মাশরুম চাষে সফল সবজি ব্যবসায়ী

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁয় মাশরুম চাষ করে সফল হয়েছেন সবজি ব্যবসায়ী সাগর আলী। তিনি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়নের বেনীফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা। প্রথমবার মাশরুম চাষে মোটামুটি লাভ করেছিলেন। তবে এবার বড়পরিসরে বাণিজ্যিক আকারে চাষ শুরু করেছেন। মোটা অঙ্কের মুনাফা আশা করছেন তিনি। এক বছর থেকে তিনি মাশরুম চাষ করছেন। তবে মাশরুম চাষে এমন সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ পেলে সারা বছরই চাষ করা সম্ভব বলে মনে করেন মাশরুম চাষিরা। এতে করে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব। গত প্রায় ১২ বছর থেকে শহরের উপজেলা পরিষদের সামনের বাজারে ছোট্ট দোকান দিয়ে সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সাগর। পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণিপর্যন্ত। বৈশিক মহামারিতে দোকান ঠিকমতো না চলায় ইউটিউবে মাশরুম চাষের ওপর ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হোন। এরপর মাসরুম চাষে মাগুরা জেলার সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামে ডিএম সেন্টার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চারদিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আবাদের জন্য নেই কোন কৃষি জমি। সেখান থেকে বীজ (স্পন) সংগ্রহ করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে বাড়ির উঠানে আবাদ করে প্রথমবার চার মাসে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই আগ্রহ থেকে সবজি ব্যবসার পাশাপাশি সেখান থেকে আবারও মাস্টার মাদার বীজ (স্পন) সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির পাশে সামান্য জমিতে খামার করে মাশরুম চাষ করছেন তিনি। এবার ৩০০ স্পনের প্যাকেট ও খামার তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। বাড়ির পাশেই ছোট্ট খামার করেছেন। যেখানে ৮ হাজার টাকার বীজ ও উপকরণ এবং প্রায় ১২ হাজার টাকার ছাউনিসহ ঘরের অবকাঠামো। নতুন এ খামারের বয়স এক মাস। বীজ রোপণের ৪০ দিনের মধ্যে মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এ সময়ের মধ্যে প্রতিদিন কয়েকবার পানি স্প্রে করতে হয়। গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ৫-৮ কেজি মাশরুম সংগ্রহ হচ্ছে। দিন যত যাবে মাশরুমের উৎপাদন তত বেশি হবে। মাশরুম পরিচর্চায় সহযোগিতা করছে তার বড়মেয়ে সুরাইয়া আক্তার। প্রতিদিনই সাগরের মাশরুমের খামারে আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখতে আসছেন অনেকেই। কেউ মাশরুম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আবার কেউ পরামর্শ গ্রহণ করছেন। মাশরুম খামারি সাগর আলী বলেন, প্রথমবার মাশরুম চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৯০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছিল। সে সময় তেমন বুঝে উঠতে পারিনি। তবে লাভ মোটামুটি ভালো হয়েছিল। সেই আগ্রহ থেকে আবারও মাশরুম চাষ করেছি। এবার খাবারে ৩০০টি প্যাকেটে শুরু করা হয়েছে। ৫ কেজি ওজনের প্রতিটি প্যাকেটের বীজ, খড়কুটা ও কীটনাশকে খরচ পড়েছে প্রায় ৪০-৪৫ টাকা। ৩ মাসে প্রতিটি প্যাকেট থেকে মাশরুম সংগ্রহ হবে প্রায় চার থেকে সাড়ে ৪ কেজি। যা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা এবং খুচরা ৩০০ টাকা। ২৫০ টাকা হিসেবে ৩০০টি প্যাকেট থেকে আগামী ৩ মাসে প্রায় ১২০০ কেজি মাশরুম সংগ্রহ হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রায় ৯ হাজার টাকার বিক্রি করা হয়েছে। সবজির দোকান থেকে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ফোনে অর্ডার করে। উৎপাদন যত বেশি হবে বিক্রিও তত বাড়বে। মাশরুম চাষ নিয়ে সাগর আলী আরো বলেন, প্যাকেট প্রস্তুত করার সময় বীজ দিয়ে মুখ বেঁধে রেখে সুচ দিয়ে কয়েকটা ছিদ্র করতে হয়। প্যাকেটের মধ্যে ছত্রাক যেন আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য ছত্রাকনাশক দিতে হয়। এরপর ২০ দিন পর প্রতিটি প্যাকেটে ৬-৭ টি স্থানে প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ছিদ্র/প্যাকেটে গায়ে কেটে দিতে হবে যেন মাশরুমে গাছটি বেরিয়ে আসতে পারে। আর ২০ দিন পর থেকেই প্যাকেটের গায়ে পানি স্প্রে করতে হয় যেন মাশরুমের গাছ তাজা থাকে। এক মাস পর থেকেই মাশরুম বিক্রির উপযোগী হয়। নিজেই এখন মাশরুমে বীজ (স্পন) তৈরি করছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত মাশরুম দেখতে আসছে। অনেকেই পরামর্শ নিচ্ছে। মাশরুমের ওপর প্রশিক্ষণ দিবেন বলেও জানান তিনি। নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা নাজনীন বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার। মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। স্বল্প খরচে স্বল্প জায়গায় চাষ করা যায়। মাশরুম চাষ লাভজন। ইতোমধ্যে সাগরের মাশরুমের খামার পরিদর্শন করা হয়েছে। মাশরুম চাষ বিষয়ে কোনো বরাদ্দ নাই। তবে যদি কেউ মাশরুম চাষে আগ্রহী হয় তাকে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।