ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে কপোতাক্ষ নদ

৫২ বছর ধরে রশি টেনে খেয়া পারাপার

৫২ বছর ধরে রশি টেনে খেয়া পারাপার

যশোরের কেশবপুরে কপোতাক্ষ নদে ৫২ বছর ধরে দড়া (রশি) টেনে নৌকায় খেঁয়া পারাপারের কাজ করে আসছেন জগদীস দাস। এ কাজ তাদের তিন পুরুষের। কপোতাক্ষ নদের চিংড়া-সারসা ঘাটে সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত দড়া টেনে এলাকাবাসীকে নদ পারাপারে তাকে সহযোগিতা করতে হচ্ছে।

কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া-সারসা খেয়া ঘাটে ১২ বছর বয়স থেকে ৫২ বছর এভাবেই কপোতাক্ষ নদে দড়া টেনে নৌকায় খেঁয়া পারাপার করেন জগদীস দাস। বাবা হাজারী লাল দাসের হাত ধরেই তিনি দড়া টানা শেখেন। এতে তার প্রতিদিন আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্টের মধ্যে সংসার চালাতে হয় তার। কপোতাক্ষ নদের পাড়ে সারসা গ্রামে তার বসবাস।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করছেন। তিন পুরুষের বৃদ্ধ জগদীস দাস বলেন, প্রায় ৫২ বছর দড়া টেনে নদে খেঁয়া পারাপারে এলাকাবাসীকে সহযোগিতা করলেও এখন আর সংসার চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদে এখন তেমন স্রোত নেই। তীব্র স্রোত বহমান সময়ে বাবা হাজারী লাল দাসের হাত ধরেই দড়া টেনে খেঁয়া পারাপার করতে শেখেন। তখন যা আয় হতো তাতে সংসার চলেও কিছু সাশ্রয় করা যেত। এখন স্রোত নেই। খেয়া পারাপারে মানুষের যাতায়াতও কমে গেছে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দড়া টেনে খেঁয়াপারের কাজ করেও ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি আয় হয় না। সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে নিত্যানন্দ দাস ও ছোট মেয়ে পূজা দাসকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য তাকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। এ কাজ করে তিনি ২টি মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। তার ছেলে নিত্যানন্দ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছোট মেয়ে পূজা সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী। জগদীস দাসের দাবি প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হলে খেয়া পারাপারের কাজ করা সম্ভব হবে। আর তা না হলে হয়তো তাকে এ কাজ ছেড়ে দিতে হবে। ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি কমাতে নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি দড়া (রশি) টানিয়ে এলাকার মানুষদের নৌকায় খেয়া পারাপার চলে। ওই পরিবারের সন্তান নিত্যানন্দ দাস বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় ১০০ বছর ধরে এ কাজ করছেন। এখন তারা এ কাজ করতে চান না। তাই কপোতাক্ষ নদের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হোক সেটাই তার দাবি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা এলাকার মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত