অনাবাদিসহ কৃষকরা সেচ দিতে না পারায় ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের মার খাচ্ছেন। নাজিরপুর উপজেলায় (এ বছর) চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।
নাজিরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌল বিভাগ জানায়, অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন খালের নাব্য সংকটের ফলে পানি সেচ ব্যবস্থাপনায় কৃষকরা তাদের আবাদি ফসল উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ধরে রাখতে পারছেন না। পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের নির্দেশনায় এ বছর উপজেলার মোট ১ হাজার হেক্টর জমির অভ্যন্তরীণ ১১ দশমিক ৯২৫ কিমি. খাল খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ ভাগ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ চলতি বছরের (২০২২-২০২৩) জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এজন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১২ লখ ৬৮ হাজার টাকা। এলজিইডি নাজিরপুর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. জাকির হোসেন জানান, উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের জয়পুর, ভীমকাঠি ও কালিকাঠি গ্রামে এজন্য ৯টি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে মোট জমির ৭৯০ হেক্টরে অতিরিক্ত ৩০ ভাগ বোরোসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হবে। একই সঙ্গে খালের প্রবাহিত পানির সঙ্গে পলি এসে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ সেচ কাজে আসবে গতিশীলতা এবং বাঁচবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
এ গ্রামে বসবাস কৃষান মানিক বড়াল, শ্যামল মিস্ত্রি ও পরশ মিস্ত্রি এবং কৃষানি শিখা রানী বড়াল জানান, আমাদের এলাকার জমি খুবই উর্বর হওয়ায় এই জমিতে রবিশস্যের ভালো ফলন হতো। কিন্তু পুকুর, খাল থেকে জমিতে পানির জন্য বসানো হয়েছে বড় বড় পাইপ। অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অনা বৃষ্টির মধ্যে পড়তে হতো আমাদের। খালটি সংস্কার না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে জোয়ার-ভাটার পানি চলাচল করে না। খালের দুই পাড়ের পাশের জমিগুলোতে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকত। আমরা নিজেদের জমি বিক্রি করতে চাইলেও ভালো মূল্য পেতাম না। সম্প্রতি খাল খননের জন্য এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশনায় এ বছর খাল খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা করা হচ্ছে বলে উপকারভোগীরা জানান। স্থানীয় নাগরিক ও উপকারভোগী এসএম রোকনুজ্জামান জানান, গ্রামীণ জনপদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভরাট খালগুলো উদ্ধার করে খনন ও পুনঃখনন করা হলে একদিকে যেমন খালের নাব্য ফিরে আসবে, তেমনি ফসলের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন বাড়বে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বেপারী জানান, বড় খালগুলো অনেক দূরে হওয়ায় জোয়ারভাটার পানি চলাচল হতো না এই খাল দিয়ে। এতে বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে খালের দুই পাশে শত শত একর জমি আনাবাদি থেকে যেত বর্ষায় গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলো ডুবে থাকত পানিতে। মাঝে মাঝে জমি থেকে খালে পানি নামার জন্য বসানো হয়েছে বড় বড় পাইপ। খালের পাড়ে জমির মালিকরা শিম, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছে। এই খালটি খননের মাধ্যমে পাল্টে গেছে পুরো গ্রামের চিত্র।