ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগ

চা বাগানে শিশু ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ

চা বাগানে শিশু ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ

হবিগঞ্জ জেলায় মা-বাবাদের সচেতনতার অভাব আর সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করতে না পারায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছিল না চা শ্রমিকদের সন্তানরা। যে কারণে অন্যান্য বছর জেলার ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি চা শ্রমিক সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। আবার বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং ঝরে পড়ার হারও ছিল অনেক বেশি। এখানে চা শ্রমিক শিশুদের স্কুলমুখী করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। যার ফলে চলতি বছর শিশু ভর্তির হার দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ।

জানা যায়, জেলায় ফাঁড়ি নিয়ে ৪১টি চা বাগান রয়েছে। এসব চা বাগানের শিশুরা নানা কারণে বছরের পর বছর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। সব চা বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বাগান কর্তৃপক্ষের দেয়া বিদ্যালয়গুলোতেও ছিল নানান সমস্যা। সেই সাথে চা শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে অসচেতন হওয়ায় অধিকাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হত না।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যে জানা যায়, জেলায় চা বাগানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ৪টিতে। বাকিগুলোতে বাগান কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এনজিও পরিচালিত কেন্দ্র হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয় চা শ্রমিক সন্তানদের। গত বছর জেলায় ৪২ শতাংশ চা শ্রমিক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বাকি ৫৮ শতাংশ শিশু নানা কারণে ভর্তি হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে চা শ্রমিক শিশুদের স্কুলমুখী করতে কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন শুধু জন্মনিবন্ধন না থাকার কারণে অনেক চা শ্রমিক শিশু স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। টাকার অভাব ও ভোগান্তির কারণে চা শ্রমিকরা নিজেদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করতে আগ্রহী ছিলেন না। এছাড়া একটি চা শ্রমিক পরিবারে একাধিক শিশু রয়েছে, একজন শিশুকে দেখে রাখার জন্য আরেকজন শিশুকে বাড়িতে থাকা লাগে সারাদিন। সে কারণ পরিবারের বড় সন্তানরা শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে মাত্র ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদে না গিয়ে চা বাগানের ভেতরেই কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক। শিশুদের স্কুলে পাঠাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা-বাবাকে উদ্বুদ্ধ করেন জেলা প্রশাসন থেকে গঠিত টিম। এছাড়া চা শ্রমিক শিশুদের মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ বাড়ানোর কারণে চলতি বছর ৯৮ শতাংশ শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে।

চা শ্রমিক সন্তানদের শতভাগ ভর্তি নিশ্চিতকরণ কর্মসূচি উপলক্ষ্যে সম্প্রতি সুরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় চা বাগানের ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা বলেন, প্রথমে আমরা চা বাগানের অভর্তিকৃত শিশুদের একটি তালিকা তৈরি করি। এসময় দেখা গেছে শুধু চা বাগানেই ৩ হাজারের বেশি শিশু স্কুলে ভর্তি হয়নি। এর একটি বড় কারণ শিশুদের জন্ম নিবন্ধন ছিল না। পরে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুইটি ক্যাম্পেইন হয়। সেখানে একই সাথে অনেকটা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন করার পর একই সাথে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা হয়। যে কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ শিশু ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ২ শতাংশ শিশুকেও স্কুলে ভর্তির জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা বাবাকে উদ্বুদ্ধ করছি।

জেলা প্রশাসক বলেন, গতবছর মাত্র ৪২ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকার কারণে অনেক শিশু স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। এছাড়াও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আমরা সেগুলো চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিনামূল্যে প্রতিটি বাগানে গিয়ে বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন করার ব্যবস্থা করি। যার ফলে এ বছর এখন পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ শিশুকে আমরা স্কুলে ভর্তি করতে পেরেছি। জুনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শতভাগ শিশুর ভর্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার জন্য উপবৃত্তি ও বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তাদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার ও কালচারাল সেন্টারের ব্যবস্থা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত