কুড়িগ্রামে শিল্প বাণিজ্য মেলা

র‍্যাফেল ড্র’র নামে চলছে জুয়া

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মাহফুজ খন্দকার, কুড়িগ্রাম

স্থানীয় শিল্পসামগ্রীর বিকাশে মেলার অনুমোদন দেয়া হলেও কুড়িগ্রামে শিল্প বাণিজ্য মেলায় চলছে র‍্যাফেল ড্রর নামে রমরমা জুয়া বাণিজ্য। মেলা থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লটারিসহ মেলার ভেতর টিকিট কাটার (জাদু, সার্কাস) নানা আইটেম থাকলেও সরকারি কোষাগারে একটাকাও রাজস্ব জমা হচ্ছে না। তবে লুটের টাকার ভাগ যাচ্ছে শ্রেণি বিশেষের পকেটে। কুড়িগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ধরলা ব্রিজের পূর্বমাথায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত এই মেলা পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। পরে তারা মাসিক ১৫ লাখ টাকার চুক্তিতে প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে মেলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। মেলা অনুমোদনের ৩০টি শর্তাবলীর মধ্যে অধিকাংশ শর্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটি মেলা থেকে কোটি টাকা লুটে নেয়ার ফন্দি এটেছে। ১৪নং শর্ত ভঙ্গ করে মেলায় প্রবেশের টিকিটের উপর লটারি করা হচ্ছে। মেলায় উল্লেখযোগ্য শর্তাবলী ভঙ্গ করে রহস্যজনক কারণে মেলা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। ৯নং শর্ত ভঙ্গ করে অনুমোদন ছাড়াই চলছে সার্কাস। ১৫নং শর্ত ভঙ্গ করে মেলা সংলগ্ন প্রধান সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। ১৬নং শর্ত ভঙ্গ করে প্রধান সড়কের দুইদিকে মোটরসাইকেলসহ যানবাহন রেখে জনদুর্ভোগ বাড়ানো হয়েছে। ২৭নং শর্ত ভঙ্গ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালন হয়নি। ২৮নং শর্তে প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যে মেলা শেষ করার কথা থাকলেও মেলা চলছে মধ্য রাত অব্দি।

ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, মেলা পরিচালনাকারী রংপুরের প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব খেলা ১২টি। সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা প্রতিদিনের আয়। এ হিসেবে মাসিক আয় ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ থেকে স্টাবলিশমেন্ট খরচ ২০ লাখ, মেলা পরিচালনায় প্রতিদিনের ৩৫ হাজার টাকা খরচ হবে মাত্র ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে পাবে ১৫ লাখ, বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ দেয়াসহ মেলা পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের খরচ মাত্র ৫০ লাখ টাকা। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে একমাসের মেলা থেকে তার আয় হবে প্রায় সোয়া কোটি টাকারও বেশি।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সামিউল হক নান্টু বলেন, মেলার র‍্যাফেল ড্র থেকে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হবে। অন্যথায় এটি বন্ধ করে দেয়া উচিত। চেম্বার্স অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, মেলার সব শর্ত পুরোপুরি মানা সম্ভব না। টিকিটের জন্য সরকারকে আলাদা রাজস্ব দিতে হয় না। প্রবেশমূল্য দিয়ে লটারি হচ্ছে তাতে সমস্যা দেখি না। প্রতিদিন ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে সরকারি খাতে জমা দেয়া হয়। এরপরও জনগণ সমস্যা মনে করলে মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুর আরীফ জানান, নীতিমালা অনুযায়ী শিল্প বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে জনসাধারণের বা সরকারের কোনো ক্ষতি না হয় বা ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।